বিশ্বজিৎ দত্ত: [২] আবার বিতর্কের মুখে নেসলে সংস্থার পণ্য। এ বার শিশুদের খাবার সেরেল্যাক। একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ভারতে যে সেরেল্যাক বিক্রি হয়, তাতে অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি রয়েছে।

[২.১] এ বিষয়ে নেসলে বাংলাদেশের কর্পোরেট অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বাংলাদেশে তারা সেরেলাকের ৫টি ভ্যারিয়ান্ট বাজারজাত করে। এগুলোতে চিনি রয়েছে। চিনির পরিমান ৩.৭৫ শতাংশ। এটি বিএসটিআই অনুমোদিত। ব্রিটেন, সুইৎজারল্যান্ড, জার্মানিতে সেরেল্যাকে কোনও চিনি থাকে না। ব্রিটেন, সুইৎজারল্যান্ড, জার্মানিতে সেরেল্যাকে কোনও চিনি থাকে না।

[২.২] এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া জানান, আমরা রিপোর্টটি দেখেছি। কিছু দেশে তারা সেরেলাকে চিনি দিচ্ছে না। কিন্তু আমাদের দেশের খাদ্যে দিচ্ছে। এটি শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা তা পরীক্ষা করে আমরা অবশ্যই তাদের এই পণ্যের বিষয়ে তাদের মতামত চাইবো। 

[৩] অভিযোগ, ভারতে নেসলে সংস্থার তৈরি শিশুদের খাবার সেরেল্যাকে অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি থাকে। যেখানে ব্রিটেন, সুইৎজারল্যান্ড, জার্মানিতে সেরেল্যাকে কোনও চিনি থাকে না। এই দাবি করেছে ‘পাবলিক আই’-এর একটি রিপোর্ট।

[৪] রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ওবেসিটি-সহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের জন্য শিশুদের খাবার নিয়ে যে আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা রয়েছে, তা মেনে ভারতের জন্য সেরেল্যাক তৈরি করেনি নেসলে। শুধুমাত্র এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতেই অতিরিক্ত চিনি মেশানো শিশুখাদ্য বিক্রি করে নেসলে।

[৫] নেসলে সংস্থার এক মুখপাত্র একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে শিশুদের সিরিয়ালে চিনির পরিমাণ ৩০ শতাংশ কমানো হয়েছে। সে সব খাবারে চিনির পরিমাণ নিয়ে ক্রমাগত ‘পর্যালোচনা’ করা হচ্ছে।

[৬] ‘পাবলিক আই’-এর সমীক্ষা বলছে, ইথিওপিয়া এবং তাইল্যান্ডে ওই একই পরিমাণ সেরেল্যাকে ছ’গ্রাম চিনি থাকে। রিপোর্টে আরও দাবি, নেসলে সংস্থা তাদের পণ্যে ভিটামিন, মিনারেল, অন্য উপাদানের কথা প্রকাশ করলেও অতিরিক্ত চিনির কথা জানায়নি।

[৭] ২০২২ সালে নেসলে সংস্থা ভারতে ২০ হাজার কোটি টাকার সেরেল্যাক বিক্রি করেছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, শিশুদের খাদ্যে অতিরিক্ত চিনি নেশার মতো কাজ করতে পারে, যা ক্ষতিকর। তা ছাড়া শিশুদের শরীরে এর কোনও প্রয়োজনও নেই। বড় হলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

[৮] ২০২১ সালে বিতর্কের মুখে পড়ে নেসলে সংস্থা। অভিযোগ, সংস্থার তৈরি খাদ্য, পানীয়ের মান ভাল নয়। নিয়ামক সংস্থার মাপকাঠিতে পাশ করেনি সেগুলি। সংস্থা মেনে নেয় যে, তাদের ৬০ শতাংশ শিশুখাদ্য, নরম পানীয়, কফি, পোষ্যের খাদ্য ‘স্বাস্থ্যকর’ নয়।

[৯] ২০১৫ সালে নেসলে সংস্থার তৈরি অন্যতম জনপ্রিয় খাদ্যপণ্য ‘ম্যাগি’ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে, ম্যাগির মশলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লেড এবং মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি)। ৩৮ হাজার টন ম্যাগি বাজার থেকে বাজেয়াপ্ত করে নষ্ট করা হয়। নেসলে সংস্থার শেয়ারের দর পড়ে যায়। বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ে তারা।

[১০] ১৯৭৭ সালে আমেরিকায় বিতর্কের মুখে পড়েছিল নেসলে সংস্থা। অভিযোগ উঠেছিল, নিজেদের তৈরি ফর্মুলা দুধ বিক্রির জন্য স্তন্যপান করাতে মায়েদের নিরুৎসাহ করেছে। এই কারণে আমেরিকার পর ইউরোপেও বয়কট করা হয় নেসলের পণ্য। [১১]১৯৮৪ সালে নেসলে জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-র জারি করা নীতি মেনে পণ্য বিক্রি করবে তারা। তার পরেই উঠে যায় বয়কট।

[১১] আইভরি কোস্টে নেসলের কোকো প্রস্তুতকারী সংস্থায় শিশু শ্রমিকদের নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে একটি সংগঠন। ২০২১ সালে সেই নিয়ে হইচই শুরু হয়। ২০২২ সালে প্রমাণের অভাবে মামলাটি খারিজ করে আমেরিকার ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট।

[১২] পাকিস্তানে অভিযোগ উঠেছ, এই সংস্থা নিজেদের পণ্য উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করেছে। এর ফলে ভূগর্ভস্থ জলের মাত্রা নেমে গিয়েছে। ফরেন্সিক অডিট করে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, সংস্থা জল অপচয় করেছে। তার পরেই পাকিস্তানে নেসলে সংস্থার জল ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিডি/একে