মনজুর এ আজিজ : দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থাপনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনের প্রস্তুতির পথে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। প্রথম ইউনিটের জন্য প্রধান ও সহায়ক ট্রান্সফর্মারগুলোর কমিশনিং সম্পন্ন হওয়ায় জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে কেন্দ্রটি যুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।
প্রধান সেটআপ ট্রান্সফর্মারগুলোর কাজ হলো টার্বাইন জেনারেটরে উৎপাদিত ২৪ কেভি বিদ্যুৎকে ৪০০ কেভিতে রূপান্তর করা, যা জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য অপরিহার্য। প্রতিটি ট্রান্সফর্মারের ক্যাপাসিটি ১,৫৯৯ মেগাওয়াট পর্যন্ত যা প্রথম ইউনিটে উৎপাদিত ১,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চেয়েও বেশি। ফলে নিরবচ্ছিন্ন ও প্রয়োজনে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা সম্ভব হবে।
প্রতিটি ট্রান্সফর্মার ফেজের ওজন প্রায় ৪০০ টন এবং এগুলোর সংযোগ সম্পন্ন করতে ব্যবহৃত হয়েছে ১৫০ কিলোমিটারের অধিক ক্যাবল। এছাড়া ইউনিটটির অভ্যন্তরীণ সকল সিস্টেমে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়ক ট্রান্সফর্মারগুলোর কমিশনিংও সম্পন্ন হয়েছে। দ্বৈত মোড এ কাজ করতে সক্ষম এই ট্রান্সফর্মারগুলো জাতীয় গ্রিড এবং জেনারেটর উভয় উৎস থেকেই বিদ্যুৎ নিতে পারবে। ইতোপূর্বে অভ্যন্তরীণ সিস্টেমগুলোর জন্য ব্যবহৃত হতো স্ট্যান্ডবাই ট্রান্সফর্মার।
এ প্রসঙ্গে এমস্ত্রয় এক্সপোর্টের বাংলাদেশ প্রকল্পের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলেক্সি ডেইরী গণমাধ্যমকে বলেন, এটি সংশ্লিষ্ট সকল সমন্বিত প্রচেষ্টা ও নিষ্ঠার ফল। কঠিন লজিস্টিক্স ও জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সবাই চমৎকারভাবে কাজটি সম্পন্ন করেছে। ইউনিটির নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্যভাবে চালুর ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অচিরেই রূপপুর প্রকল্পে ‘হট মিডিয়া টেস্ট’সহ বেশকিছু নিরাপত্তাজনিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে। কোনও কোনও পরীক্ষার সময় বাষ্প নির্গমণের ফলে জনগণের কাছে অপ্রত্যাশিত শব্দ শোনা যাবে। তবে এটি পরীক্ষারই অংশ এবং পূর্ব পরিকল্পিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এতে কোনও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। পুরো প্রক্রিয়াটি নিরাপদ। রসাটম নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে, তাই সংস্থাটির মূল লক্ষ্য হলো সকল নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিরাপত্তা চাহিদা পূরণ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করা।
রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দু’টি ৩+ প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ চুল্লী স্থাপিত হয়েছে। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১,২০০ মেগাওয়াট। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা রসাটমের প্রকৌশল বিভাগ মোট ২,৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জেনারেল কন্ট্রাকটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৩ সালে ১২০০ মেগাওয়াট, ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট (১২০০ মেগাওয়াট) উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উপকেন্দ্র ও সঞ্চালন প্রস্তুত না হওয়ায় উৎপাদনের তারিখ দফায় দফায় পেছানো হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বর্তমান পেক্ষাপটে শিগগিরই উৎপাদনে আসবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
