আইফোন-প্রেমীদের জন্য অপেক্ষার অবসান হতে আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে অ্যাপলের বার্ষিক কি-নোট ইভেন্ট, যেখানে উন্মোচন করা হবে আইফোন ১৭ সিরিজ। এই ইভেন্টে শুধু আইফোন নয়, আরও বেশ কিছু নতুন পণ্যের ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে—অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ১১ অ্যাপল ওয়াচ আলট্রা ৩, নতুন এয়ারপডস প্রো (সম্ভাব্য)।
এই পণ্যগুলোর ঘোষণাও একই দিন এবং বাজারে আসার তারিখও একই হওয়া প্রায় নিশ্চিত।
সম্ভাব্য সময়সূচি একনজরে
ব্লুমবার্গের বিখ্যাত প্রযুক্তি সাংবাদিক মার্ক গুরম্যানের প্রতিবেদন ও পূর্বের রীতি বিশ্লেষণ করে আইফোন ১৭ ও সংশ্লিষ্ট পণ্যে উন্মোচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিচে তুলে ধরা হলো—
কি-নোটের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হবে: আগামী ২৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) বাংলাদেশি সময় রাত ৯টায় এই আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হবে। যদিও ঘণ্টাখানেক এদিক-সেদিক হতে পারে অথবা আগের দিনও হতে পারে।
কি-নোট ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে: আগামী ৯ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশি সময় রাত ১১টায় এই কি-নোট সম্পন্ন হবে। এটি অ্যাপলের প্রধান কার্যালয় কুপারটিনো থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
প্রি-অর্ডার শুরু হবে: আগামী ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় প্রি-অর্ডার শুরু হবে।
প্রথম রিভিউ প্রকাশিত হবে: আগামী ১৬ বা ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায়। আইফোনের রিভিউ এক দিনে আসবে। যেদিন আইফোন রিভিউ আসবে না, সেদিন থাকবে অ্যাপল ওয়াচের রিভিউ। যদি নতুন এয়ারপডস প্রো উন্মোচিত হয়, তাহলে ১৮ সেপ্টেম্বর তার রিভিউ প্রকাশিত হতে পারে একই সময়ে।
অনসেল (বাজারে আসার দিন) : আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর অ্যাপলের দোকান ও অনুমোদিত বিক্রেতার কাছে পাওয়ার যাবে।
আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্স কনফিগারেশন
আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্সে যে বড় পরিবর্তনটি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়বে, তা হলো এর পেছনের ক্যামেরা ডিজাইন। পূর্বের চেনা চারকোনা ক্যামেরা প্যানেলের পরিবর্তে এবার পুরো ফোনের প্রস্থজুড়ে বিস্তৃত একটি নতুন ডিজাইন দেখা যেতে পারে। এর সঙ্গে ক্যামেরা মানের উন্নতি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে, যদিও এই উন্নয়নগুলো পুরোনো ডিজাইনেও সম্ভব ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন ক্যামেরা ডিজাইনের কারণে ফোনের পেছনের অ্যাপল লোগোর অবস্থানও একটু সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।
এ ছাড়া আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্স হবে আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের চেয়ে কিছুটা মোটা, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে বড় ব্যাটারির থাকার সম্ভাবনা। আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো এর গঠনের দিক থেকে। যেখানে আইফোন ১৬ প্রো সিরিজে ছিল টাইটানিয়াম, সেখানে ১৭ প্রো ম্যাক্সে এবার ব্যবহৃত হতে পারে অ্যালুমিনিয়াম। টাইটানিয়াম সম্ভবত সংরক্ষিত থাকবে আইফোন ১৭ এয়ারের জন্য, যেটি মাত্র ৫ দশমিক ৫ মিলিমিটার পুরু হতে পারে। কারণ এত পাতলা ডিজাইনের জন্য অতিরিক্ত শক্তিশালী ম্যাটেরিয়াল প্রয়োজন।
ডিসপ্লের ক্ষেত্রেও বড়সড় পরিবর্তন আসছে। আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্সে এবার দেখা যেতে পারে অ্যান্টি-রিফ্লেকটিভ ডিসপ্লে, যা আলোর প্রতিফলন অনেকটাই কমিয়ে দেবে এবং ব্যবহারের অভিজ্ঞতা করবে আরও স্বচ্ছ। প্রো মডেল হিসেবে এতে থাকবে প্রোমোশন প্রযুক্তি, যার ফলে স্ক্রিন রিফ্রেশ রেট হবে ১২০ হার্জ, এবং অলয়েজ-অন ডিসপ্লে ফিচারও চালু থাকবে। এবার চারটি মডেলেই ডিসপ্লে সাইজে পার্থক্য থাকছে, যেখানে আইফোন ১৭ এয়ার মডেলটি হবে প্রো ও প্রো ম্যাক্সের মাঝামাঝি সাইজে।
রঙের দিক থেকেও নতুনত্ব থাকছে। আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্সে মোট চারটি রং আসবে বলে আশা করা হচ্ছে—কালো, সাদা, গাঢ় নীল এবং সবচেয়ে আলোচিত উজ্জ্বল কমলা রং। তবে কমলা রংটি অনেকের মতে আসলে তামাটে (কপার) ধাঁচের হতে পারে। এই রঙের বৈচিত্র্য আনা হচ্ছে সম্ভবত নতুন অ্যালুমিনিয়াম ফিনিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতেই।
ক্যামেরার দিকে তাকালে এবার পেছনের তিনটি ক্যামেরাই হবে ৪৮ মেগাপিক্সেল রেজল্যুশনের, যা প্রথমবারের মতো টেলিফটো লেন্সেও যুক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ, মূল ক্যামেরা, আলট্রা ওয়াইড এবং টেলিফটো—সব কটিতেই থাকবে একই উচ্চ রেজল্যুশনের সেনসর, যার ফলে ছবির মান আরও ভালো হবে।
চিপসেট হিসেবে আসছে এ১৯ প্রসেসর। এটি আগের চেয়ে দ্রুতগতির এবং আরও বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
মূল্য নিয়ে যেটুকু জানা গেছে, তা হলো আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্সের দাম এবার ৫০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। অর্থাৎ, নতুন প্রো মডেলটি শুরু হতে পারে ১ হাজার ৪৯ ডলার থেকে। তবে এর সঙ্গেই সম্ভাবনা রয়েছে বেস মডেলে স্টোরেজ বাড়িয়ে ১২৮ জিবি থেকে ২৫৬ জিবি করে দেওয়া হবে, যাতে মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা ন্যায্য হয়। মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, চীন ও ভারতের মতো দেশে আমদানি শুল্ক, যদিও ভারত থেকে সরাসরি আমদানির ক্ষেত্রে কিছু ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কবে আসছে আইওএস২৬-এর চূড়ান্ত ভার্সন সংস্করণ
আইফোন ১৭ সিরিজে প্রি-ইনস্টল থাকা আইওএস২৬ এবার অনেক বেশি আলোচনায়। মার্ক গুরম্যান জানিয়েছেন, সফটওয়্যারটি চূড়ান্ত রিলিজের খুব কাছাকাছি।
গত বছর আইওএস ১৮ চূড়ান্ত সংস্করণ এসেছিল ১৬ সেপ্টেম্বর, কি-নোটের এক সপ্তাহ পর এবং আইফোনের বাজারজাতকরণের চার দিন আগে। সেই ধারাবাহিকতায় আইওএস২৬-এর চূড়ান্ত সংস্করণ রিলিজ ১৫ সেপ্টেম্বর বা সম্ভবত ১৬ সেপ্টেম্বর আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে সম্প্রতি একটি কি-নোট আমন্ত্রণপত্র ‘ফাঁস’ হয়েছে। তবে প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা একে নিঃসন্দেহে ভুয়া বলেই মনে করছেন। যদিও তারিখ ও সময় ঠিক আছে, তবে বাকি উপস্থাপনা অ্যাপলের স্বভাববিরুদ্ধ। একাধিক খসড়া তৈরি করার মতো হাস্যকর দাবি করা হয়েছে, যা অ্যাপলের রুচির সঙ্গে যায় না। তথ্যসূত্র: ফোর্বস