রিয়াদ ইসলাম, ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে: শিমের রাজ্য হিসেবে পরিচিত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় প্রায় তিন দশক ধরে বাণিজ্যিকভাবে শিম চাষ করা হচ্ছে। সাধারণত শীতকালীন সবজি হলেও গত এক যুগ ধরে কৃষকরা আগাম জাতের অটো শিম চাষ শুরু করেছেন। এতে তারা প্রতি বছরই লাভবান হতেন।
কিন্তু এবার অনিয়মিত ও অতিবৃষ্টির কারণে শিমের জমিতে উদ্ভিদ-সংক্রমণকারী ভাইরাসসহ সাদা মাছি ও জাবা পোকা আক্রমণ শুরু করেছে। ফলে চাষিরা তাদের উৎপাদনের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছেন না।
কয়েকজন চাষি জানান, আষাঢ় মাসে আগাম শিমের আবাদ শুরু হয়। কিন্তু এবার বৃষ্টিপাতে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় গাছের গোড়া দুর্বল হয়ে ভাইরাস আক্রমণ করছে। গাছের পাতা বাদামি ও হলুদ হয়ে ঝরে পড়ছে, লতা-ডগা কুঁকড়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে কৃষকরা আক্রান্ত লতা, পাতা ও ডগা কেটে ফেলছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে বেশিরভাগ জমিতে ফুল ফুটেছে, কিছুতে ফলন শুরু হলেও বৃষ্টির কারণে ফুল ঝরে যাচ্ছে। ভাইরাস ও ছত্রাকের আক্রমণে কীটনাশক ছিটানো সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রাবণের শেষ সপ্তাহ থেকে বাজারে আগাম শিম বিক্রি শুরু হলেও এবার প্রতি বিঘা জমি থেকে মাত্র ১০-১২ কেজি শিম পাওয়া যাচ্ছে। অন্য বছরের তুলনায় এ কম উৎপাদন।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবছর ঈশ্বরদীতে শিম চাষের লক্ষ্য ১ হাজার ২৯০ হেক্টর, যার মধ্যে ৮৯০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের অটো শিমের আবাদ হয়েছে। গ্রামগুলো—রামনাথপুর, বেতবাড়িয়া, শেখপাড়া, মুলাডুলি, ফরিদপুর, বাঘহাছলা, সরাইকান্দি, আটঘরিয়া ও শ্রীপুর—পরিদর্শনে দেখা গেছে, শিমের লতা-পাতা ফুলে ভরা, মাঝখানে শিম ঝুলছে, কিন্তু ফলন কম। কৃষকরা গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত, কেউ শিম তুলছেন। তবে ভাইরাস ও ছত্রাকের আক্রমণ তাদের উদ্বিগ্ন করছে।
শেখপাড়া গ্রামের কৃষক নয়ন ইসলাম বলেন, ‘অতিবৃষ্টির কারণে জমিতে ভাইরাস দেখা দিয়েছে। লতা কুঁকড়ে যাচ্ছে, পাতা হলুদ হয়ে পড়ছে। কীটনাশক ছিটাচ্ছি, তাও খুব বেশি ফল হচ্ছে না। এবার শিমের কী হবে, বোঝা যাচ্ছে না।’
বাঘহাছলার কৃষি মফিজ উদ্দিন যোগ করেন, ‘বৃষ্টি ও ভাইরাসের আক্রমণে শিমের ডগা ও লতা শুকিয়ে যাচ্ছে। কীটনাশক দেওয়ার পরও ফলন কম। আমরা কার্যকর সমাধান চাই।’
মুলাডুলি ইউনিয়নের সরাইকান্দি এলাকায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুমানা পারভীন বলেন, ‘২০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে সময়মতো পরিচর্যা করা সম্ভব হয়নি। কিছু গাছে ভাইরাস দেখা যাচ্ছে। সাদা মাছি ও জাবা পোকা কীটনাশক ব্যবহার করলে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ভাইরাস আক্রান্ত হলে গাছ কেটে ফেলতে হবে।’
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মমিন জানান, ‘এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার তেমন কোনো উপায় নেই। কীটনাশক ছিটিয়ে কিছুটা উপকার হতে পারে। তবে যেসব গাছ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, ওই জমিতে দু-তিন বছর শিম চাষ না করা ভালো। দু-তিন বছর বিরতির পর শিম চাষ করলে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।’