জিয়াবুল হক, টেকনাফ: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেলে পল্লী গুলোতে এখন শুটঁকি তৈরির ধুম পড়েছে। ফলে টেকনাফ উপজেলার শুটঁকিগুলো দেশের বিভিন্ন জেলার চেয়ে অনেক গুণ সুস্বাদু হওয়ায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি বিদেশেও এ শুঁটকির রপ্তানি হচ্ছে। টেকনাফ উপজেলার নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরের চর এবং বিভিন্ন জেলে পল্লী গুলোতে জেলেরা শুটঁকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। শীত মৌসুমই শুটঁকি শুকানোর উপযুক্ত সময়। তাই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা টেকনাফের শুটঁকি পল্লীগুলোতে এসে শুটঁকির জন্য জেলেদের অগ্রীম টাকাও দিয়ে যাচ্ছেন। এতে জেলে পরিবারের লোকজন খুশি হয়ে শুটঁকি শুকানোর কাজের আগ্রহ বেড়েছে বলে জানা গেছে।
সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপের শুটঁকি ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় শুটঁকি রপ্তানি করে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও শুটঁকি তৈরির কাজে জেলেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে না। কোনো প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা বা ব্যাংক ঋণ সুবিধা না পাওয়ায় তাদের ধর্না দিতে হয় চট্টগ্রাম শহরের গুদাম মালিকদের কাছে। তাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা এনে এসব শুঁটকি শুকান জেলে পরিবারের লোকজন। এ কারণে স্বল্প মূল্যে শুটঁকি গুদাম মালিকদের হাতে তুলে দিতে হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেকনাফ পৌরসভার, চৌধুরী পাড়া, উত্তর জালিয়াপাড়া, দক্ষিণ জালিয়া পাড়া, নাইট্যংপাড়া, সদর ইউনিয়নের লম্বরী, কেরুনতলী, বরইতলী, ছোট হাবিব পাড়া, কচুবনিয়া পাড়া, মহেষখালীয়া পাড়া, রাজারছড়া, মিঠা পানির ছড়া, সাবরাং ইউনিয়নের আছারবনিয়া পাড়া, ডেইল পাড়া, নয়াপাড়া, আলীর ডেইল, বাহারছড়া, কাটাবনিয়া পাড়া, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাজারপাড়া, মাঝের পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শীলখালী, দক্ষিণ শীলখালী, হাজমপাড়া, নোয়াখালীয়া পাড়া, শামলাপুরসহ সেন্টমার্টিনের বহু জায়গায় পুরোদমে চলছে শুঁটকি তৈরির কাজ। প্রতি বছরই শীত মৌসুম শুরু থেকে রোদে মাছ শুকানোর কাজ শুরু হয়। চলে জুন মাস পর্যন্ত।
শুঁটকি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, রুপচাঁদা, কোরাল, লইট্যা, ছুরি, লাক্ষ্যা, চাপা, ফাঁইস্যা, চিংড়ি, মাইট্যা, সুন্দরী, বাটাসহ ১০০ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়। বর্তমানে টেকনাফ উপজেলায় প্রতি কেজি রুপচাঁদা ১৩শ’ থেকে ২ হাজার টাকা, মাইট্যা ৯০০-১৯০০শ’ টাকা, কোরাল ১৫০০ হাজার থেকে ৩ হাজার, চিংড়ি ৫০০-১২০০ লইট্যা ৪৫০-১০০০, ছুরি ৫৫০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টেকনাফ পৌরসভার দক্ষিণ জালিয়া পাড়া এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. আলম বলেন, প্রতি সপ্তাহে আমাদের শুঁটকি জেলে পল্লী গুলো থেকে গড়ে ১৫০ থেকে ২৫০ মণ শুঁটকি চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জে যায়। সেখান থেকে শুঁটকি দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েত ও পাকিস্তান, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি করা হয়।
শুটঁকি উৎপাদনকারী জেলে সৈয়দ হোসেন, রমজান আলী, সমজিদা বেগম, খাতিজা খাতুন ও আব্দুল আমিন, ফয়সাল জানান, টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেলেদের আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে শুটঁকি থেকে। কিন্তু সাগর থেকে আহরণ করা মাছ আধুনিক পদ্ধতিতে শুঁকানোর কোন ধরনের সু-ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর সাগর উপকূলে লাখ লাখ টাকার মাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জেলেরা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো বেশি শুঁটকি উৎপাদন করা সম্ভব হতো।
চট্টগ্রাম আসাদগঞ্জ থেকে আসা বেশ কয়েকজন পাইকারী শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর মধ্যপ্রাচ্যে’সহ বিভিন্ন দেশে টেকনাফ উপজেলার শুঁটকি মাছ রপ্তানি করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। এমনকি চট্টগ্রাম শহরের আসাদগঞ্জ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও চকবাজারসহ বড় বড় গুদামে হাজার হাজার মন শুঁটকি গুদামজাত করে বর্ষা মৌসুমে এ শুঁটকি দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়।
প্রতিনিধি/এইচএ