চোখের সামনে তিন বন্ধুকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। আর নিজের বেঁচে থাকাকে অলৌকিক মনে করছেন। আগুনের উত্তাপে নিজেও আক্রান্ত হয়েছেন। তার একটি কানের কিছু অংশ ঝলসে গেছে। তারপরও বন্ধুদের হারানোকে মানতে পারছেন না। এমন প্রতিক্রিয়া জানালেন বিমান বিধ্বস্ত হওয়া মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রাহিম তাসকিন আহমেদ। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছেন।
বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে নিজের অসুস্থতা নিয়েও ছুটে আসেন প্রিয় ক্যাম্পাসে। তিনি জানান, সেদিন আগুনের লেলিহান শিখা থেকে কীভাবে নিজেকে উদ্ধার করেছেন—তা নিজেও কল্পনা করতে পারছেন না। কারণ, যখন ক্লাস চলছিল—তখন তিনি একই ভবনের দোতলায় ক্লাস করছিলেন। এ সময় হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে তার তিন বন্ধু আগুনে পড়ে যান। তারা ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার সেই হতভাগ্য বন্ধুরা হলেন—সায়েন ইউসুফ, আফনান ফাইয়াজ ও তানভীর। তার অন্য দুই বন্ধু এরিকসন ও মাকিন মারাত্মক ক্ষত নিয়ে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদেরও বাঁচার সম্ভাবনা কম বলে তিনি জানান।
তাসকিন বলেন, আমার সহপাঠী না হলেও এক ক্লাস সিনিয়র তানভীরের সঙ্গে আমার গভীর সখ্য ছিল। কারণ, আমি সপ্তম শ্রেণির ক্লাস ক্যাপ্টেন ও তানভীর ছিল অষ্টম শ্রেণির ক্যাপ্টেন। তাই স্কুলের পিটিসহ নানা কাজে আমাদের একসঙ্গে অনেক সময় কেটেছে। ঘটনার দিনেও সকালে একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছি। কিন্তু দুপুরে এসে তাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলবো—এটা ভাবতেই বিষণ্নতা চলে আসে। সত্যি বলতে তানভীর ছিল আমার পরম আত্মার।
তিনি বলেন, আমার অপর দুই সহপাঠী সায়েন ইউসুফ ও আফনান ফাইয়াজও খুব কাছের বন্ধু ছিল। সেদিন সকালে ক্যাম্পাসের পাশের দোকানে তারাসহ আমরা কয়েক জন একসঙ্গে শিঙাড়া-সমুচা খেয়েছি। ক্রিকেট নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। চোখের সামনে তাদের অঙ্গার হয়ে যাওয়ার দৃশ্য মানতে পারছি না। যাদের সঙ্গে তারুণ্যের বেশিরভাগ সময় কাটলো, এত তাড়াতাড়ি তাদের হারিয়ে ফেলাটা আমাকে জনম জনম ভোগাবে।
তাসকিন আরও জানান, তার অপর দুই বন্ধু মাকিন ও মাহতাবের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। তারপরও চিকিৎসকরা চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে তাদের বন্ধুমহলও উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, হয়তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় বেঁচে আছি। কিন্তু প্রিয় বন্ধুদের হারানোর ক্ষত কখনও পূরণ হবার নয়। উৎস: বাংলাট্রিবিউন।