শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: এবারের এইচ এস সি পরীক্ষার ফলাফলে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে। গত ৫ বছরের তুলনায় এবার সর্বনিম্ম ফলাফল করেছে এ বোর্ড। আর গত বছরের তুলনায় এবার শতকরা হিসেবে ২২.২৯ ভাগ কম পাস করেছে। জিপিএ ৫ ও গেল বছরের তুলনায় এবার অনেক কম অর্জন করেছে।
গেল বছর এ বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৭ হাজার ৯২২ । এবার কমে তা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭০৭ জনে। ভেন্যু পরিবর্তন ও আন্দোলন সংগ্রামকে খারাপ ফলের জন্য দায়ী করেছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড। গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিক ভাবে ফলাফল ঘোষণা কালে এ তথ্য জানান বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. শামছুল ইসলাম।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড জানায়, ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত এইচ এস সি পরীক্ষায় বোর্ডের অধীন ফেনী,নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলার মোট ৯৯ হাজার ৫৭২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ৫৭ হাজার ৫২৪ জন ছাত্র এবং ৪২ হাজার ০৫২ জন ছাত্রী।পাশ করেছে ৪৮ হাজার ৬৫৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র পাশ করেছে ১৭ হাজার ৯৫৬ জন আর ছাত্রী পাশ করেছে ৩০ হাজার ৭০১ জন। পাশের হার ৪৮দশমিক ৮৬ ভাগ। শতকরা হিসেবে ছাত্র পাশের হার ৪২.৭০ ভাগ আর ছাত্রী পাশের হার ৫৩.৩৭ ভাগ।কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৭০৭ জন শিক্ষার্থী। ছাত্র পেয়েছে ৯৫৮ জন আর ছাত্রী পেয়েছে ১ হাজার ৭৪৯ জন।
বিভাগভিত্তিক ফলাফলে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৬২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং মানবিক শাখায় ৪৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পাশ এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে মেয়েরা এবারও ছেলেদের চেয়ে ভালো করেছে।
দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড, আর পিছিয়ে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে এ বছরের পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৪৮ দশমিক ৮৬। ছাড়াও রাজশাহীতে ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, যশোরে ৫০ দশমিক ২০ , চট্টগ্রামে ৫২ দশমিক ৫৭, বরিশালে ৬২ দশমিক ৫৭, সিলেটে ৫১ দশমিক ৮৬, দিনাজপুরে ৫৭ দশমিক ৪৯, ময়মনসিংহে ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন।
কেন ফল বিপর্যয় এ বিষয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাছরীন বলেন, এ বছর ইংরেজি ও উচ্চতর গণিতে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল হয়েছে। ইংরেজিতে পাস করেছেন ৬৫ দশমিক ২৮ এবং উচ্চতর গণিতে পাস করেছেন ৬০ দশমিক ৪৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী।
গতবারের তুলনায় এবারের ফলাফলে বড় ধরনের অবনতি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। অনেকেই মনে করছেন, নতুন পাঠ্যক্রম, পাঠ্যপুস্তকের জটিলতা ও মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন এ ফলাফলের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
কুমিল্লা বোর্ডে একজনও পাস করেনি ৯ কলেজে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন পরীক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অংশ নেওয়া সব পরীক্ষার্থীই অনুত্তীর্ণ হয়েছে।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শূন্য পাস পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চারটি কলেজ, নবীনগর উপজেলার জিনোদপুর ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিজয়নগরের নিদারাবাদ ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চাঁনপুর আদর্শ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের ষাইটশালা আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
লক্ষ্মীপুর জেলার তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করতে পারেনি। এগুলো হলো— কামালনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লক্ষ্মীপুর সদরের ক্যামব্রিজ সিটি কলেজ, এবং রামগতির শীবগ্রাম ফজলুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
এ ছাড়া কুমিল্লার লালমাই উপজেলার সুরুজ মেমোরিয়াল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং চাঁদপুরের জীবগাঁও জেনারেল হক হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকেও কেউ পাস করতে পারেনি। এ বিষয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ শামসুল ইসলাম বলেন,“শূন্য পাস পাওয়া প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান, শিক্ষক উপস্থিতি ও একাডেমিক কার্যক্রমে ঘাটতি রয়েছে। আগামী শিক্ষা বর্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বোর্ডের লক্ষ্য শুধু ফল প্রকাশ নয়, শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন। যেসব প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে খারাপ করছে, তাদের নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে।”
কুমিল্লা বোর্ডে ভরাডুবির কারণ ইংরেজি ও উচ্চতর গণিতে ফেল এবার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের এইচ এস সি পরীক্ষায় ভরাডুবির অন্যতম কারণ হচ্ছে ইংরেজি ও
উচ্চতর গণিতে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর ফেল। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় বোর্ড কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. শামছুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাছরীন বলেন, “এ বছর ইংরেজি ও উচ্চতর গণিতে সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে। ইংরেজিতে পাসের হার ৬৫ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং উচ্চতর গণিতে ৬০ দশমিক ৪৮ শতাংশ।”
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে শতভাগ পাশ করেছে ৫টি কলেজ এ বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শতভাগ পাস করেছে, বিপরীতে ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একজনও পাস করেনি।