শিরোনাম
◈ আমনুরা রেলওয়ে জংশনে তেলবাহী বগি লাইনচ্যুত, রহনপুর-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ◈ আসিয়ানে যোগ দিতে সময় লাগবে, তবে আমরা হাল ছাড়ব না: ড. মুহাম্মদ ইউনূস ◈ ডলারের পরিবর্তে রুপির প্রসারে ভারতের বড় পদক্ষেপ ◈ ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুটের হোতা বাহার-রজন গা ঢাকা, প্রশাসনের নীরবতায় বছরে শতকোটি টাকার চাঁদাবাজি ◈ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব হচ্ছেন রেহানা পারভীন ◈ অপরাধ দমনে দেশজুড়ে জোরালো হচ্ছে যৌথ বাহিনীর অভিযান, অস্ত্র-মাদকসহ গ্রেপ্তার ৭০ ◈ মাত্র ৫০ ডলারে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে চুরি হওয়া ব্যক্তিগত তথ্য ও পাসওয়ার্ড, বিতর্কে Farnsworth Intelligence ◈ ফারুকীর অস্ত্রোপচারসহ সার্বিক পরিস্থিতি জানালেন তিশা ◈ হায়দরাবাদে দেহ ব্যবসা থেকে বাংলাদেশি কিশোরী উদ্ধার, ফের আলোচনায় আন্তদেশীয় মানব পাচার চক্র ◈ বিদ্যালয়ে ঢুকে সহকারী শিক্ষককে মারধর করে বাজারে ঘোরানো, বিএনপি-ছাত্রদলের কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৫১ দুপুর
আপডেট : ১৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

একই পরিবারের চারজনের করুণ মৃত্যু : ঋণের বোঝা ও অভাবের শিকার

ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি : ​রাজশাহীর পবা উপজেলায় ঋণের বোঝা আর অভাবের কারণে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্ম দিয়েছে একটি পরিবার। শুক্রবার দুপুরে বামনশিকড় গ্রাম থেকে একই পরিবারের চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ঋণের চাপ সইতে না পেরে প্রথমে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করে এবং পরে নিজে আত্মহত্যা করেন মিনারুল ইসলাম (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

​মৃতরা হলেন মিনারুল ইসলাম, তার স্ত্রী মনিরা খাতুন (৩১), ছেলে মাহিম (১৪) এবং মেয়ে মিথিলা (৩)। মতিহার থানা পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। এর আগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে।

মিনারুলের ঘর থেকে দুটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়, যেখানে তিনি এই মর্মান্তিক ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। প্রথম চিরকুটে তিনি লিখেছেন, এই ঘটনার জন্য কেউ দায়ী নয় এবং পুলিশ যাতে নিরীহ কাউকে হয়রানি না করে, তাই তিনি সবকিছু লিখে যাচ্ছেন। চিরকুটে তিনি স্বীকার করেছেন যে প্রথমে তিনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন, তারপর নিজে আত্মহত্যা করেছেন।

​দ্বিতীয় চিরকুটে তিনি তার এমন চরম পদক্ষেপের পেছনের কারণ বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, 'আমি একা মরে গেলে আমার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না। আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না।'

পরিবারের সদস্যরা জানান, মিনারুল রাতে বাড়ি ফিরে এই ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। পরিবারের কেউই কিছু টের পাননি। সকালে মিনারুলের মা আনজুরা বেগম ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে তার বাবা রুস্তম আলী ঘরের টিনের ওপর উঠে মিনারুলের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। পরে ঘরের দরজা কেটে ভেতরে ঢোকার পর বাকি তিনজনের লাশও পাওয়া যায়।

​মিনারুলের চাচি জানেহার বেগম জানান, মিনারুলের বেশকিছু কিস্তি ছিল এবং কিস্তির লোকেরা প্রায়ই তাকে খুঁজতে আসত। কৃষি কাজ, ট্রাকের হেল্পার এবং মাছ ধরার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেও মিনারুল অভাবের সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না। তিনি আরও জানান, মিনারুল খুব অল্পতেই রেগে যেতেন এবং রাগ করে কাজ ছেড়ে দিতেন, যার ফলে তাদের অভাব আরও বেড়ে যেত।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আলী মুর্শেদ জানান, দুদিন আগে মিনারুল তার কাছে গিয়েছিলেন এবং চাল কেনার জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা চেয়েছিলেন। চেয়ারম্যান মিনারুলকে দুই হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, মিনারুল জুয়া খেলতেন বলে দেনার জালে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বছর তিনেক আগে তার বাবা জমি বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ শোধ করে দিলেও মিনারুল আবার ঋণ নিয়েছিলেন।

​পরিবারের সদস্যদের কান্নায় পুরো এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। মিনারুলের মা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, 'ও জান! এই কইরি গেলি ক্যানরে বাপ। আমি মাটি বেইচি আবার দিতুক রে জান। আমার তো কিছুই থাইকল না।' এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঋণের চাপ এবং চরম দারিদ্র্যের করুণ পরিণতি তুলে ধরছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়