বাংলাদেশের খাগড়াছড়িতে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সংকটে পড়েছে পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটন; বিশেষ করে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় রাঙ্গামাটির সাজেক পর্যটক শূন্য হয়ে গেছে। কারণ খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে যাওয়ার পথ তুলনামূলক সহজ হওয়ায় পর্যটকরা এ পথেই বেশী সাজেক যান।
সহিংসতার জের ধরে জেলা প্রশাসনের ঘোষণা করা ১৪৪ ধারা এবং আন্দোলনকারীদের 'পর্যটন সাময়িক বন্ধের' ঘোষণার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পাহাড়ি একজন কিশোরী গত ২৩শে সেপ্টেম্বর ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর জেলা প্রশাসন শনিবার থেকে ১৪৪ ধারা ঘোষণা করলে তার আগেই সাজেকে যাওয়া পর্যটকরা আটকে পড়েন।
চলতি সপ্তাহের পুজোর ছুটিকে সামনে রেখে সেখানকার শ খানেক রিসোর্টের সব ফুল বুকড থাকলেও এখন সব বুকিং ক্যান্সেল হচ্ছে বলে জানিয়েছে সাজেক কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশন।
অবশ্য বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে অন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলো খোলা আছে এবং সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় অনেক পর্যটক শুক্রবার সকাল থেকে ওই দুই জেলায় পৌঁছাতে শুরু করেন।
তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র সাজেক থেকে দুই হাজারের বেশী পর্যটকদের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরায় সদরে ফিরে আসতে হয়েছে।
শহরের হোটেলগুলোও ফাঁকা হয়ে গেছে। একটি হোটেলের ব্যবস্থাপক বলছেন, শুক্রবার থেকে আগামী চলতি সপ্তাহে সব বুকিং বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
সেখানকার অধিকাংশ হোটেলেরই একই অবস্থা বলে জানিয়েছেন তিনি।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার অবশ্য বলছেন যে তারা আশা করছেন দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
সাজেকের পরিস্থিতি
খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেক যাওয়া সুবিধাজনক হলেও সাজেক ভ্যালি মূলত রাঙ্গামাটি জেলার সবচেয়ে উত্তরে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্ত সংলগ্ন।
এর উত্তর ও পূর্ব দিকে ভারতীয় সীমান্ত আছে। রুইলুইপাড়া ও কংলাক পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে সাজেক।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়ার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭২০ ফুট ।
আর ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কংলাক পাহাড়-এ কংলাক পাড়া অবস্থিত । সাজেকে মূলত লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসী বসবাস করে ।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার, যা এখন কার্যত বন্ধ হয়ে আছে।
খাগড়াছড়ি ও সাজেকের রিসোর্ট ও হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি সপ্তাহে পূজার ছুটির জন্য তারা অনেক দিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
সাজেক কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশন বলছে, সেখানে এখন মোট ৮৫টি রিসোর্ট আছে।
আর সদরে জেলা প্রশাসনের হিসেবে বেসরকারি হোটেল আছে আরও অন্তত ২০টি। এর বাইরে সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানেও ছুটির সময়গুলোকে পর্যটকরা ভিড় করেন।
খাগড়াছড়ি সদরে সুপরিচিত একটি আবাসিক হোটেল হলো হোটেল গাইরিং। এর ব্যবস্থাপক প্রান্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলছেন, তাদের হোটেল এখন পুরোপুরি খালি।
"চলতি সপ্তাহের সব বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। হোটেল এখন সম্পূর্ণ খালি," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
অন্যদিকে সাজেক কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশনের সহ-প্রচার সম্পাদক মাইনুজ্জামান সরকার বলছেন, সাজেকের ৮৫টি রিসোর্টে মোট ২৬০০-৩০০০ বুকিং ছিলো।
"ফুল বুকড ছিলো। এখন যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যটকরা কেউ বলছেন তারা পরে যাবেন। কিন্তু অনেকেই টাকা ফেরত চাইছেন। পর্যটক শূন্যতার কারণে পূজার বন্ধের ব্যবসা একেবারেই শেষ হয়ে গেছে," বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, সড়ক অবরোধ ও সহিংস পরিস্থিতির কারণে সাজেকে আটকে পড়া প্রায় দুই হাজার পর্যটককে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় শনিবার রাতেই খাগড়াছড়ি সদরে নিয়ে আসা হয়। এরপর শনিবার রাত ও রোববার সকালে এসব পর্যটকদের অধিকাংশই খাগড়াছড়ি ছেড়ে যান।
সাজেক ও খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেই মনে করেন সেখানকার পর্যটনের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা। সূত্র: বিবিসি বাংলা