বিদেশে কাজ করা বাংলাদেশিদের জন্য দেশে বিনিয়োগের সুযোগ খুব একটা বেশি নেই। তাই হাতে গোনা যে কয়টি মাধ্যম রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা দরকার। কারণ, দেশে ফেরার পর একসঙ্গে কিছু টাকা হাতে রাখা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। এই বাস্তবতায় প্রবাসীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয় একটি বিনিয়োগ মাধ্যম হয়ে উঠেছে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড।
বাংলাদেশ সরকার প্রবর্তিত এক ধরনের মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয় বন্ড হলো ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড। যা ‘প্রবাসী বন্ড’ নামেও পরিচিত। প্রবাসীরা এই বন্ডে এককালীন টাকা বিনিয়োগ করে নির্দিষ্ট সময় পর মুনাফাসহ সেই অর্থ ফেরত পান।
অনেকটা ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিটের মতো এই বন্ডে প্রবাসীরা সরকারের কাছে এককালীন টাকা বিনিয়োগ করেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর মুনাফাসহ সেই অর্থ ফেরত পান। তবে এখানেই শেষ নয়-এই বন্ডে মুনাফার হার তুলনামূলক বেশি, আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত, এবং অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে থাকে মৃত্যুঝুঁকির বিমা।
ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড কি?
ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড হল বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত এক প্রকার মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয় বন্ড। বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকরা তাদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অধিকতর লাভে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ১৯৮১ সনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড নামক সঞ্চয় বন্ড প্রবর্তন করেছে।
যত টাকায় কেনা যায়
ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড ২৫ হাজার টাকা, ৫০ হাজার টাকা, ১ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা, ৫ লাখ টাকা, ১০ লাখ টাকা ও ৫০ লাখ টাকায় কেনা যায়। এ ক্ষেত্রে মেয়াদ ৫ বছর।
যেভাবে মিলবে
বাংলাদেশ ব্যাংক, দেশে অবস্থিত যে কোন তফসিলি ব্যাংকের অথরাইজড ডিলার (এডি) শাখা এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের তফসিলী ব্যাংকের শাখা, এক্সচেঞ্জ হাউস, এক্সচেঞ্জ কোম্পানি থেকে কেনা যায়।
বিনিয়োগে যে পরিমাণ মুনাফা
এই বন্ডে বার্ষিক ১২ শতাংশ হারে সরল সুদ দেয়া হয়। তবে বন্ডে ১৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফা ১২ শতাংশ হলেও ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১১ শতাংশ, ৩০ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি পর্যন্ত ৯ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।
যারা কিনতে পারবেন
বৈধ ওয়েজ আর্নার নিজে বা আবেদনপত্রে উল্লিখিত ব্যক্তি বা বাংলাদেশে তার বেনিফিসিয়ারীর নামে বাংলাদেশি টাকা বা বৈদেশিক মুদ্রায় ক্রয় করা যায়। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কিনতে পারেন।
এছাড়া বিদশে লিয়েনে কর্মরত সরকারি, সংবিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত অথবা আধা-স্বায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠানের এমপ্লয়িগন নির্ধারিত শর্তপূরণ সাপেক্ষে এ বন্ড কিনতে পারবেন।
ক্রয়ের ঊর্ধ্বসীমা
১ কোটি টাকা।
অন্যান্য সুবিধা
শূন্য থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যু-ঝুঁকির সুবিধা রয়েছে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে। এছাড়া ষান্মাসিক ভিত্তিতে মুনাফা পাওয়া যায়। বন্ডের বিপরীতে ঋণ গ্রহণের সুবিধা রয়েছে। নমিনি নিয়োগ বা পরিবর্তন ও বাতিল করা যায়।
এছাড়া ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে ডুপ্লিকেট বন্ড ইস্যুর সুযোগ রয়েছে। এফসি অ্যাকাউন্ট থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। এ বন্ডে বিনিয়োগকৃত অর্থ ও অর্জিত মুনাফা আয়কর মুক্ত। বন্ডের মূল অর্থ ইউএস ডলারে গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। সূত্র সময়টিভি