মহসিন কবির: বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চান। গত কয়েক মাস থেকেই এ দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। ন্কি সরকার তাদের জায়গায়ই রয়েছে। এবার বলেছেন জুন মাসের একদিনের বেশি থাকবেন না। কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলছেন না।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, ‘স্থিতিশীলতা ও নির্বাচন প্রশ্নে বলতে হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের ইতোমধ্যে ৯ মাস চলে গেছে। এখন নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট ডেট দেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে। সেটা ডিসেম্বর হোক বা জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ౼যেটাই হোক। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট ডেট ঘোষণার সময় এসে গেছে।’
মঙ্গলবার (২৭ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সিপিডির তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন । রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে বিনিয়োগ হবে না বলে মন্তব্য করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান, প্রবৃদ্ধি হবে না।
ফরমাল ও ইনফরমাল খাতে বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুযোগও সংকুচিত হবে। এতে দারিদ্র্য বাড়বে, বৈষম্য বাড়বে। এটা দুষ্টচক্রের মতো কাজ করবে। অর্থনীতির প্লেয়াররা বা ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা অস্থিতিশীলতা পছন্দ করেন না।
এদিকে নির্বাচন ও গণঅভ্যুত্থানের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে রোড ম্যাপ উপস্থাপন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শনিবার (২৪ মে) দুপুর ১২টায় জাতীয় নাগরিক পার্টির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা উচিত। বিচার সংস্কার এবং নির্বাচনি রোড ম্যাপ একত্রে ঘোষণা করা দরকার। সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটা সুষ্ঠু সমাধানে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীলভাবে আলোচনা করতে হবে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কথা ভেবে আমাদেরকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
ড ইউনূসের ‘পদত্যাগ’ ইস্যুতে প্রশ্ন করা হলে নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশে যে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে এনবিআরের সামনে, যমুনার সামনে, আদালতে-এসব পরিপ্রেক্ষিতে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস ভাবছেন যে, যদি ওনাকে জিম্মি করা হয় বা উনাকে চাপ প্রয়োগ করে কোনো দাবি যদি আদায় করা হয় সেটি আসলে সম্ভব না। কারণ তিনি সেটাতে সম্মতি প্রকাশ করবেন না।
রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় হতাশ হয়েছে বিএনপি।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এতে বলা হয়, গত ২৪ মে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে বিএনপি’র একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করেন। একই দিনে আরও দুইটি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তৎপরবর্তীতে আমরা আপনাদের সামনে আমাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছি। পরের দিন আরও ১৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন। রাজনৈতিক দল সমূহের সাথে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আলোচনার প্রসঙ্গে তার প্রেস সচিবের মাধ্যমে সরকারের যে বক্তব্য পাওয়া গিয়েছে তাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় আমরা হতাশ হয়েছি।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)–এর সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেছেন, ‘সবার মধ্যেই অনিশ্চয়তা রয়েছে। এটা ইমিডিয়েট সমাধানের দিকে যাবে সেটাও কেউ ফিল করছে না, কেউ তার সমাধান দেখতে পাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার যত শর্ট হোক, যত উইক হোক, আমি মনে করি তাদের উচিত হবে দ্রুত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যাওয়া।’
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, দুই–চারজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যারা ব্যাংক লুট করেছে, তাদের দায় সবার ওপর চাপানো হলে সেটি অবিচার হবে। সরকার অর্থনীতি, ব্যবসা–বাণিজ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু অন্যান্য ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত বলেও তারা অভিযোগ করেন।