মিজান লিটন, চাঁদপুর: চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে স্টাফদের খাবারের সাথে চেতনা নাশক দ্রব্য মিশিয়ে এমভি ওয়েস্টিন-১ লাইটার জাহাজ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূলম্যানের অপরিশোধিত চিনি চুরির চেষ্টার ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে নৌ পুলিশ। এই ঘটনায় মামলা হওয়ার পর তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
রোববার (১৭ আগস্ট) বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ। এই ঘটনায় চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন মোনায়েম সুগার মিলের মালিক পক্ষের পাহারাদার নু কুমার ত্রিপুরা (৪৩)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর নৌ থানার উপ-পরিদর্শক এসআই বিল্লাল আল-আজাদ জানান, ৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে চোর চক্রের সদস্য তরিকুল ও নুরুজ্জামাল নেশাজাতীয় দ্রব্য নিয়ে এমভি সি ওয়েস্টিন-১ জাহাজে ওঠে। এরপর জাহাজের মাস্টার আইয়ুব মৃধা এবং গ্রীজার ইমরান শেখকে নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানায়।
৫ আগস্ট বিকেলে নাস্তা বানানোর সময় মাস্টার আইয়ুব মৃধা বাবুর্চিকে কিচেন থেকে অন্য কাজে পাঠিয়ে দেন। সুযোগে নুরুজ্জামাল কিচেনে গিয়ে ছোলার ভেতর সাদা পাউডার (চেতনানাশক দ্রব্য) মিশিয়ে আসে। তরিকুল বাইরে পাহারা দিচ্ছিল।
সেদিন বিকেল প্রায় ৫টার দিকে জাহাজটি চাঁদপুর সদরের হরিনাঘাট এলাকায় পৌঁছালে বাবুর্চি সবার জন্য ছোলা ও মুড়ি দেয়। সেটা খেয়ে জাহাজের লস্কর, গ্রীজার, সুকানীসহ প্রায় ১০ জন স্টাফ এবং মামলার বাদী অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
এরপর তরিকুল ফোনে মেহেদী হাসান মুন্না ওরফে আকাশকে খবর দেয় এবং জাহাজের অবস্থান জানায়। পরে সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে আকাশসহ আরও ৫ জন অজ্ঞাতনামা লোক ট্রলার নিয়ে জাহাজে আসে। তারা মাস্টার আইয়ুব মৃধার সঙ্গে আলোচনা করে, কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় শেষে তারা আবার ট্রলার নিয়ে পালিয়ে যায়।
এরপর জাহাজের গ্রিজার মো. ইমরান শেখ মালিক পক্ষকে বিষয়টি অবগত করেন। মালিকপক্ষ তাঁদের অবস্থান জেনে নৌ-পুলিশের সহায়তা নেয়। নৌ-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জাহাজের স্টাফদের চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়।
গ্রেপ্তার আসামীরা হলেন-জাহাজের মাস্টার পটুয়াখালীর আইয়ুব মৃধা (৪৮), বাগেরহাটের মংলা থানার মেহেদী হাসান মুন্না প্রকাশ আকাশ (২৭), মো. তরিকুল (২৭), নুরুজ্জামাল (৩২), মো. মানিক হাওলাদার (২৭), চাঁদপুর শহরের মো. শরীফ মির্জা (৪৩), মো. মজিবুর রহমান সর্দার (৬৪) ও বাচ্চু বেপারী (৫৭)।
তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন ৮ আগস্ট জাহাজা থেকে মাষ্টার আইয়ুব মৃধাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে পরদিন ৯ আগস্ট আদালতে সোপর্দ করা হয়। এরপর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৪ আগস্ট রাতে মঙ্গলা থানা এলাকা থেকে তরিকুল, নুরুজ্জামান ও মানিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের নিয়ে অভিযান চালিয়ে ১৫ আগস্ট সন্ধ্যার ফরিদগঞ্জ থেকে আটক করা হয় মেহেদী হাসান মুন্নাকে। এরপর ১৫ আগস্ট দিনগত রাত ১টার দিকে চাঁদপুর শহরে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় বাচ্চু ব্যাপারী, মজিবুর রহমান ও শরীফ মির্জাকে। ১৬ আগস্ট বাকি ৭ আসামীকে আদালতো সোপর্দ করা হয়।
গ্রেফতার আসামীদের মধ্যে মেহেদী হাসান মুন্না, তরিকুল, নুরুজ্জামাল ও বাচ্চু ব্যাপারী ১৬ আগস্ট চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-০৪ এর বিচারক এর নিক ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় জবানবন্দি প্রদান করে।
নৌ পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার আসামীরা পেশাদার চোর ও সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নৌ পথে চলাচলরত বিভিন্ন মালবাহী জাহাজে বিভিন্ন কৌশলে মূল্যবান মালামাল চুরি করে আসছে।
বাদী নু কুমার ত্রিপুরা মামলার অভিযোগে উল্লেখ করেন, জাহাজের মাস্টার আইয়ুব মৃধার যোগশাজশে জিএমএস ইন্টারন্যাশনাল জেনারেল মেরিন সার্ভেয়ারের জিনিসপত্র লোড-আনলোডের এস্কর্ট পার্টির পদে কর্মরত পরিচয়ে দুজন এবং পরে অজ্ঞাতনামা আরও দুজন জাহাজে ওঠেন।
এর আগে গত ৩ আগস্ট চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার বন্দর সংলগ্ন বহির্নোঙ্গর (আউটার) থেকে আব্দুল মোনায়েম সুগার মিলের স্বত্তাধিকারী আবুল খায়ের কোম্পানির ১ হাজার ২০০ মেট্টিক টন অপরিশোধিত চিনি জাহাজে লোড করে। যার অনুমান মূল্য ১৩ কোটি ২০ বিশ লাখ টাকা। ৪ আগস্ট জাহাজটি কুমিল্লা জেলার মেঘনা আব্দুল মোনায়েম সুগার মিল এবং নরসিংদী জেলার পলাশ থানার দেশবন্ধু চিনি কল লিমিটেডের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।