শিরোনাম
◈ নতুন প্রজ্ঞাপন: বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণও থাকবে কেন্দ্রীয় নজরে ◈ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকায় ছোড়া হয় ৯৫ হাজার রাউন্ড গুলি: তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য ◈ ৪৮তম বিশেষ বিসিএস: ২১ চিকিৎসকের সুপারিশ স্থগিত, দুজনের প্রার্থিতা বাতিল ◈ ভারত ও আওয়ামী লীগের দুজেনেরই ক্ষতি হয়েছে, বললেন মির্জা ফখরুল (ভিডিও) ◈ নতুন নির্দেশনা জারি স্কুল-কলেজে কর্মচারী নিয়োগে ◈ গাজীপুরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্রাউন্ড স্টেশন বসাচ্ছে স্টারলিংক, ইন্টারনেট সেবা দিতে চায় পার্শ্ববর্তী দেশেও ◈ শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ ঠেকাতে দুই অ্যাপ বন্ধের চিন্তা ◈ সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিল দুদক ◈ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিবিরের জয় রাজনীতিতে নবধারা সৃষ্টি করেছে ◈ জাতীয় বেতন কমিশনের ৪ প্রশ্নমালা, মতামত দেওয়া যাবে অনলাইনে

প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৬:৫২ বিকাল
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চট্টগ্রাম বাঁশখালী সমুদ্রতীর রক্ষাবাঁধের কাজ দৃশ্যমান

এম আর আমিন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম বাঁশখালীতে সমুদ্রের তীব্র স্রোত ও জলোচ্ছ্বাস থেকে স্থানীয় জনগণকে রক্ষা করার লক্ষ্যে সাড়ে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ তীরপ্রতিরক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি স্থানীয়দের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে।

পানি ব্যবস্থাপনা ও ভাঙন রোধে তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। চলতি বছর জুনে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার কথা রয়েছে। 

স্থানীয়রা এ প্রকল্পকে কৃষি উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি ব্যবস্থাপনায় একটি বড় অগ্রগতি মনে করছেন উপজেলাবাসী।

প্রকল্পের আওতায় আনোয়ারা উপজেলায় ৫ দশমিক ১৭৫ কিলোমিটার ও বাঁশখালী উপজেলায় ৭ দশমিক ৫১০ স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষা কাজ করতে ডিপিপিটি করা হয়। এর মধ্যে ১১ দশমিক ৫৮৫ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ ও ঢাল সংরক্ষণ এবং ১ দশমিক ১০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ করা হবে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী  উপকূলের মানুষের প্রতি বছর কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি হারাচ্ছেন।বর্ষা মৌসুমে লবণাক্ত পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি।লবণাক্ত পানির কারণে বাড়ছে অনাবাদি জমির পরিমাণও। অন্যদিকে ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের কারণে ঘরবাড়ি ভেঙে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। 

আবাসস্থল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটির (প্রথম পর্যায়) সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। পাউবোর আট সদস্যের সমীক্ষা কমিটি প্রকল্পটির গুরুত্ব তুলে ধরে নতুন স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও পুরনো বাঁধ সংস্কারের জন্য সুপারিশ করে। ২০২৪ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্পের ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় বাঁশখালী উপজেলায় ৭ দশমিক ৫১০কিলোমিটার স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষা কাজ করা হয়।  

জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড চলমান কাজের সাথে সঙ্গতি রেখে বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলার অবশিষ্ট অরক্ষিত অংশ সুরক্ষায় ৮৭৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা,২০২৩ সালে ২৮ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বরাদ্দ অনুমোদন দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাঁশখালীর রায়পুর ও জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের খানখানাবাদ, বাহারছড়া, ছনুয়া, সাধনপুরে প্রকল্পটির কাজ করা হবে।

প্রকল্পের কাজে ধীরগতি কেন জানতে চাইলে,পাউবোর নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন,চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঠিকাদার নির্মাণসামগ্রী পরিবহন সমস্যা প্রয়োজনীয় মেটেরিয়াল নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছাতে বাধার মুখে পড়ছে।বালি উত্তোলনে কোস্ট গার্ডের বাঁধা অনুমতি ও নিয়ন্ত্রণ জটিলতার কারণে বালি উত্তোলন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।ব্লক তৈরির মাঠ সংকট এলাকায় লবণ চাষ চলমান থাকায় ব্লক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মাঠ পাওয়া না যাওয়া।

৫ আগস্টের পর স্থানীয় রাজনৈতিক জটিলতা বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাব ও দ্বন্দ্ব প্রকল্পের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।এ সমস্যাগুলোর কারণে প্রকল্পের সামগ্রিক কাজের ধীরগতির হয়ে পড়েছিলো।

তিনি বলেন,বাঁধ নির্মাণকাজ শুষ্ক বা শীত মৌসুমে করা হয়। বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উপকূলে বাঁধ নির্মাণকাজ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার এবং জিও ব্যাগ দিয়ে রক্ষার কাজ সারা বছরই করা হয়।

প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন,নদী তীর সংরক্ষণ কাজ,বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ ও ঢাল সংরক্ষণের কাজ , প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮.৫০%,অর্থিক অগ্রগতি ৭.৫০%

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড পওর (১) নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন,৫ আগস্ট সরকার পতনের পর স্থানীয় রাজনৈতিক জটিলতা ও দ্বন্দ্বের প্রভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। এতে কাজের অগ্রগতি মারাত্মকভাবে শ্লথ হয়ে পড়ে। তবে বর্তমানে সেই বাধা কেটে গিয়ে প্রকল্প ফের বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে।

তিনি বলেন,নদী ও সাগরতীর সুরক্ষায় প্রকল্পের কাজ এখন খুব দ্রুত গতিতে চলছে।বাঁশখালীতে নতুন বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটির বাঁধের ঢালে স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনসাধারণের বসত বাড়ি, বাজার-ঘাট ও অতি উর্বর আবাদি কৃষি জমিসহ সরকারী-বেসরকারী বহু মূল্যবান স্থাপনা বন্যার কবল হতে রক্ষা পাবে। এলাকার অধিক বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে, সামাজিক সুরক্ষা বলয় সুদৃঢ়করণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার টেকসই উন্নয়ন হবে।

যেহেতু প্রকল্পটি জন্য অর্থ পাওয়া নিয়ে কোনো জটিলতা নেই।  প্রকল্পের যে মেয়াদ রয়েছে, তার মধ্যে শেষ করা যাবে। তিনি আরও বলেন,  বাঁধ নির্মাণকাজ শুষ্ক বা শীত মৌসুমে করা হয়।বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উপকূলে বাঁধ নির্মাণকাজ করা সম্ভব হয় হয় না।এই শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারে  কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিতে চাই। 

বাঁশখালীর বাহার ছড়ার ইউনিয়নের বাসিন্দা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বাঁশখালীর প্রেমেশিয়া থেকে গণ্ডামারা গ্রাম পর্যন্ত ২০১৪ সালে একটি অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। বাঁধটির বেশকিছু জায়গায় ভাঙনের ফলে আবারো লবণপানি প্রবেশ করে কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে।পাশাপাশি ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।তবে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ বর্ষা মৌসুম এলেই আতঙ্কে থাকে।টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে আবার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে।

উল্লেখ : ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয় দক্ষিণ চট্টগ্রাম। এতে হাজার হাজার একর বসতবাড়ি বিধ্বস্ত ও প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়। এ ছাড়া শত শত কিলোমিটার রাস্তাঘাট, সড়ক সেতু কালভার্ট বিনষ্ট হয়, হাজার হাজার একর ফসলের জমি নদী ও সাগরের গর্ভে বিলীন হয়। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন সময়ে নদী ও সাগর উপকূল প্রতিরক্ষা ও শত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড।বিভিন্ন  উপজেলার বিস্তীর্ণ নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সাগর উপকূল সুরক্ষায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রটেক্টিভ ওয়ার্ক ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। সাগর ও নদীর সিংহভাগ এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়