নিজস্ব প্রতিবেদক : বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে নেট মিটারিং কার্যক্রম শুরু করা হলেও ৭ বছরে অর্জন সামান্যই। দেশের ৫ কোটি ১ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকের মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৯০৮ জন গ্রাহক নেট মিটারিং স্থাপন করেছেন। নেট মিটারিং বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান। বুধবার (১৮ জুন) সচিবালয়ে এক সভায় তিনি ৫০ হাজার গ্রাহকে উন্নীত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি বিল সমন্বয়ের সময় ১ বছর থেকে কমিয়ে ৩ মাস করা, নীতিমালা গ্রাহকবান্ধব করাসহ বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।
জানা যায়, ২০১৮ সালে বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে নেট মিটারিং কার্যক্রম শুরু করা হয়। এজন্য একটি নীতিমালাও করা হয় বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে। নেট মিটারিং পদ্ধতিতে গ্রাহক তার বাসা ও স্থাপনার ছাদে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করবেন। সেখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ নিজে ব্যবহারের পাশাপাশি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবেন। আবার যখন প্রয়োজন হবে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিবেন। গ্রিড থেকে নেওয়া এবং গ্রিডে দেওয়া বিদ্যুতের পরিমাণ মিটার সংরক্ষণ করবে। বছর শেষে বিল সমন্বয় করে গ্রাহকের পাওনা (যদি থাকে) বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
মূলত সৌর বিদ্যুতের অনেক গ্রাহকের দিনে ব্যবহার থাকে না, আবার ব্যাটারি ব্যবহার করতে গেলে খরচ বেড়ে যায়। সে কারণে নেট মিটারিং ইস্যুটি সামনে আসে। গ্রাহক যাতে তার প্রয়োজনের সময় বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে, অন্য সময়ে পুরোটা গ্রিডে দিতে পারে। সেই সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে নেট মিটারিং নীতিমালায়।
অনেক সম্ভাবনা থাকলেও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে না পারা এবং বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহের কারণে এখনও তিমিরেই রয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির মোট ৫ কোটি ১ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ৫৩১ জন গ্রাহক (১৮ মেগাওয়াট), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ৪৩৮ জন গ্রাহক (৬৯ মেগাওয়াট), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৩৫৬ জন গ্রাহক (৩.৭ মেগাওয়াট), ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির ৯৯৬ জন গ্রাহক (১২ মেগাওয়াট), ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৪৬৮ জন গ্রাহক (১৩.৫ মেগাওয়াট) এবং নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির ১১৯ জন গ্রাহক (৫.৬ মেগাওয়াট) নেট মিটারিং পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। কাগজে কলমে এই সংখ্যা বলা হলেও কতগুলো সচল রয়েছে সে প্রশ্ন রয়েই গেছে।
এক সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীন ২০১৩ সালে, ডেনমার্ক ২০১০ সালে নেট এনার্জি মিটারিং পদ্ধতি চালু করেছে। এটি তাদের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে নেট মিটারিং পদ্ধতিতে ৮ বছরের বিনিয়োগ উঠে আসছে। এরপর আরও ১২ বছর ফ্রি সার্ভিস পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আবার বিনিয়োগ ছাড়া তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে নেট মিটারিং স্থাপন করার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ বাড়ি কিংবা কারখানার ছাদ ভাড়া দিয়ে সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তারপরও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ইশতিয়াক বারী এক সেমিনারে বলেছেন, দেশের ইপিজেডগুলোতে নেট এনার্জি মিটারিং করা গেলে বছরে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৯৪৮ মেগাওয়াট থেকে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নেট মিটারিংয়ের নীতমালায় অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। তৃতীয়পক্ষ একটি কারখানায় বিনিয়োগ করল, ৫ বছর পর সেই কারখানা বন্ধ হয়ে গেলো, তাহলে কি হবে? সরকারের কাছে বিক্রির বিকল্প সুবিধা থাকা উচিত। এছাড়া অর্থায়নের দীর্ঘসূত্রিতা দূর করা দরকার। আবার বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলো হুমকি মনে করছে, তাই তারা এতে কম আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাদের ফ্রি সার্ভিস দিতে হচ্ছে, কোনো সার্ভিস চার্জ নেই। নেট মিটারিং ব্যবহার করলে তাদের বিদ্যুৎ বিক্রি কমে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই বিতরণ চার্জ কমে আসবে। তাই এখানে তাদের ঝুঁকি হ্রাসের ব্যবস্থা থাকা উচিত।
নেট এনার্জি মিটারিং প্রক্রিয়ায় রুফটপে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রাহকের লোডে ব্যবহারের পর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিতরণ গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এই রপ্তানিকৃত বিদ্যুৎ প্রতিমাসে আমদানিকৃত বিদ্যুতের সাথে সমন্বয় করা হয়, রপ্তানি বেশি হলে ক্রেডিট হিসেবে জমা হয়। এই পদ্ধতিতে ব্যাটারির প্রয়োজন হয় না বলে সোলার সিস্টেম লাভজনক।