এ এইচ সবুজ, গাজীপুর: গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে বিনা ছুটিতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন।
ইতোমধ্যে তার ঠিকানা না পেয়ে বিদ্যালয় কর্তপক্ষ তার হোয়াটস্অ্যাপ নাম্বারে দুই দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও স্পষ্ট করে এর কোন ব্যাখ্যা দেন নি তিনি।
সর্বশেষ সোমবার (২৫ আগষ্ট ) তার বিরুদ্ধে কেন বিধি অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে তাকে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: মোশারফ হোসেন জানান, প্রধান শিক্ষক মো: গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া শারীরিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে ২০২৪ সালের ১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তৎকালীন বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির কাছ থেকে ছুটি নিয়েছেন। তারপর ১ ডিসেম্বর থেকে বিদ্যালয়ে যথারীতি ফিরে আসার কথা থাকলেও তিনি অদ্যাবধি বিদ্যালয়ে আসছেন না এবং কোন শিক্ষক কর্মচারি বা শিক্ষার্থীর সাথে নিজে থেকে যোগাযোগ করছেন না। ফলে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিষয়টি উল্লেখ করে তাকে কয়েক মাসের ব্যবধানে দুই দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও স্পষ্ট করে তিনি এর কোন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না। তাই সোমবার তাকে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর সন্তোষজনক জবাব না পেলে বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ইএফটির মাধ্যমে যার যার একাউন্টে মাসিক বেতন-ভাতার টাকা জমা হওয়ার কারণে গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত তিনি পূর্ণ বেতন-ভাতা ভোগ করেছেন। আগস্ট মাসের ২৩ তারিখের মধ্যে বিদ্যালয় থেকে বেতন-ভাতার সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশনা আসার পরে তার নাম বাদ দিয়ে বেতন-ভাতা সাবমিট করা হয়েছে। গত আট মাস ধরে অবৈধভাবে বেতন-ভাতা ভোগ করলেও তাদের করার তেমন কিছুই ছিলো না। সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহে তার অনুপস্থিতির বিষয়টি ও কারণ দর্শানোর নোটিশের অনুলিপি যথা সময়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল।
ওই বিদ্যালয়ের বর্তমান কমিটির সভাপতি মোঃ মাজহারুল হক জানান, গত বছর ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মারা গেছেন। এখনো ওই পদটি শূন্য রয়েছে। প্রায় ছয় মাস আগে প্রধান শিক্ষক মো: গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া আমেরিকা থেকে তার কাছে ফোনে স্কুল ও এলাকার মানুষের খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং তিনি প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে ফিরে আসার অনুরোধ করেছেন।
তারপর থেকে তিনি আর যোগাযোগ করছেন না। দুইশত ছেলে-মেয়ের জীবনের কথা চিন্তা না করে নিজের সুখের কথা ভেবে একজন প্রধান শিক্ষক আমেরিকায় চলে গেছেন। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়। তার একজন মেয়ে সিটিজেনশিপ নিয়ে আমেরিকায় বসবাস করছেন। তিনি তার মেয়ের কাছে আমেরিকা চলে গেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন।
বেশ কয়েক বছর আগেও তিনি এভাবে তিন-চার মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে ওই সময়ের কমিটির লোকজনকে ম্যানেজ করে চাকরি ফিরে পেয়েছিলেন। আর এখন যেহেতু ইএফটির মাধ্যমে বেতনের টাকা ওনার একাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঢুকে যাচ্ছিল তাই অনেকটা নিশ্চিত মনেই আমেরিকায় বসবাস করছেন।
মো: গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে লেখা একটি পত্রে উল্লেখ করেন, তিনি হার্টের অসুখের চিকিৎসা করাতে বিদেশে অবস্থান করছেন। সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি বলে দেশে ফিরে আসছেন না। বিষয়টিকে যেন ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হয়।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আরিফ সরকার জানান, বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।