নিজস্ব প্রতিবেদক : জরুরি ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা চালু রেখে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি চলমান কর্মবিরতি বৃহস্পতিবারও (২৯ মে) বহাল থাকছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) চেয়ারম্যান অপসারণ না হলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমূহের অভিযোগ কেন্দ্রের মোবাইলসমূহ সমিতির সদর দপ্তরে জমার আল্টিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বুধবার (২৮ মে) ৭ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) মধ্যে বিদ্যমান সংকট নিরসনের জন্য গত ২১ মে থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে ২৮ মে কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ঈদের আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে চলমান আন্দোলন এবং সংগঠনটি বিধিবদ্ধ কোনো সংগঠন নয় বলে উল্লেখ করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের ওই পদক্ষেপের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক কোনরূপ আলোচনা না করে একপাক্ষিকভাবে মনগড়া ও মিথ্যা তথ্য সম্বলিত প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে সংকট সমাধানে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বরং সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অধিকার আদায়ে হাজার হাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জনবলকে অস্থিতিশীল সৃষ্টিকারী বলে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ সেবা চালু রেখে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা অথবা বল প্রয়োগ করে দমন পীড়ন কিংবা পূর্বের ন্যায় মিথ্যা মামলার মাধ্যমে হয়রানির অপচেষ্টা করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে সমিতির ৪৫ হাজার কর্মী শহীদ মিনার অভিমুখে লং মার্চ কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হবে।
আমরা কোনোরূপ জনদুর্ভোগ কিংবা সেবা বিঘ্নিত করে কোন কর্মসূচি করতে চাই না। আমরা রাস্তা ব্লক করে, সেবা বন্ধ করে কিংবা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে কোনো কর্মসূচি করিনি। নিজেরা মানবেতর জীবন যাপন করে, রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে শহীদ মিনারে অবস্থান করে নিজেদের যৌক্তিক দাবি জানানোর চেষ্টা করছি। বিদ্যমান সংকট নিরসনের লক্ষ্যে আমাদের ৭ দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য আবারো প্রধান উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমের সংস্কারে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে ইতোমধ্যে সংহতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, এনসিপি শ্রমিক উইংস, এনসিপি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী উইংস, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জুলাই ঐক্য (ঢাবি), নাগরিক ঐক্য, নাগরিক ছাত্র ঐক্য, সার্বভৌমত্ব আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, আইডিইবি, এফডিইবি, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম ফোরাম (অবঃ) সহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ও সুধীজন।
৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় দেশের প্রায় ৮০শতাংশ গ্রাহক রয়েছে। সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দ্বৈতশাসন ও ৪৭ বছর ধরে চলমান শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সব চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণ ও শাস্তিমূলক বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।
গত ১৭ অক্টোবর দেশের ৬৭টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। পরে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন নেতৃবৃন্দ। তখন নেতৃবৃন্দ বলেছিলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ শাটডাউন করার বিষয়টি পরিকল্পিত ছিল না। সকালে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাকে আটক করলে ক্ষুব্ধ অফিসাররা স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। এরপর মামলা ও ২০ জন কর্মকর্তাকে অব্যাহতির খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয়ভাবে সমিতির কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এরপর কিছুদিন আন্দোলন বন্ধ থাকলেও ফের আন্দোলনে নেমেছে সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।