শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: গাছের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে পেরেক আর তারকাঁটা। এগুলোর ওপর ভর করে গাছে ঝুলছে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও সাইনবোর্ডের বিশৃঙ্খল সমাহার। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার প্রায় প্রতিটি সড়ক এখন বিজ্ঞাপনের দোকানে পরিণত হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রচারণা, চিকিৎসা সেবা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন—সবই ঠাঁই পাচ্ছে জীবন্ত গাছের গায়ে। এমনকি ছোট ছোট চারা গাছও বাদ যাচ্ছে না।
বেদনাদায়ক হলেও সত্য, খোদ চান্দিনা উপজেলা পরিষদের সামনের গাছেও পেরেক ঠুকে ঝোলানো হচ্ছে সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড। অথচ প্রতিদিন এসব গাছের পাশ দিয়েই যাচ্ছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। থানা, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা পরিষদ, কলেজ, ভূমি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরের আশপাশের গাছগুলোও ব্যানার-ফেস্টুনে ভরে গেছে। উপজেলা সদরের সৌন্দর্যবর্ধক গাছগুলোর চিত্র আরও করুণ, যেন সেগুলো বিজ্ঞাপন সাঁটানোর ‘ফ্রি হোর্ডিং বোর্ড’।
সরেজমিন দেখা গেছে, চান্দিনা উপজেলার ছায়কোট-শ্রীমন্তপুর, বরকইট মাধাইয়া, নবাবপুর, কুটুম্বপুর-কালিয়ারচর, মোকামবাড়ি ও বাড়েরা-মাইজখার সড়কের দুই পাশে শত শত গাছে পেরেক ঠুকে প্রচারণা সামগ্রী ঝোলানো হয়েছে। এতে গাছগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে, অনেকে শুকিয়ে যাচ্ছে, আবার অনেক গাছ রোগগ্রস্ত হয়ে ধ্বংসের পথে।
জীবন্ত গাছে পেরেক ঠোকা বন আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় নির্দ্বিধায় চলছে গাছের ওপর এ নির্যাতন। পেরেক গাছের অভ্যন্তরীণ কোষ ধ্বংস করে দেয়, ফলে গাছ ধীরে ধীরে মারা যায়। এটি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
পরিবেশ সচেতনরা বিষয়টিকে “প্রকৃতির বিরুদ্ধে নগ্ন হামলা” আখ্যা দিয়ে বলেছেন, একটি গাছ বড় হতে লাগে ১৫-২০ বছর, অথচ একদিনের প্রচারণার জন্য তা ধ্বংস করা হচ্ছে। এটি শুধু গাছ নয়, মানুষের বিবেককেও হত্যা করছে।
জাতীয় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক মতিন সৈকত বলেন, বৃক্ষ শুধু ছায়া, ফল-ফুল বা আশ্রয় নয়, বরং পরিবেশের অপরিহার্য উপাদান। বৃক্ষ আমাদের অক্সিজেন দেয়, কার্বনডাইঅক্সাইড শোষণ করে। অথচ বর্তমানে চলছে বৃক্ষের ওপর ‘পেরেক নির্যাতন’। এই অপরাধ বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে প্রয়োজন ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা, যাতে প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত হয়।
এ বিষয়ে চান্দিনা উপজেলা সামাজিক বন ও নার্সারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, “গাছে পেরেক ঠুকা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেসব গাছে পেরেক ঠুকে প্রচারসামগ্রী লাগানো হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”