আমাদের শরীরের ভেতরে নিরলসভাবে কাজ করে চলা দুটি অঙ্গ হলো কিডনি। প্রতিদিন এগুলো শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ও টক্সিন ছেঁকে শরীরকে সুস্থ রাখে। কিন্তু যখন কিডনি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন শরীরে জমতে শুরু করে ক্ষতিকর উপাদান। এ অবস্থায় দেখা দেয় দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা সিকেডি)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগকে বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো উপসর্গই বোঝা যায় না।
প্রথমে তেমন কোনো উপসর্গ না থাকলেও রোগ অগ্রসর হলে দেখা দিতে পারে—
ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন
ক্লান্তি ও দুর্বলতা
ক্ষুধামন্দা
হাত-পা ও চোখে ফোলা
প্রস্রাব ফেনাযুক্ত বা বুদবুদ হওয়া
চুলকানি ও শুষ্ক ত্বক
মনোযোগে সমস্যা, ঘুমে ব্যাঘাত
বমি ভাব, পেশি টান
রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের সবচেয়ে বড় দুটি কারণ হলো—
ডায়াবেটিস
উচ্চ রক্তচাপ
এছাড়া আরও কিছু কারণ হলো—
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস
পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ (জেনেটিক সমস্যা)
প্রস্রাবের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া (পাথর, প্রস্টেট বা টিউমার)
দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন
পুনরাবৃত্ত কিডনি সংক্রমণ
কিডনি রোগ বাড়তে থাকলে হতে পারে—
অ্যানিমিয়া
হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া
গাউট, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ
স্ট্রোকের ঝুঁকি
স্নায়ুর ক্ষতি
শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম বা ফসফরাস জমা
শরীরে পানি জমে শ্বাসকষ্ট
কিডনি রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিলে কিডনিকে সক্রিয় রাখা সম্ভব। যেমন—
নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
কিডনি-বান্ধব খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ
ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার
নিয়মিত ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ
সুষম খাদ্য গ্রহণ
ধূমপান-মদ্যপান বর্জন
ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
অকারণে ব্যথানাশক ওষুধ না খাওয়া
? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ একবার শুরু হলে তা আজীবন চলতে থাকে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই—সঠিক সময়ে চিকিৎসা, নিয়মিত পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে কিডনির কার্যক্ষমতা অনেকদিন ধরে রাখা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, কিডনি রোগ যতটা ভয়াবহ, ততটাই প্রতিরোধযোগ্য। সূত্র: ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক