শাহীন খন্দকার: দেশীয় অন্যান্য ফলের মতই কদবেল সকলের কাছেই পরিচিত। ফলটি টকযুক্ত হলেও জিবে আনে বেশ স্বাদ। বয়সের মানুষের কাছে জনপ্রিয় কদবেলফল, কদবেলের খাদ্য উপাদানের পুষ্টি গুণ মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। পাকা কদবেলে রয়েছে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি ও সি পাওয়া যায়।
কদবেল গাছ ১২ মিটার থেকে ১৫ মিটার উঁচু হয়। কাঠ শক্ত ও পাতা ঝরাবৃক্ষ। গাছের পাতা কামিনি ফুলের পাতার মতো। গাছের ফল টেনিস বলের মতো গোলআকার। ২ থেকে ৫ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট সাদা ধূসর বর্ণের শক্ত বেলের মতো খসখসে।
কদবেল খোলসের ভিতরের অংশ বেলের মতই তবে টক। এই শাঁস খাওয়া হয়। অক্টোবর নভেম্বর এই ফলের ভরামৌসুম হলেও ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া যায়। কদবেলের খাদ্যগুণ নিয়ে সোহরাওর্য়াদীর স্কিন চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, কদবেলে রয়েছে কাঁঠাল ও পেয়ারার সমান প্রায় পুষ্টিগুন।
এতে আমিষের পরিমাণ রয়েছে আমের চেয়ে সাড়ে ৩ গুণ, কাঁঠালের দ্বিগুণ,লিচুর চেয়ে ৩ গুণ, আমলকী ও আনারসের চেয়ে ৪ গুণ বেশী। রয়েছে রাসায়নিক উপাদান যেমন ফলের শাঁসে থাকে প্রচুর পরিমানে সাইট্রিক এসিড, মিউসিলেজ ও খনিজ পদার্থ। বীজে থাকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, অ্যামাইনো এসিড।মূলে থাকে ফেরোনিয়াল্যাকাটোন, বীরগ্যাপটেন, অমথল মারমেসিন এবং মারমিন প্রভূতি উপাদান।
দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার কাওরান বাজারের কদবেলের হাট। প্রতিদিন এখান থেকে রাজধানীসহ পাশ্ববর্তী জেলা উপজেলায় কদবেল যাচ্ছে বলে ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন। ব্যবসায়িরা বলেন, বাংলাদেশের সর্বত্র কমবেশীচাষ বেশী চাষ হচ্ছে। তবে বিশেষ করে ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদি, নাটোর রাজশাহী, বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ টাঙ্গাইলের কিছু এলাকায়।
পাকা কদবেলের রং হালকা বাদামী। পাকলে বোটার গোড়া থেকে সহজেই আলাদা হয়ে যায় এবং সুগন্ধ ছড়ায়। বৈশাখ-আষাঢ মাস কদবেলের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে অতিরিক্ত বর্ষার চারা রোপণ না করাই ভাল। তবে বর্ষার শেষের দিকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও গাছ লাগানো যায়। বাগান আকারে কদবেলের চাষ করতে চাইলে ৬ মি. ৬ মি. দুরত্বে এক বছর বয়সী চারা-কলম রোপণ করা উচিত।
কদবেল ফল পরিপক্ক হলে এর ত্বক ধুসর মলিন বর্ণ ধারণ করে এবং ফলের বোটা আলগা হয়ে যায়। সামান্য ঝাকুনিতেই ফল ঝরে পড়ে। গাছে ঝাকি দিয়ে ফল সংগ্রহ করা ঠিক না। এতে অনেক ফল বিবর্ণ হয়ে যায় এবং ফেটে নষ্ট হয় বলে ব্যবসায়িরা জানালেন।