শিরোনাম
◈ ঢাকা মগবাজারে ‘ককটেল’ বিস্ফোরণে যুবক নিহত ◈ সংকট কাটিয়ে যেভাবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে এলেন তারেক রহমান ◈ লোভে রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব সংকটে: হাসনাত আবদুল্লাহ’র সমাবেশে হুঁশিয়ারি (ভিডিও) ◈ দেশকে আরও স্বনির্ভর করা সম্ভব: প্রধান উপদেষ্টা ◈ ইন্টারনেট বন্ধে নিষেধাজ্ঞা, নাগরিক নজরদারি দণ্ডনীয়—নতুন টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ অনুমোদিত ◈ রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকায় ড্রোন উড়ানো নিষিদ্ধ ◈ সরকারের অবস্থান স্পষ্ট, আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না : প্রেস সচিব (ভিডিও) ◈ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রুমিন ফারহানার, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিলেন মনোনয়ন ◈ হাইকোর্টের আদেশে ধাক্কা, আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না ◈ ভার‌তের বিহারে মুসলমান ফেরিওয়ালাকে যেভাবে 'গণপিটুনি' দিয়ে হত্যা করা হলো

প্রকাশিত : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:১৩ দুপুর
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সস্তায় মিলছে ভাড়াটে খুনি, প্রশিক্ষিত নিখুঁত নিশানা করে হেডশুট!

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টার্গেট ব্যক্তির প্রোফাইল দেখে টাকা দাবি করে ভাড়াটে খুনিরা। অনেক ক্ষেত্রে আইনি ঝামেলায় পড়ার শঙ্কা কম দেখলে সস্তায় খুন করার চুক্তি হাতে নিচ্ছে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা শহরে ভাড়াটে খুনিদের তৎপরতা বাড়ছে। পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, ভাড়াটে খুনিদের আইনের আওতায় আনতে সারা দেশে তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি এমন কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। সূত্র: বিডি-প্রতিদিন প্রতিবেদন

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ে ভাড়াটে খুনিদের ব্যবহার নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে। বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ঘাপটি মেরে থাকা শুটারদের প্রকাশ্যে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া, জামিনে বের হওয়া দাগি আসামিদের অপতৎপরতা, আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির ঘটনা ছাড়াও ব্যক্তি আক্রোশেও সন্ত্রাসীদের ভাড়া করার বিষয়গুলো দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো ফিল্মি স্টাইলে খুন, আবার কখনো নৃশংসভাবে ডাবল, ত্রিপল মার্ডার ঘটানো হচ্ছে। এতে ভাড়ার খুনি নিয়ে শঙ্কা জাগছে জনমনেও। জাতীয় নির্বাচনের আগে ভাড়াটে খুনিদের কদর বেড়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। 

এদিকে গত কয়েক মাসে প্রকাশ্য দিবালোকে কয়েকটি টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটিয়ে নিজেদের দুর্ধর্ষতার জানান দিয়েছে বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীর ছায়াতলে থাকা শুটাররা। এসব ঘটনার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুটারদের বিভিন্ন অঙ্কের টাকার বিনিময়ে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয় বলে উঠে আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রাজধানীতে বর্তমানে অর্ধশত দক্ষ শুটার রয়েছে, যারা সুযোগ পেলেই ভাড়ায় কিলিং মিশনে অংশ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাদের অনেকেই রাজনীতিক, শক্ত প্রতিপক্ষ গ্যাং স্টারদের মারার জন্য পারস্পরিক সমঝোতা বা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আলোচনায় আসে ফোর স্টার গ্রুপের নাম। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিবরিয়ার কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া শুটাররা প্রাথমিকভাবে মাত্র ৩০ হাজার টাকা পেয়েছিল। গত ১০ নভেম্বর সকালে পুরান ঢাকার আদালতপাড়ার পাশে ফিল্মি স্টাইলে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় এক সময়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ ওরফে মামুনের।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মামুনকে লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি চালায় ফারুক হোসেন ফয়সাল এবং রবিন আহম্মেদ ওরফে পিয়াস। তাদেরও টাকার বিনিময়ে ভাড়া করা হয়েছিল। ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় আলোচনায় আসে ফয়সাল করিম মাসুদের নাম। সে মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকার অস্ত্রবাজ হিসেবে পরিচিত। গত ১৬ নভেম্বর লবণচরার টুটপাড়া দরবেশ মোল্লা গলির বাড়ি থেকে নানি ও দুই নাতি-নাতনির লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পরে তদন্তে উঠে আসে, জমিজমা নিয়ে বিরোধে ১ লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করানো হয় তাদের। গত ২৫ মে রাতে মধ্যবাড্ডার গুদারাঘাটে ফিল্মি স্টাইলে খুন হন গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী কামরুল আহসান সাধন। তাঁকে গুলি করে মিজানুর রহমান মিম ও মো. হৃদয় চৌধুরী। এ দুজনই ডেমরা এলাকার পেশাদার শুটার।

এদিকে পুলিশের তালিকায় নাম থাকা যাত্রাবাড়ীর মো. ইয়াছিন উদ্দিন লিটন ওরফে শুটার লিটন, কদমতলীর বরিশাইল্লাহ মামুন, শ্যামপুরের কচি ফারুক, খিলগাঁওয়ের ভাগিনা তুষার, মুগদার মঞ্জু হোসেন নিজু, পল্লবীর ডাকাত বাবু, স্পট নাদিম, মোহাম্মদপুরে ইউসুফ ওরফে জীবন ও আলতাফ হোসেন, কলাবাগানের মো. কামরুল ইসলাম, লালবাগের মুশফিক উদ্দিন টগর, গেন্ডারিয়ার লেদু শরীফ ও অটো সজলসহ বেশ কয়েকজন দুর্ধর্ষ শুটারের নাম রয়েছে। যারা নির্বাচনের আগে ভাড়ায় খুনাখুনিতে অংশ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, অপরাধ সংগঠিত হওয়ার আগে ও পরে যে ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত- উভয়ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ অস্ত্র বৃদ্ধি পাওয়া, জামিনে বের হওয়া আসামিদের গতিবিধি নজরদারিতে না রাখা, সোর্স ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, পুলিশের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা ও নির্বাচনি ব্যস্ততার কারণে অপরাধীরা মনে করছে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে। আর এ কারণেই সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। বরং প্রকট আকার ধারণ করছে।

এ ক্ষেত্রে অপরাধীদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে অপারেশন ডেভিল হান্টের ফেজ-২-তে যেন সত্যিকার অর্থেই কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হয়। অন্যথায় নির্বাচনের আগে ভাড়াটে খুনিদের মাধ্যমে টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, সারা দেশেই ভাড়াটে খুনিসহ দুষ্কৃতকারীদের তালিকা হালনাগাদ করতে সদরদপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২ এর মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ। তারা যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো টার্গেট কিলিংয়ে অংশ নিতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের জন্য হুমকি- এরকম অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়