শিরোনাম
◈ সরকারের বেআইনি আদেশ পালনে র‌্যাব হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে চলেছে: মির্জা ফখরুল ◈ দেড়মাস পরে করোনায় মৃত্যু ১, শনাক্ত ৬  ◈ যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছে স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান: ওবায়দুল কাদের  ◈ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেন রাষ্ট্রপতি  ◈ নির্বাচনে সাংবাদিক-পর্যবেক্ষকদের বাধা দিলে ৭ বছরের জেল ◈ এক পরিবার থেকে ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না ৩ জনের বেশি ◈ কোনো র‌্যাব সদস্যের অবহেলা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: মুখপাত্র ◈ বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানোতে সরকারের সংশ্লিষ্টতা নেই: সিইসি  ◈ নওগাঁয় র‌্যাবের হেফাজতে মৃত্যু: ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাইকোর্টে ◈ সৌদিতে ওমরাহযাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনা, নিহত ২০

প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৫:৪৯ বিকাল
আপডেট : ২৪ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৫:৪৯ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডাকাত থেকে জামাতুল আনসারের সামরিক শাখার প্রধান রনবীর

মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ

মাসুদ আলম: মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অন্যতম শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান। ডাকাতির এক মামলায় গ্রেপ্তারের পর কারাগারে থাকাকালে জঙ্গিদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় এবং কারাগারে জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়।

জেল থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে থাকা জেএমবি সদস্য ও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। ২০১৭ সালে জামাতুল আনসারের শূরা সদস্য এবং অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান রাকিবের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে জামাতুল আনসারে যোগদান করে।

সোমবার ভোরে রনবীর ও তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ  আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলমকে  কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জামাতুল আনসারের আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি। যার নেতৃত্বে উগ্রবাদী সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও উগ্রবাদী এই সংগঠনে ছয় জন শূরা সদস্য রয়েছে, যারা দাওয়াতি, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন।

শূরা সদস্য আবদুল্লাহ মাইমুন দাওয়াতি শাখার প্রধান, রনবীর সামরিক শাখার প্রধান, ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার ২য় ব্যক্তি, মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিব অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান, শামীম মাহফুজ প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসেবে সংগঠনটিতে দায়িত্ব পালন করছে।

তিনি আরও বলেন, এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ জন সদস্যকে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের প্রধান নাথান বম, সামরিক কমান্ডার কথিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ভাংচুং লিয়ান বম এবং অপর আরেক নেতা মিডিয়া শাখা প্রধান কথিত লে. কর্নেল লালজং মুই ওরফে মাওয়াইয়া এবং কথিত লে. কর্নেল লাল মুন ঠিয়াল ওরফে চির চির ময়-এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে।

মঈন বলেন, গত বছরের ২০ অক্টোবর বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাহাড়ে আত্মগোপনে থাকা সাত জঙ্গি এবং তাদের সহায়তাকারী তিন জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার সাত আসামির মধ্যে  ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সামরিক শাখার উপ-প্রধান সৈয়দ মারুফ আহমেদ মানিক ছিলেন। মারুফকে জিজ্ঞাসাবাদে রনবীর ওরফে মাসুদের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।  

রনবীর সম্পর্কে কমান্ডার মঈন বলেন, তিনি ২০০৭ সালের পূর্বে পোস্ট অফিসে চাকরি করতেন। তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে জামাতুল আনসারে যোগদান করেন। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে সিলেট থেকে চার তরুণের নিখোঁজের ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শেষে নিখোঁজ ওই চার তরুণকে সে সামরিক শাখায় নিযুক্ত করে। প্রায় এক বছর পূর্বে সে সংগঠনের সামরিক শাখা প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার সামরিক কার্যক্রমের দুটি শাখা ছিল, যার একটি পাহাড়ে এবং অপরটি সমতলে। সমতলে সামরিক শাখার কার্যক্রম তার নেতৃত্বে পরিচালিত হতো।

তিনি বলেন, পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে তিনি সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আত্মগোপন করেন এবং কিছুদিন আগে আত্মগোপনের উদ্দেশে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নেন। আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলম হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা শেষে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তার সাংগঠনিক নাম আলম। নিখোঁজ ৫৫ জনের তালিকায় আবুল বাশারের নাম রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজি’র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৬-১৭ সালের দিকে জামাতুল আনসারের আমির মাহমুদের মাধ্যমে জামাতুল আনসারে যোগ দেন।

মঈন বলেন, পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গৃহত্যাগ করেন এবং ২ মাস সমতলের বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন বাশার। পরবর্তীতে তিনি রনবীর ও রাকিবের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে যান। বয়সে বড় হওয়ার কারণে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণী বৈঠকে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে তিনি ৫৫ জনের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড় থকে পালিয়ে সিলেটে যান। তিনি সামরিক শাখার প্রধান রনবীরের সঙ্গে সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। কিছুদিন আগে তিনি রনবীরের সঙ্গে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় আত্মগোপন করেন।

পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের প্রধান নাথান বম কোথায় জানতে চাইলে মঈন বলেন, রনবীর জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, গত সেপ্টেম্বরের পর থেকে নাথান বমের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। জামায়াতুল আনসারের আমিরের সন্ধান ও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হলে নাথান বম সম্পর্কে জানা যাবে।

কারাগার কি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণের নিরাপদ জায়গা? এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কার্যক্রম বা নজরদারি রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও কারা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। রনবীর জিজ্ঞাসাবাদে কারাগারে থাকাকালেই জামাতুল আনসারে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা বলেছেন। এরকম অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। ২০০৫-০৬ সালের দিকে এটি বেশি হয়েছে। নতুন করে কারাগারে যাতে এই সুযোগ তৈরি না হয়, সেজন্য কারা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এমএ/এসএ 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়