শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বে বাংলাদেশ, প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিন ◈ ডাকসুতে শিবিরের জয়—প্রচারণা, কৌশল নাকি জনপ্রিয়তা? ◈ জুলাই সনদ না মানলে প্রার্থিতা বাতিল- প্রস্তাব জামায়াতের ◈ ভয়াবহ সমুদ্রযাত্রা: ইতালির লাম্পেদুসায় পৌঁছেছে বাংলাদেশিসহ ৫০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী ◈ কাতারে ইসরায়েলি হামলা: পরাশক্তির মিত্র হয়েও বন্ধুহীন দোহা? ◈ মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার করা মানে বাংলাদেশকেই অস্বীকার করা : জামায়াত নেতা আযাদ ◈ মা-বাবার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফরিদা পারভীন ◈ রিজার্ভ বেড়ে ৩০. ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ◈ চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫ সনাতন ধর্মাবলম্বী যোগ দিলেন জামায়াতে ◈ কাঠগড়ায় যে কারনে ছাগলকাণ্ডের মতিউরকে ধমক দিলেন তাঁর স্ত্রীর

প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:৩৩ রাত
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:২৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শরণখোলা রেঞ্জ: অজানা রোমাঞ্চে ভরা সুন্দরবনের স্বর্গীয় দ্বার

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ভ্রমণ

এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবন। যারা এখনো দেখেননি, তারা ছুটির দিনে একবার হলেও বেড়িয়ে আসতে পারেন এই অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভাণ্ডার থেকে।

নদীর স্রোত কেটে এগিয়ে চলে নৌকা, চারপাশে ঘন সবুজ বনভূমি। পানির ধারে দাঁড়িয়ে আছে ম্যানগ্রোভের জটিল শেকড়। কোথাও বানরের হুল্লোড়, কোথাও হরিণের নীরব পদচারণা, আবার কোথাও লোনা পানির কুমিরের সাঁতার। হঠাৎ দূরে ভেসে আসে গর্জন—হ্যাঁ, সেটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। স্বাগতম, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবনে।

প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবনের মধ্যে ৬,৫১৭ বর্গকিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে এ বন বিস্তৃত। ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।

সুন্দরবনের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য

এখানে জন্মেছে সুন্দরী, গরান, কেওড়া, গোলপাতাসহ নানা প্রজাতির গাছ, যা উপকূলকে সুরক্ষা দেয় ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাত থেকে।

এ বনের প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বন বিভাগের ২০২৪ সালের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১২৫। এছাড়া আছে চিত্রল হরিণ, বন্যশূকর, ওটার, লোনা পানির কুমির, অজগর, ফিশিং ক্যাটসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী।

নৌকা ভ্রমণের রোমাঞ্চ

সুন্দরবনের আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে হলে নৌকা ভ্রমণ অপরিহার্য। সরু খাল ও বিস্তৃত নদীর ভেতর দিয়ে ভেসে চলা যেন জীবন্ত চিত্রকর্ম। বিশেষ করে শরণখোলা রেঞ্জে এই অভিজ্ঞতা অসাধারণ।

শরণখোলা রেঞ্জের দর্শনীয় স্থানসমূহ

কটকা
বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। জামতলায় ওয়াচ টাওয়ারে উঠে দেখা যায় সবুজ বনভূমি। পাশেই রয়েছে বিশাল সমুদ্রসৈকত যেখানে বঙ্গোপসাগরের ঢেউ উপভোগ করা যায়। কাছাকাছি হরিণ, বানরের অবাধ বিচরণ ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে।

কচিখালী
সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে রেস্টহাউজ থেকে দেখা যায় সাগরের ঢেউ ও বনের প্রাণচাঞ্চল্য। বিশাল সনঘাসের বাগান বাঘ ও হরিণের বিচরণ ক্ষেত্র। এখানেও রয়েছে সমুদ্রসৈকত।

সুপতি
অভয়ারণ্য এলাকা, যেখানে নদীতে ইরাবতী ডলফিনের দেখা মেলে। গোলপাতার সারি আর খালের সৌন্দর্য অসাধারণ। নিরাপত্তার জন্য বনবিভাগ ও কোস্টগার্ডের ক্যাম্প রয়েছে।

দুবলা ও আলোরকোল
শুঁটকি উৎপাদনের জন্য খ্যাত। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে শুঁটকি মৌসুম। রাস পূর্ণিমায় আলোরকোলে অনুষ্ঠিত রাস উৎসবে লাখো পর্যটকের সমাগম হয়। এখানকার সৈকতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়।

কোকিলমণি ও টিয়ারচর
সুন্দরবনের গভীরতম অংশ। কোকিলমণির মিষ্টি পানির দীঘি বিশেষ আকর্ষণ। টিয়ারচরে হরিণ, বনমোরগ, শুকর, গুঁইসাপ ও অসংখ্য পাখির দেখা মেলে।

যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা

ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে খুলনা, তারপর বাগেরহাটের রায়েন্দা হয়ে শরণখোলা রেঞ্জে পৌঁছানো যায়। চাইলে প্রাইভেট গাড়িতেও যাওয়া সম্ভব।
রায়েন্দায় সরকারি ডাকবাংলো ও বেসরকারি হোটেল রয়েছে। এছাড়া ট্রলার বা লঞ্চে করে সুন্দরবনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘোরা যায়।

অনেক ট্যুর অপারেটর ঢাকা থেকে ৩ দিন ২ রাতের প্যাকেজ ট্যুর পরিচালনা করে, যার খরচ প্রায় ৭-৯ হাজার টাকা।

বন সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ

সুন্দরবন শুধু পর্যটনের আকর্ষণ নয়, উপকূলীয় মানুষের জন্য প্রাকৃতিক ঢাল। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততা ও অবৈধ কার্যক্রম বনটিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থানীয়দের বিকল্প জীবিকা নিশ্চিত না করলে সুন্দরবন রক্ষা করা কঠিন হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়