এম আর আমিন, চট্টগ্রাম: [২] লাগেজের ভেতর থেকে মানবদেহের আট খণ্ড উদ্ধারের ঘটনায় নিহতের পরিচয় শনাক্তের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত ভুক্তভোগীর স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। তবে ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী আনারকলি পলাতক আছেন বলে জানিয়েছে পিবিআই।
[৩] নিহত মো. হাসান (৬১) চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলী গ্রামের সাহাব মিয়ার ছেলে। পিবিআইয়ের সংগ্রহ করা তার জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) অস্থায়ী ঠিকানা লেখা আছে, সিলেট সদরের সাধুর বাজার সংলগ্ন রেলওয়ে কলোনির জামাল মিয়ার গ্যারেজ।
[৪] জানা গেছে, প্রায় ২৭ বছর ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিখোঁজ ছিলেন মো. হাসান। সম্প্রতি পরিবারের কাছে ফিরে এসেছিলেন। নিজের নামে থাকা কিছু সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য হাসানকে চাপ দিয়েছিলেন স্ত্রী-সন্তানেরা। রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত স্ত্রী-সন্তানেরা তাকে খুন করে।
[৬] পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম জানান, আঙ্গুলের ছাপ এবং নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে আমরা প্রথমে হাসানের পরিচয় নিশ্চিত হই। এরপর আকমল আলী রোডে তার ছোট ছেলের বাসার সন্ধান পাই। ওই বাসার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহর পর পুরো বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়। হত্যার পর শরীরের অংশবিশেষ বস্তায় ভরে বের করার বিষয়টি ফুটেজে স্পষ্ট হয়েছে।
[৭] তিনি আরও জানান, আটক হাসানের স্ত্রী ও বড় ছেলের দেওয়া তথ্যে নগরীর আকমল আলী সড়কের খালপাড়ে একটি খাল থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় টেপে মোড়ানো শরীরের একটি খণ্ড উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে মাথার সন্ধানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
[৮] সহকারী পুলিশ সুপার জানান, হাসান ২৭-২৮ বছর ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। কোথায় ছিলেন সেটা তার স্ত্রী-সন্তানরা জানতেন না। সম্প্রতি তিনি ফিরে আসেন। বাঁশখালীতে হাসানের পৈতৃক কিছু সম্পদ আছে। স্ত্রী-সন্তানরা সেগুলো তাদের নামে লিখে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন হাসানের ওপর। কিন্তু হাসান সেগুলো দিতে সম্মত ছিলেন না।
[৯] তিনি আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের দশদিন আগে চিকিৎসার নামে হাসানের স্ত্রী চট্টগ্রাম শহরে ছোট ছেলের বাসায় আসেন। ঘটনার দিন বড় ছেলে মোস্তাফিজুরও সেই বাসায় যান। হাসানকেও ডেকে নেওয়া হয়। রাতে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এর একপর্যায়ে স্ত্রী, দুই ছেলে এবং ছোট ছেলের স্ত্রী মিলে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করে। পরে মরদেহ কেটে টুকরো করে ট্রলিব্যাগে করে আট টুকরো ফেলা হয় পতেঙ্গা ১২ নম্বর ঘাট এলাকার খালে।
[১০] তিনি জানান, মাথা এবং বুকসহ শরীরের আরও কিছু অংশ বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। সম্পাদনা: অনিক কর্মকার
প্রতিনিধি/একে