বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৮০০ ডলার ছাড়িয়েছে। এই নজিরবিহীন উত্থানের প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের বাজারেও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাজারেও যে কোনো সময় নতুন দামের ঘোষণা আসতে পারে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জুলাই থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। তবে গত এক মাসে সেই বৃদ্ধির গতি আরও বেড়েছে। শুধু আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসেই আউন্সপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ৫০০ ডলার।
এ অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশেও একাধিক দফায় স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। প্রতিবারই নতুন রেকর্ড তৈরি হলেও পরে কিছুটা দাম কমানো হয়েছে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বাজারে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৯ টাকা—যা ছিল সর্বোচ্চ রেকর্ড। তবে ২৮ সেপ্টেম্বর দাম কিছুটা কমিয়ে আনা হয়।
নতুন সমন্বয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) এক ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৯৬৯ টাকা। একইভাবে ২১ ক্যারেটের দাম ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩১ হাজার ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে এ দামেই বাজারে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে।
আবারও বাড়তে পারে দাম
বাজুসের এক সদস্য জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আরও বাড়তে থাকলে বাংলাদেশেও তা সমন্বয় করতে হবে। তার ভাষায়, “স্বর্ণের দামের ওপর দেশের ব্যবসায়ীদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বিশ্ববাজারে যেমন দাম বাড়ে বা কমে, এখানেও তার প্রতিফলন ঘটে।”
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, একাধিক আন্তর্জাতিক কারণ স্বর্ণের দাম বাড়াচ্ছে। আমেরিকার শুল্কনীতি নিয়ে টানাপোড়েন, চীন-রাশিয়া-ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-সংক্রান্ত উত্তেজনা— এসব কারণে ডলারের প্রতি আস্থা কমছে। ফলে চীন ও ভারতসহ অনেক দেশ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণ মজুত করছে।
এছাড়া খনিতে উৎপাদন হ্রাস ও সরবরাহ কমে যাওয়াও দামের ঊর্ধ্বগতির অন্যতম কারণ বলে জানান তিনি।
সব মিলিয়ে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বাংলাদেশের বাজারেও শিগগিরই নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। সূত্র: কালবেলা