ঢালাওভাবে কর্মচারীদের উৎসাহ বোনাস আর দিতে পারবে না রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বোনাসের ভিত্তি হবে নিট মুনাফা। আগে পরিচালন মুনাফার ওপর ভিত্তি করে এ বোনাস দেওয়া হতো। শুধু তা-ই নয়, মুনাফা অর্জনের পর প্রথমে সরকারকে লভ্যাংশ দিতে হবে। লভ্যাংশ না দিলে উৎসাহ বোনাস দেওয়ার যোগ্যতা থাকলেও কোনো ব্যাংক সরকারের কাছে দাবি করতে পারবে না।
মোট ১৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা তৈরি করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ইতিমধ্যে নির্দেশিকার খসড়া তৈরি হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণ ও অগ্রিমের প্রভিশন, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সম্পদের ক্ষতি সমন্বয় করে নিট মুনাফা হিসাব করতে হবে। নির্দেশিকাটি ২০২৪ সালের উৎসাহ বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে। নির্দেশিকার বাইরে বোনাস দিতে হলে বিভাগীয় অনুমোদন নিতে হবে।
এর আগে যদিও একটি নীতিমালা ছিল, তবে তা মানা হয়নি। বড় কয়েকটি ব্যাংক অতিরিক্ত বোনাস দিয়েছে। যেমন, সোনালী ব্যাংক ২০২৩ সালে নির্ধারিত তিনটির বদলে পাঁচটি উৎসাহ বোনাস দেয়। বিষয়টি জানার পর গত মার্চে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ব্যাংকটির এমডিকে অতিরিক্ত বোনাসের টাকা ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছিল। তবে কর্মচারীরা টাকা ফেরত দেননি।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংক—সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল—এবার থেকে পাঁচটি সূচক বা কর্মসম্পাদন পরিমাপক অনুযায়ী বোনাস দেবে। সূচকগুলো হলো চলতি মূলধনের ওপর নিট মুনাফার হার, আমানত বৃদ্ধির হার, ঋণ ও অগ্রিম বৃদ্ধির হার, খেলাপি ঋণ আদায়ের হার এবং অবলোপন করা ঋণ আদায়ের হার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে নিট মুনাফা, যার নম্বর থাকবে ৫০-এর বেশি। কর্মক্ষমতা যত ভালো হবে, তত বেশি বোনাস দেওয়া হবে। তবে নম্বর খুব কম হলে বোনাস দেওয়া যাবে না। প্রতিটি বোনাস মানে এক মাসের মূল বেতনের সমান অর্থ।
বিশেষায়িত ছয় ব্যাংক—বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাকাব, কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক—এ ক্ষেত্রে সামান্য ভিন্ন মানদণ্ড অনুসরণ করবে। তাদের ক্ষেত্রে আমানত বৃদ্ধির সূচক রাখা হয়নি। মোট চারটি সূচকের ভিত্তিতে বোনাস নির্ধারণ হবে।
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর জন্য নতুন সূচক হিসেবে যুক্ত হচ্ছে পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধির হার। অন্যদিকে, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) ক্ষেত্রে আমানত বৃদ্ধি ও অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের বদলে নতুন সূচক রাখা হচ্ছে ঋণের সুদ ও আসলের প্রকৃত পরিশোধের হার।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে এত দিন উৎসাহ বোনাস প্রদানে শৃঙ্খলার ঘাটতি ছিল। এবার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি অভিন্ন নির্দেশিকা তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।’ উৎস: নিউজ২৪