শিরোনাম
◈ বেনাপোল বন্দর উদ্ভীদ সংগনিরোধ ভবনে ল্যাবে জনবল শুণ্য, পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধে ঝুকিতে কৃষিক্ষাত! ◈ জাতিসংঘের সতর্কবার্তা: বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো ◈ আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে : নাহিদ ইসলাম ◈ জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব: সন্দেহ হলেই বাতিল ভিসার আবেদন ◈ অবশেষে গাজায় প্রবেশ করছে ত্রাণবাহী ট্রাক ◈ বাংলা‌দেশ ইমা‌র্জিং দল ও নিউ‌জিল‌্যা‌ন্ডের চার দিনের ম্যাচ ড্র ◈ সালাউদ্দিন আহমেদের কাছে সারজিসের ৩ আহ্বান ◈ ‘ড. ইউনূসকে ঘিরে একটি চক্র’, ভেতরে চার-বাইরে তিন : সংকট ঘনীভূত ◈ ড. ইউনূসের পদত্যাগ তার ব্যক্তিগত বিষয়, বিএনপি পদত্যাগ চায় না: সালাহউদ্দিন আহমদ (ভিডিও) ◈ প্রয়োজনে গুঁড়িয়ে দেব: লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি নিয়ে হুঁশিয়ারি ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তার

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২৫, ১১:৪৫ দুপুর
আপডেট : ২৩ মে, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আন্দোলন সামাল দিতে ক্লান্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আন্দোলনে স্থবির অর্থনীতি

ইত্তেফাক প্রতিবেদন: ঢাকা শহরে গত ৯ মাসে পাঁচ শতাধিক আন্দোলন হয়েছে। একাধিক সড়ক অবরোধ করে গত ১০ দিনে ৫০টির অধিক আন্দোলন হয়েছে রাজধানীতে। আন্দোলনের পাশাপাশি বৃষ্টিতে সৃষ্ট ভয়াবহ যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। আর এই মুহূর্তে ঢাকায় পাঁচটির বেশি পক্ষ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে আছে। এতে দেশে অর্থনীতিও স্থবির হয়ে পড়ে।

আধা ঘণ্টার পথ তিন ঘণ্টাও যাওয়া সম্ভব হয়নি। সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সঠিক সময়ে অফিসে যেতে পারেননি। অফিস শেষ করেও সঠিক সময়ে বাসায় পৌঁছাতে পারেনি। এমনিতে ঢাকায় স্বাভাবিক যানজটের কারণে নষ্ট হয়ে আসছে দৈনিক প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা। অর্থমূল্যে যা দৈনিক প্রায় ১৩৯ কোটি এবং বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার অধিক। গত ১০ দিন আন্দোলনের কারণে অতিরিক্ত যানজটের কারণে এই ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন।

গত ১০ দিনে ৫০ আন্দোলনে যারা রাজপথে ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে টানা আট দিন সড়কে অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল। তিন দফা দাবিতে রাজধানীর কাকরাইল মোড় অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে যাত্রায় পুলিশের বাধার মুখে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টানা ১০ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সাম্য হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে ছাত্রদল কয়েক দফা শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। ছয় দফা দাবিতে কারিগরি শিক্ষার্থীরা অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। 

মেগাসিটি রাজধানী ঢাকায় যানজট নিত্যদিনের চিত্র। দৈনন্দিন প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষ যানজট, গাড়ির হর্নে ত্যক্ত-বিরক্ত। এর মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের ভোগান্তি। একটা সময় জাতীয় প্রেস ক্লাব, কখনো শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন কর্মসূচি হলেও এখন যেন তা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো নগর জুড়ে। যার যখন যেভাবে খুশি সড়কে বসে পড়ছেন দাবির লম্বা তালিকা নিয়ে। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দাবি আদায়ের মিছিলে যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ঢাকার রাজপথ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হিসেবে, ঢাকায় গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে তিনটি আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়। সে হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে পাঁচ শতাধিক আন্দোলন হয়েছে ঢাকার বুকে। আন্দোলনে যুক্ত সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবীরা যেমন রাস্তায় দুর্ভোগ বাড়াচ্ছেন, সমান গতিতে সরকারি চাকরিজীবীরাও দপ্তরের ভেতরে-বাইরে আন্দোলন করে নগরবাসীর দুঃখ বাড়াচ্ছেন। আন্দোলন সামাল দিতে ক্লান্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রয়োজনে আন্দোলনের জন্য নির্দিষ্ট স্পট ঠিক করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা শহরের মানুষকে এখন সকালে বাইরে বের হওয়ার আগে খোঁজ নিতে হয় কোন কোন সড়কে আন্দোলন হচ্ছে। কোন কোন সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। সেই অবরোধের ফলে শহরে যানজটের অবস্থা কেমন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে নগর ভবন (ডিএসসিসি), হাইকোর্ট এলাকা, মত্স্য ভবন ও কাকরাইলে ইশরাক সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করেন। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে সাম্য হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। বিকাল সাড়ে ৪টায় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। গত বুধবার সকালে ঢাকার একটি বড় হাসপাতালের একজন চিকিত্সক ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘ঢাকা শহরে আজকে চারটা আন্দোলন চলছে চার জায়গায়। কেউ খুব প্রয়োজন ছাড়া বের হবেন না।’ তার ঐ পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিজ্ঞতা জানিয়ে কমেন্ট করেন।

মিছিলের নগরী: একসময় বলা হতো, ঢাকা হচ্ছে মসজিদের শহর। তারপর বলা হতো ঢাকা রিকশার শহর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে ঢাকা মূলত পরিণত হয়েছে মিছিলের শহরে। দাবি আদায়ের শহরে। আন্দোলনের শহরে।’

৯ মাসে যেসব আন্দোলন: গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরে ঢাকা শহরে অটোরিকশার চালুর দাবি; শিক্ষার্থীদের অটোপাস; আনসারদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো; চাকরিচ্যুত সেনা ও পুলিশ সদস্যদের পুনর্বহাল; বিডিআর বিদ্রোহে কারাবন্দি সদস্যদের মুক্তি, ক্ষতিপূরণ ও চাকরিতে পুনর্বহাল; নিয়োগবঞ্চিত বিসিএস ক্যাডারদের নিয়োগ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত সাত কলেজ পৃথকীকরণ এবং স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠন; ইবতেদায়ি শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবি; সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে মিছিল, সমাবেশ ও বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া পলিটেকনিক্যালের শিক্ষার্থীদের অবরোধ, ইন্টার্ন চিকিত্সকদের ভাতা বৃদ্ধির আন্দোলন, রেলের কর্মচারীদের আন্দোলনও হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, ওয়াসা, ডেসা, সচিবালয় কর্মচারী থেকে বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দাবি নিয়ে মাঠে নামেন। তাদের প্রধান অসন্তোষের কারণ, পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়া, চাকরি স্থায়ী না করা। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা নিজেদের ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে মাঠে নামেন।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আয়োজনে আন্দোলন শেষ না হতেই ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সকে স্নাতক সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে মাঠে নামেন নার্সিংয়ের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ৭০ শতাংশ আবাসন ভাতাসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীর কাকরাইল মোড় অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। গত ১৮ মে একদিনে রাজধানী ঢাকায় আটটি বড় বড় আন্দোলন কর্মসূচি হয়, যাতে নাগরিকদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়। এদিন চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। একই দিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথের ব্যবস্থা করাতে চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ করেন তার অনুসারীরা। সচিবালয়ের সামনে থেকে নগর ভবন এবং আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভকারীরা ছড়িয়ে পড়ায় মানুষের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। পরদিন একই দাবিতে পালন করা হয় ব্লকেড কর্মসূচি। বৃহস্পতিবার ইশরাককে শপথ পড়াতে বাধা নেই বলে হাইকোর্টের রায় আসা পর্যন্ত কাকরাইল ও মত্স্য ভবন এলাকায় বিক্ষোভ করেন ইশরাকের সমর্থকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও, শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একই দিন বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের ঘোষণা না দিলে দেশ অচলের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন করেন শ্রমিকরা। অপরদিকে শেয়ার বাজারের অব্যাহত পতনের প্রতিবাদে কাফনের কাপড় নিয়ে মিছিল করেন বিনিয়োগকারীরা। হাইকোর্টের মাজার গেটের সামনে একই দিনে বিক্ষোভ করেন পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থীরা।

পাঁচ কারণে এই পরিস্থিতি: পাঁচটি কারণে ঢাকা শহর আন্দোলন বা মিছিল অথবা দাবি আদায়ের শহরে পরিণত হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাদের মতে, সবাই হয়তো মনে করছে, যেহেতু একটি বড় অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের মতো একটি বিরাট শক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে, অতএব তাদের দাবি আদায়ের জন্য এটাই উপযুক্ত সময়। বিগত সরকারের আমলেও দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ রাজপথে নেমেছে। কিন্তু সরকারের সমর্থন নেই-এমন আন্দোলনগুলো সাধারণত সরকার কঠোর হাতে দমন করেছে। সেই পক্ষগুলোই হয়তো এখন ভাবছে যে, অতীতের সরকারের মতো তারা দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে নামলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মার খাবে না। শুরুর দিকে এই ধারণাটি ঠিক ছিল। পুলিশ বা অন্য কোনো বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর সেভাবে চড়াও হয়নি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল যে, পুলিশ ঠিকই আগের স্টাইলেই আন্দোলন দমন করছে। আরেকটি বিষয় হলো, শিক্ষক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন পক্ষের অনেক যৌক্তিক চাওয়া দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক কারণে যারা মাঠ দখলে রাখতে চায়, তারাও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় থাকতে পারে বা বিভিন্ন বঞ্চিত ও ক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠীকে তারা আন্দোলনে নামার জন্য উত্সাহিত করতে পারে। সরকার সমর্থিত অনেক গ্রুপও আন্দোলনের নামে মাঠে থাকতে পারে, যাতে সরকারবিরোধী শক্তিসমূহ নির্বাচন বা অন্য কোনো ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে মোকাবিলা করা যায়।

আন্দোলনের প্রভাব: আন্দোলন মানেই মিছিল, সমাবেশ, অবরোধ। বিশেষ করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কোনো সড়কে বা মোড় অবরোধ করা হলে তার ফলে ঐ এলাকায় যে তীব্র যানজট তৈরি হয়, তার প্রভাব পড়ে আশপাশের সকল সড়কে, অলি-গলিতে এবং ধীরে ধীরে সেই ভোগান্তি ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। কেননা, সবাই তখন বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছাতে চায়। যানজটের কারণে মানুষের প্রচুর কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। ৩০ মিনিটের পথ যেতে অনেক সময় দুই ঘণ্টা বা তারও বেশি লেগে যায়। মানুষ সঠিক সময়ে কর্মস্থলে বা কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরতে পারে না। শাহবাগ মোড়ে দেশের একমাত্র মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বারডেম হাসপাতাল। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই দুটি হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে যান। অসংখ্য রোগীর আত্মীয়স্বজনরা যান। ফলে শাহবাগ মোড়ে যখন অবরোধ হয়, তার প্রধান ভিকটিম হন এই মানুষগুলো। অনেক সময় চিকিত্সক ও হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীরাও সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না। তাতে রোগীদের সেবা ব্যাহত হয়।  মিছিল, সমাবেশ ও অবরোধের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়- যা তার মানসিক অস্থিরতা বাড়ায়। অর্থাত্ মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। মানুষ অল্পতেই মেজাজ হারায়। মানুষের শরীর ও মনে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে।

নগরবাসীদের অভিমত, গত ১৬ বছর যারা চুপ ছিলেন তারা নতুন সরকার আসার পর নিজেদের স্বার্থ আদায়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। অন্যদিকে সরকারও কিছুসংখ্যক আন্দোলনকারীকে ছাড় দেওয়ায় কিংবা দ্রুত দাবি পূরণ করায় অন্যরাও উত্সাহিত হচ্ছেন।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন রাজপথে আন্দোলনে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি প্রসঙ্গে বলেন, এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়ে। আমি সঠিক সময়ে আমার কাজ করতে পারছি না। ঘর থেকে বিরাট অনিশ্চয়তা নিয়ে বের হতে হচ্ছে। একটা রিকশাওয়ালা চার ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। একজন প্যাসেঞ্জারের কাছ থেকে সে তো চার গুণ ভাড়া নিতে পারছে না। প্যাসেঞ্জার বলেন, আমি গন্তব্যে না পৌঁছালে ভাড়া দিব কেন? মানুষের আয়, ব্যয় ও সময়-সব কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বড় ক্ষতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যত্ দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিবে। কিন্তু যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকে, তাহলে হয়তো বিনিয়োগকারী ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ করবে, বিকল্প খুঁজবে। আজকে যে সুযোগটা হারাচ্ছি বা আগামী বছর যে সুযোগটা হারাব সেটা তো আর ফিরে আসবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়