শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: [২] সুস্বাদু ও বিষমুক্ত খাদ্যের যোগান দিতে কুমিল্লায় দিন দিন বাড়ছে কেঁচো ও ছত্রাক থেকে উৎপাদিত জৈব সারের ব্যবহার। এটি মাটির পুষ্টিমান বৃদ্ধি ও মাটিকে সমৃদ্ধ করে এবং পরিবেশবান্ধব। এ সার ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন বাড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। সরকারি সহায়তা পেলে দেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। এতে কমবে দাম এবং কেমিক্যাল সারের আমদানি।
[৩] রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। এই সার ব্যবহার করে উৎপাদিত ফসলও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কেঁচো কম্পোস্ট একটি জৈব সার যা জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। স্বাস্থ্য ঝুকি এড়াতে কুমিল্লায় অনেকেই কেঁচো সার তৈরি করছেন ব্যক্তি উদ্যোগে। পিছিয়ে নেই নারীরাও।
[৪] জেলার চান্দিনার পিহর গ্রামের সাইফুল ইসলাম। কাজ করতেন বেসরকারি একটি আইটি সেকশনে। ওদের কেঁচো সারের উদ্যোগ তার নজরে পড়ে। পরে ২০২১ সালে করোনাকালিন সময়ে চাকরি ছেড়ে উদ্যোগ নেন ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদনের। স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় মাত্র ১০ কেজি কেঁচো ও ১৬টি রিং দিয়ে জৈব সার উৎপাদন শুরু করলেও এখন রিংয়ের সংখ্যা ২০০টি।
[৫] প্লান্ট পাওয়ার অর্গানিক ফার্টিলাইজার (খামার) এর মালিক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতি মাসে তিনি তার খামার থেকে বিক্রি করছেন ৭-৮ টন জৈব সার এবং ১০০ কেজি কেঁচো। পাইকারি কেজিপ্রতি সার ১৫ টাকা এবং কেঁচো দু’হাজার টাকা দরে স্থানীয় কৃষকের চাহিদা মিটিয়ে তার এ সার চলে যাচ্ছে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলার বাহিরে।
[৬] কোঁচো সার ব্যবহারকারী কৃষকরা জানান, শাকসবজি, ফলমূল ও ধানের জমিতে এ সার প্রয়োগে সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা। মাছের খাদ্য হিসাবেও ব্যবহার করছেন চাষীরা। কেঁচো সার ফসলি জমির মাটি নরম ও উৎপাদিত গাছ সতেজ রাখে। বিশেষ করে ধানক্ষেতের পাতা সবুজ, মোটা ও চড়া করতে সহায়তা করে। এতে স্বাভাবিকের তুলনায় ফসলের উৎপাদন বাড়ছে।
[৭] চান্দিনা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল হোসাইন বলেন, সাইফুল ইসলামের কেঁচো সার উৎপাদনে সফলতা ও চাহিদা দেখে পিহর গ্রামেই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। এ গ্রামে প্রায় ডজনখানেক নারী ও পুরুষ ব্যক্তি উদ্যোগে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। নিজের ফসলি জমিতে ব্যবহারের সঙ্গে বিক্রি করে হচ্ছেন স্বাবলম্বী।
[৮] কৃষিবিদরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনে পরিবেশ বিপর্যস্ত। যে কারণে পরিবেশ এখন সবার দুশ্চিন্তার খোরাক। বিশেষ করে জমিতে বিভিন্ন রাসায়নিক সারের ব্যবহারে প্রতি মৌসুমে ফসলের পরিমাণ বাড়লেও শক্তি নষ্ট হচ্ছে মাটির। দূষিত হচ্ছে পানি ও বায়ু। তাই ভোক্তার স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে জৈব সারের বিকল্প নেই। পরিবেশবান্ধব এ সার তৈরি হচ্ছে কেঁচো এবং ছত্রাক এর মাধ্যমে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক, কৃষাণী উচিত রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার করা।
[৯] জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, শুধু পিহর গ্রাম নয়, কেঁচো ও ছত্রাক থেকে জৈব সার উৎপাদন হচ্ছে কুমিল্লার লাকসামের গুনতী, বরুড়া ও দেবিদ্বারসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। কম মূল্যের এ সার ফসলে ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কমছে।
প্রতিনিধি/একে