শিরোনাম
◈ এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ, ‘নিক্ষেপকারীরা’ আটক ◈ মহাসড়কে আগুন জ্বালাতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা দগ্ধ ◈ নতুন নির্বাচনী আচরণবিধি জারি: পরিবেশ রক্ষা ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর শর্ত ◈ প্রবাসীকে বাদ দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন কীভাবে হয়, প্রশ্ন ইসি সানাউল্লাহর ◈ দেশে আবারও বাড়ল সোনার দাম, ভরি কত? ◈ হঠাৎ যেভাবে ধানমন্ডির ভোটার হলেন আসিফ মাহমুদ ◈ নভেম্বরের ৯ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহে ৪৮.৭ শতাংশ বৃদ্ধি ◈ জুলাই সনদ ও গণভোটের সমাধান কোন পথে? ◈ ড.ইউনুসের গ্রামীণ নামে যা যা বানাইছেন সবকিছুর বিপদ আছে: কাদের সিদ্দিকী ◈ একাদশ গ্রেডে বেতনের আশ্বাস, আন্দোলন স্থগিত প্রাথমিক শিক্ষকদের

প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ০৯:০৬ রাত
আপডেট : ১১ নভেম্বর, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাঁশখালীর উপকুলীয় বেড়িবাঁধ, ২৯৩ কোটি টাকার কাজ শেষে নতুন করে ৪৯৮ কোটি টাকার কাজ শুরু

কল্যাণ বড়ুয়া, বাঁশখালী প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের উপকুলীয় বাঁশখালীর দীর্ঘ বেড়িবাঁধ সংস্কারে বিগত দিনে ২৯৩ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়ে আবারো নতুন করে ৪৯৮ কোটি ২৯ লাখ টাকার বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ ২০২৪ এর জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কাজের শুরুতেই স্থানীয় জনগনের সাব ঠিকাদারী, বালি সরবরাহের দাবী,ব্লকে লবণাক্ত বালি ব্যবহার, প্রশাসনের অভিযানে জরিমানা আদায় সহ নানা কারণে এখনও পর্যন্ত পুরোধামে কাজ শুরু করতে পারেনি। নভেম্বর মাসের শুরুতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়,বর্তমানে কাজে ২.৫০% কাজের অগ্রগতি হয়েছে। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়ে পুর্বের মত এবার ও যথাসময়ে কাজ শেষ করতে পারবে কিনা!

১৯৯১ এর সালের প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে প্রতিটি দুর্যোগে বাঁশখালীর উপকুলের জনগন নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ প্রাণহানি ও বাড়ি ঘর বিলীন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তারই প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১ মে থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কাল ধরে ২০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে নির্মাণ সামগ্রী দাম বাড়া ও ঠিকাদারদের আপত্তির মুখে ২০১৫ সালে বাঁধ নির্মাণে ২৫১ কোটি ২৯ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকার অনুমোদন দেয় সরকার। এরপর তা আবারো বৃদ্ধি করে ২৯৩ কোটি টাকা করা হয়। ৩৪ প্যাকেজে খানখানাবাদে চার হাজার ৫০০ মিটার, ছনুয়ায় তিন হাজার ২০০ মিটার, সাধনপুরে দুই হাজার ৭৯ মিটার, পুকুরিয়ায় এক হাজার ২৬৯ মিটার, গন্ডামারায় ৯০০ মিটার, বাহারছড়ায় ৫০০ মিটার কাজ বাস্তবায়ন হয়েছিল। কিন্ত বর্তমানে সে বাঁধের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বাঁধে ফাটল ও ব্লক ধসে পড়ছে।

বর্তমানে আবারো নতুন করে বাঁশখালীর উপকুলীয় বেড়িবাঁধের জন্য ৪৯৮ কোটি ২৯ লাখ টাকার বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। তাতে ৬ দশমিক ৪১০ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃর্তিকরণ ও ঢাল সংরক্ষণ কাজ। এবার খানখানাবাদ ইউনিয়নে ২ হাজার ৬১০ কি:মি,বাহারছড়া ইউনিয়নে ১ হাজার  কি:মি, ছনুয়া ইউনিয়নে ২ হাজার ৮০০ কি:মি, এবং সাধনপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ১০০ কি:মি নদী তীর সংরক্ষণ কাজ করা হবে।

বাঁশখালীতে চলমান প্রকল্পের কাজ পেয়েছে প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (পিডিএল),আর.এফ.এল, হাসান এন্ড ব্রাদার্স এবং জামিল ইকবাল নামে প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে কয়জন আগেও বাঁশখালীর উপকুলীয় বেড়িবাঁধের কাজ করলে যথাসময়ে কাজ শুরু কিংবা শেষ করে না।

জানা যায়,পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খ.ম জুলফিকার তারেক, বর্তমান চলমান প্রকল্পের পরিচালক হলেও আগের প্রকল্পেও নির্বাহী অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিল। ২০১৭ সালে জানুয়ারিতে বাঁধ নির্মাণের কাজে প্রতি মিটারে খরচ ধরা হয়েছিল দুই দশমিক ৩৩ লাখ টাকা। ২০২২ সালে ধরা হয়েছে সাত দশমিক ৪৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের ব্যয় দ্বিগুন করা হলেও ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টরা কাজের মান ঠিক রাখবেন এবার সেটা সাধারন জনগনের প্রত্যাশা।

কাজের শুরুতে নোনা পানি মিশ্রিত বালি ব্যবহারের অভিযোগে অভিযোগের বাঁশখালী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ওমর সানি আকন গত ২৭ অক্টোবর কদম রসুল এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং লবণাক্ত বালু জব্দ করে তা বালু সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। তবে তিনি বলেন, এসব কাজের সার্বিক মান নিশ্চিয়তা করা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। লবনাক্ত বালি দিয়ে ব্লক ও বাঁেধ দেওয়াতে প্রকল্পের দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই নিয়ে প্রশ্ন তুলেন এলাকাবাসী।

এদিকে স্থানীয় আবুল কালাম, রশিদ আহমদ, নজরুল ইসলাম সহ বেশ কয়জন জানান,বাঁশখালীর উপকুলীয় বেড়িবাঁধ উপকুলের জনগনের জীবন মরনের প্রশ্ন। উপকুলের ৮টি ইউনিয়নের জনগন প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বাড়িঘর হারিয়ে নিংস্ব হলেও কিছু লোকের ভাল ইনকাম হয় ! বিগত দিনে করা ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ অনেক জায়গায় ভেঙে যাচ্ছে। অনিয়ম-দুর্নীতি ও নিম্নমানের কাজের কারণে বাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ব্লক ও জিও ব্যাগ তছনছ হয়ে বাঁধের অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ। বর্তমানে বাঁশখালীর ৪৯৮ কোটি ২৯ লাখ টাকার নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু থেকে নানা অনিয়ম, নোনামিশ্রিত পানি, লবণাক্ত বালু ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠেছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিডিএলের কদম রসুল এলাকার প্রকৌশলী হাসান স্থানীয় সংবাদকর্মীদের জানান, কাজের মান যথাযথ রাখার চেষ্টা চলছে, তবে স্থানীয়রা ঠিকাদারি কাজ পেতে বালি দিতে নানা ভাবে জোর তকবির করছে। তাদের কাছ থেকে বালু স্থানীয় ভাবে বালি সহ অন্যান্য মালামাল নিতে নানা ভাবে তকবির করছে সে জানান।

খানখানাবাদ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: শহিদুল ইসলাম সিকদার বলেন, খানখানাবাদ বাসী সাগরের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। তাই আমি চাই যে কাজ হবে তা যেন যথাযথ মান ঠিক থাকে। ইউনিয়নের প্রেমাশিয়া,কদমরসুল,খানখানাবাদ ও ঈশ্রবাবু হাট এলাকায় বাধেঁর কাজ যথাযথ না করলে জনগন পানিতে কষ্ট পাবে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রামের বাঁশখালী পানি উন্নয়ন উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম পাল বলেন, বাঁশখালীতে চলমান বেড়িবাঁধের কাজ খানখানাবাদে বন্ধ রয়েছে লবনাক্ত বালি ব্যবহারের অভিযোগে, ছনুয়াতে নভেম্বর মাসের শুরু থেকে কাজ শুরু হয়েছে,আর সাধনপুরের চলমান আছে। খানখানাবাদের কাজ ও শুরু হয়েছে,কাজে কোন ধরনের অনিয়ম হলে তা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারে বাস্তবায়ন ও মান রক্ষা করা হবে বলে তিনি জানান।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জামশেদুল আলম বলেন, বাঁশখালীর জনগনের কাছে বেড়িবাঁধ একটি গুরুপ্তপূর্ণ অংশ। এ কাজে কোন ধরনের অনিময় হউক তা কেউ চায় না। তারপরেও নির্দেশনা অমান্য করে লবণাক্ত বালু তোলার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। কোনো ভাবেই লবণপানি মিশ্রিত বালু দিয়ে ব্লক নির্মাণ করা যাবে না এবং কাজের মান ঠিক রেখে কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে বলে তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়