ইফতেখার আলম বিশাল: রাজশাহী নগরীর লক্ষিপুর কাঁচাবাজার এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের সাততলা থেকে পড়ে দুই নির্মাণ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন—মো. সুমন (৩৫), কর্ণহার থানার বেজুরা গ্রামের সেরাজের ছেলে, এবং আনারুল ইসলাম (৩৬), একই থানার বাতাসমোল্লা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক খোকার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১১টার দিকে সাততলায় প্লাস্টারের কাজ করার সময় হঠাৎ মাচা ভেঙে তারা নিচে পড়ে যান। ঘটনাস্থলেই সুমনের মৃত্যু হয়, আর গুরুতর আহত অবস্থায় আনারুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আব্দুল আলিম বলেন, “হঠাৎ বড় শব্দ শুনে বাইরে ছুটে যাই। দেখি দুইজন শ্রমিক রাস্তার ওপর পড়ে আছে। এক জনের মৃত্যু হয়েছে, অন্যজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ঠিকাদার ও হেড মিস্ত্রীর অবহেলার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। শ্রমিকদের সেফটি বেল্ট ছাড়াই সাততলায় কাজ করানো হচ্ছিল। এছাড়াও ভবনটি দক্ষিণ পাশে ফাঁকা না রেখে নির্মাণ করা হয়েছে, যা বিল্ডিং কোডের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তাদের দাবি—এই অবহেলা ও নিরাপত্তাহীনতার জন্য মালিকপক্ষ ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত।
নির্মাণাধীন ভবনের মালিকদের একজন তুহিন বলেন, “ঘটনার সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। পরে শুনেছি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা ভবনটি কন্ট্রাক্টে দিয়েছি, কাজের নিরাপত্তা ঠিকাদারের দায়িত্ব।”
এদিকে রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাবিবুর রহমান জানান, “নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
কাঁচাবারে মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম সেফটি বেল্ট ও হেলমেট নিশ্চিত না করেই কাজ করানো হয়েছে। সাততলায় প্লাস্টারের কাজ করার মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এমন অবহেলা নির্মাণশিল্পে নিত্যনৈমিত্তিক হলেও এই মৃত্যু আবারও সেই লজ্জাজনক বাস্তবতাকে সামনে এনেছে।
মালিকপক্ষ বলছেন “আমরা কন্ট্রাক্টে দিয়েছি”, অথচ আইনের চোখে ভবন মালিকও দায়মুক্ত নন। নির্মাণ কাজে নিরাপত্তা বিধি মানা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা মালিক, ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর যৌথ দায়িত্ব।