জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর: স্ত্রী ফাতেমা আক্তারকে হত্যার দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ ২৪ বছর কারাগারে ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম।
সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। তবে তার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাকে প্রশাসনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তারা। উপহার দেওয়া হয়েছে একটি টেলিকম এন্ড ফটোশপের দোকান।
বুধবার (২২ মার্চ) সমাজসেবা অধিদফতরের অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির আওতায় মুক্তিপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীরের প্রদত্ত 'বিছমিল্লাহ টেলিকম এন্ড ফটোশপ` এর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোছাইন আকন্দ। এর আগে রায়পুর রাখালিয়া বাজার এলাকায় তার দোকানের সামনে প্রবেশন অফিসারের কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, স্ত্রী ফাতেমাকে হত্যা মামলায় দীর্ঘ ২৪ বছর সাজা ভোগ করার পর কারামুক্ত হয়েছেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর মহাদেবপুর গ্রামের মোঃ মজিবুল হকের ছেলে মো: জাহাঙ্গীর আলম। সরকারি উদ্যোগে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে তার নিজ এলাকায় 'বিছমিল্লাহ টেলিকম এন্ড ফটোশপ' নামে তাকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উপহার দেওয়া হয়েছে। এর আগে কারাগারে তাকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সরকারি এমন উদ্যোগে সন্তুষ্টি এবং আনন্দ প্রকাশ করেছেন উপকারভোগী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, "গত ২৪ বছরে যা হারিয়েছি তা আর ফিরে পাবো না। জীবনের বাকি সময়টুকু আমি ভালোভাবে অতিবাহিত করতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।"
লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, 'রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ' এই কথাটি বাস্তব প্রমাণ আজকের উপকারভোগী জাহাঙ্গীর। তিনি ১৯৯৮ সালের ১৬ অক্টোবর হত্যা মামলায় কারাগারে যান। ২০০১ সালে তার মৃত্যুদন্ড দেয় আদালত। পরে উচ্চ আদালতে জেল আপিল করলে বিচারক তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ইতোমধ্যে ২৪ বছর আড়াই মাস কারাভোগ করেছেন তিনি। এর আগে কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে পরিকল্পিতভাবে তাকে পুনর্বাসন করা হলো।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, সমাজসেবা বিভাগের অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির পক্ষ থেকে কারাগারে এ ধরনের প্রশিক্ষণ ও জীবিকা নির্বাহের সরঞ্জাম দিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাড়ি ফিরে যাতে তাঁরা সম্মানের সঙ্গে কাজ করে বেঁচে থাকতে পারেন, সে লক্ষেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’ জাহাঙ্গীর ২৪ বছর জেল খেটেছেন। তিনি যেন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন। এজন্য স্থানীয় সকলকে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়েছেন ডিসি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম পাটওয়ারী, রায়পুর ইউএনও অঞ্জন দাশ, জেলা কারাগারের জেল সুপার নজরুল ইসলাম, রায়পুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল ইকবাল, সোনাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: কিসমত প্রমুখ।
প্রতিনিধি/জেএ
আপনার মতামত লিখুন :