জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: তিস্তা নদীতে অবৈধভাবে বোমা মেশিন বসিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। উত্তোলিত বালু দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে আবাদি জমির ওপর নতুন রাস্তা। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন, ভয়াবহ ভাঙন এবং শত শত একর জমি অনাবাদি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের মুন্সির বাজার এলাকার শত শত কৃষক পরিবার।
স্থানীয়রা জানান, সরকারি রাস্তা ও ব্রিজ ব্যবহার করে বালু পরিবহনে বাধা দিলে চক্রটি নতুন করে আবাদি জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ শুরু করে। রাস্তা নির্মাণের নামে বলা হচ্ছে, এটি ‘স্বেচ্ছাশ্রমে গড়া জনপথ’। বাস্তবে এটি অবৈধ বালু পরিবহনের জন্যই তৈরি করা হচ্ছে।
গুচ্ছগ্রাম বিলীন, রাস্তায় নতুন ষড়যন্ত্র
নব্বইয়ের দশকে মুন্সির বাজার এলাকাটি তিস্তার গ্রাসে বিলীন হলেও পরবর্তীতে তা চরাঞ্চলে পরিণত হয়। স্থানীয়রা সেখানে চাষাবাদ ও বসতি গড়ে তোলে। ১০ বছর আগে সরকার ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিন্নমূলদের জন্য একটি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করে, যার জন্য আবাদি জমির উপর একটি রাস্তা এবং ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজও নির্মাণ করা হয়। বছর বছর সে রাস্তায় সংস্কারেও খরচ হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
কিন্তু গুচ্ছগ্রামটি পুনরায় নদীগর্ভে বিলীন হলেও রাস্তাটি এখনও স্থানীয়দের চলাচলের একমাত্র ভরসা। বর্তমানে বালু বহনের ট্রাক চলাচলে সেই রাস্তাটি ভেঙে পড়ছে। বর্ষাকালে চলাচল সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর বাধা ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বালু চক্র ওই রাস্তার পাশ দিয়ে আবার নতুন রাস্তা নির্মাণ করছে, তাও আবার আবাদি জমির উপর দিয়ে।
ফ্যাসিবাদী প্রভাব ও প্রশাসনের ভূমিকা
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এক সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় চক্রটি কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন ও বিক্রি করেছে। সরকারের পরিবর্তন হলেও বন্ধ হয়নি তাদের অপকর্ম। প্রশাসনকে পাশে না পেয়ে স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ করেও সাড়া পাচ্ছেন না।
৭০ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ রানা বলেন, “সরকার আমাদের জন্য যে রাস্তা ও ব্রিজ করে দিয়েছে, সেটি তো এখনও সক্রিয়। এখন আবার সেই রাস্তার সামনেই নতুন রাস্তা করা হচ্ছে আমাদের আবাদি জমির উপর দিয়ে। এতে ব্রিজটি অকেজো হয়ে যাবে এবং পানি নিষ্কাশন না থাকায় জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পড়বে।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, “বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। খবর পেলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে গেলেই বালু চক্র ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আবাদি জমির ওপর নতুন রাস্তা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, দ্রুত তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”