শিরোনাম
◈ নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় আসা কে এই সুশীলা কার্কি? ◈ ভারতের সুপ্রিম কোর্টে সতর্কবার্তা: বাংলাদেশ-নেপালে তরুণদের আন্দোলনে সরকার পতনের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি ◈ কাতারের পর এবার ইয়েমেনে হামলা চালাল ইসরায়েল ◈ কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনকে সাময়িক বরখাস্ত ◈ ৯/১১ হামলার ২৪ বছর: নিহতদের স্মরণে যুক্তরাষ্ট্রে শোক ও শ্রদ্ধা ◈ ৩৩ বছর পর ভোট জাকসুতে—ভিপি, জিএস, এজিএসসহ ২৫ পদে লড়ছেন ১৭৭ প্রার্থী ◈ নরসিংদীতে তুচ্ছ ঘটনায় আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা ◈ চিঠি লিখে ভারতকে একহাত নিলেন নেপালের পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী ◈ লাইফ সাপোর্টে ফরিদা পারভীন ◈ এ‌শিয়া কাপ, ৪ ওভার ৩ বল খে‌লে আরব আ‌মিরাত‌কে হারা‌লো ভারত

প্রকাশিত : ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৫৭ রাত
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

টাঙ্গাইলে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, ভয়াবহ ঝুঁকিতে জেলার যুবসমাজ

আরমান কবীর, টাঙ্গাইল: দেশের মধ্যাঞ্চলে টাঙ্গাইল জেলার অবস্থান হওয়ায় এবং সড়ক, নদীপথ ও রেলপথের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক থাকায় মাদক চোরা চালানের নিরাপদ রুট হিসেবে মাদক ব্যবসায়ীরা বেছে নিয়েছে এই জেলাকে। ফলে জেলায় প্রতিনিয়ত নদী, রেল ও সড়ক পথে আসছে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। এই জেলায় জালের মতো ছড়িয়ে আছে নদী। এইসব নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে মাদকের হট-স্পট। 

জেলার নাগরপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নদী সংশ্লিষ্ট এলাকা এবং শহরের কান্দাপাড়া যৌনপল্লী, রাবনা বাইপাস ও আশেকুর বাইপাসকে বেছে নিয়েছে মাদক কারবারিরা। সুযোগ বুঝে মাদক পাচারের জন্য সড়ক পথকে ব্যবহার করছে এইসব মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদক পাচারের রুট হিসেবে এই জেলাকে ব্যবহারের কারণে জেলায় বেড়েছে ব্যাপক মাদকের সরবরাহ। বিশেষ করে উঠতি বয়সের কিশোর-যুবকদের টার্গেট করা হচ্ছে মাদক বিক্রির জন্য। শহরে এখন হাত বাড়ালেই মিলছে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হিরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে মাদক ঢুকছে টাঙ্গাইলের প্রবেশদ্বার খ্যাত এলেঙ্গা, টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস ও আশেকুর এলাকায়। এরপর এই স্থান গুলো থেকেই ঢাকা, গাজীপুরসহ টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিনব পদ্ধতিতে মাদক ছড়িয়ে পরছে । শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় রাতের আধারে অলিগলিতে বিক্রয় হচ্ছে সর্বনাশা এইসব মাদক। আবার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন পয়েন্টে মাদক পৌঁছে যাচ্ছে হাতেহাতে। এমনকি বিশেষ ক্ষেত্রে বাড়িতেও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে মাদক। 

বর্তমানে টাঙ্গাইল শহরের কান্দাপাড়া, বেড়াডোমা, কাগমারা, সাহাপাড়া, শান্তিকুঞ্জ মোড়, মাঝিপাড়া, হাজেরাঘাট, দক্ষিণ কলেজপাড়া (মহিষ খোলা), ধুলেরচর, বইল্লা এলাকায় প্রকাশ্যে মাদকের কেনা-বেচা চলে বলে জানা গেছে। এইসব এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি। 

জানা গেছে, মাদকদ্রব্য পরিবহনে নিরাপদ রুট হিসাবে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলা হয়ে নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র, চর সলিমাবাদ, আটাপাড়া, শাহাজানি চরাঞ্চল, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাতুলি, কাকুয়া, হুগড়া, ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল, গোবিন্দাসী, অর্জুনা, গাবসারা, কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ি যমুনা নদীর চরাঞ্চল মাদক পাচারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদক নির্মূলে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও র‍‍্যাব পৃথকভাবে কাজ করছে। গত সাত মাসে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ ২'শত ৮ কেজি গাঁজা, ৫৭ হাজার ২'শত ৬৫ পিস ইয়াবা, ৭২৫.১০ গ্রাম হেরোইন, ১০৮৫.৩৬ লিটার দেশি-বিদেশি মদ ও ৫৯৫ বোতল ফেনসিডিল জাতীয় মাদক উদ্ধার করেছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা।

এসব মাদকের বেশিরভাগ বড় বড় চালান উদ্ধার ও মাদক কারবারিদের আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। উদ্ধার অভিযানে গত সাত মাসে ৪৭৩ জন মাদক কারবারির নামে ৩৩৮ টি মামলা রজ্জু করেছে জেলা পুলিশ ।  

অপরদিকে, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত সাত মাসে ৩৮ কেজি গাঁজা, ৫ হাজার ৭'শত ৭৪ পিস ইয়াবা, ৮৫.৫ গ্রাম হেরোইন, ৪১.২৫ লিটার মদ, ১০ বোতল ফেনসিডিল, টাপেন্টাডল ৩ হাজার ৪ শত ৮৮ টি ট্যাবলেট, ১০ হাজার লিটার ওয়াশ জাতীয় মাদক উদ্ধার করেছে।অভিযানে মাদক কারবারিদের থেকে নগদ ১৪ লক্ষ ৩১ হাজার টাকাসহ উদ্ধারকৃত মাদকের আনুমানিক বাজার মূল্য ৪৭ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা। উদ্ধার অভিযানে গত সাত মাসে ১৯৭ জন মাদক কারবারির নামে ১৯৬ টি মামলা রজ্জু করেছে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।  

এদিকে র‍‍্যাব ১৪, সিপিসি- ৩ সূত্রে জানা গেছে, গত সাত মাসে ৮২ কেজি গাঁজা, ৪৭৪৯ পিস ইয়াবা, ১৬৭ গ্রাম হেরোইন, ৯৮ লিটার দেশি মদ ও ৪৩১ বোতল ফেনসিডিল জাতীয় মাদক উদ্ধার করেছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। উদ্ধার অভিযানে এই সাত মাসে ৭ জন মাদক কারবারির নামে ৩ টি মামলা রজ্জু করতে সহায়তা করেছে র‍‍্যাব। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই ত্রিমুখী অভিযানে বড় বড় মাদকের চালান উদ্ধার ও মাদক কারবারিদের আটকের পরেও থামছেনা জেলায় মাদকের ভয়াল থাবা। আইনের ফাঁকফোকড়ে আবারো বেরিয়ে আসছে মাদক কারবারিরা। আবার নতুন উদ্যেমে ভিন্নতর কৌশলে শুরু করছে মাদক ব্যবসা। 

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, টাঙ্গাইলবাসীর জন-জীবনের নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি মাদক নির্মূলে প্রতিনিয়ত কাজ করছে জেলা পুলিশ। সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। ধর্মীয় উপাসনালয় মসজিদ-মন্দিরে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে। 

তিনি আরও জানান, মাদক ব্যবসায়িদের চিহ্নিত করে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে । আবার তাদেরকে সুযোগও দিতে হবে সুপথে ফেরার। মাদক ব্যবসায়ির তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করতে হবে। সন্তান কার সাথে মিশে তা খেয়াল রাখতে হবে অভিভাবকদের। পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়। পুলিশের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের মানুষকে মাদক নির্মূলে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই মাদক নির্মূল হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়