শিরোনাম
◈ আমনুরা রেলওয়ে জংশনে তেলবাহী বগি লাইনচ্যুত, রহনপুর-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ◈ আসিয়ানে যোগ দিতে সময় লাগবে, তবে আমরা হাল ছাড়ব না: ড. মুহাম্মদ ইউনূস ◈ ডলারের পরিবর্তে রুপির প্রসারে ভারতের বড় পদক্ষেপ ◈ ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুটের হোতা বাহার-রজন গা ঢাকা, প্রশাসনের নীরবতায় বছরে শতকোটি টাকার চাঁদাবাজি ◈ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব হচ্ছেন রেহানা পারভীন ◈ অপরাধ দমনে দেশজুড়ে জোরালো হচ্ছে যৌথ বাহিনীর অভিযান, অস্ত্র-মাদকসহ গ্রেপ্তার ৭০ ◈ মাত্র ৫০ ডলারে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে চুরি হওয়া ব্যক্তিগত তথ্য ও পাসওয়ার্ড, বিতর্কে Farnsworth Intelligence ◈ ফারুকীর অস্ত্রোপচারসহ সার্বিক পরিস্থিতি জানালেন তিশা ◈ হায়দরাবাদে দেহ ব্যবসা থেকে বাংলাদেশি কিশোরী উদ্ধার, ফের আলোচনায় আন্তদেশীয় মানব পাচার চক্র ◈ বিদ্যালয়ে ঢুকে সহকারী শিক্ষককে মারধর করে বাজারে ঘোরানো, বিএনপি-ছাত্রদলের কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

প্রকাশিত : ১৮ আগস্ট, ২০২৫, ০২:১১ রাত
আপডেট : ১৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুটের হোতা বাহার-রজন গা ঢাকা, প্রশাসনের নীরবতায় বছরে শতকোটি টাকার চাঁদাবাজি

মানবজমিন প্রতিবেদন: সিলেটের ভোলাগঞ্জ কোয়ারিতে হাজার হাজার কোটি টাকার পাথর লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা বাহার আহমদ রুহেল ও রজন মিয়ার বিরুদ্ধে। গত এক বছর ধরে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে এবং পুলিশ ও বিজিবির নামে চাঁদাবাজি করে তারা এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি সাদা পাথর লুটের ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনায় এলে তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন।

প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দাপট

ভোলাগঞ্জ কোয়ারিতে বাহার-রজনের আধিপত্য শুরু হয় ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট থেকে। গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রশাসনের সহযোগিতা পেয়ে তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহার আহমদ রুহেল এবং কোম্পানীগঞ্জ যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক রজন মিয়ার বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা প্রশাসনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কোয়ারিতে একচ্ছত্র দাপট দেখিয়েছেন।

সাদা পাথর লুটের 'মহাযজ্ঞ'

বিশেষ করে সাদা পাথর লুটের ঘটনায় তাদের ভূমিকা স্পষ্ট। দীর্ঘদিন ধরে বিজিবির কড়াকড়ির কারণে এই লুটপাট বন্ধ থাকলেও, বাহার-রজন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে শ্রমিকদের দিয়ে বিজিবির ওপর কয়েক দফা হামলা চালান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা ভিডিও ছড়িয়ে বিজিবিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়। এর ফলে বিজিবি নীরব হয়ে পড়লে শুরু হয় সাদা পাথর লুটের ‘মহাযজ্ঞ’।

শ্রমিকদের মাধ্যমে জানা গেছে, লুট করা পাথরের নৌকা থেকে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং বড় ভলগেট থেকে হাজার হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে। এই অর্থ থেকে পুলিশ ও বিজিবির নামে বিপুল অঙ্কের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করা হতো। দুই সপ্তাহে প্রায় ২০০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে অন্তত ২০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করা হয়েছে।

লুটের টাকায় গাড়ি-সম্পত্তি

স্থানীয়দের দাবি, মাত্র এক বছরে বাহার ও রজন কোয়ারি লুটপাট ও চাঁদাবাজি করে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সম্প্রতি বাহার ১৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি দামি গাড়িও কিনেছেন। তাদের সিন্ডিকেটে স্থানীয় যুবলীগ ও যুবদলের একাধিক নেতা জড়িত ছিল। লাঠিসোঁটা নিয়ে তারা কোয়ারিতে মহড়া দিতো এবং বালুচরে বাহারের নিজস্ব অফিস থেকেই গোটা কোয়ারি নিয়ন্ত্রণ ও টাকার ভাগ-বাটোয়ারা করা হতো।

অভিযোগ সত্ত্বেও প্রশাসনের নীরবতা

বাহার-রজনের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জমা পড়লেও সিলেট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার নীরব ছিলেন। এমনকি অভিযোগের কোনো তদন্তও হয়নি। স্থানীয় শ্রমিক দল নেতা ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করলেও উল্টো তাদের হয়রানি করা হয়েছে।

মামলা ও গ্রেপ্তার, মূল হোতারা পলাতক

সাদা পাথর লুটের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হলে প্রশাসন সক্রিয় হয়। ইতিমধ্যে কোম্পানীগঞ্জ থানায় ১৯টি মামলা হয়েছে এবং ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত বাহার ও রজন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা তিন দিন আগে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন এবং বর্তমানে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাদাপাথর লুটের ঘটনায় আলোচনা শুরু হওয়ার সময়ও তারা এলাকাতেই ছিলেন।

এদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকে ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানিয়েছেন, পাথর লুটের ঘটনায় ১৯টি মামলা হয়েছে এবং ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, প্রতি সপ্তাহে যৌথ টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং পুলিশ কোনো লাইনম্যানকে প্রশ্রয় দেয় না।

তবে ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের মতে, বাহার-রজনের সিন্ডিকেটের সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল, যার কারণেই দীর্ঘ এক বছর ধরে এমন লুটপাট চলেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়