শিরোনাম
◈ ভারতের নতুন বিধিনিষেধে স্থলপথে চার পাটপণ্যের রপ্তানি বন্ধ ◈ যে ৩ শ্রেণীর মানুষের জন্য অনলাইন ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক নয় ◈ মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ◈ সংস্কারের অভাবে মোংলা-খুলনা মহাসড়ক এখন মরণফাঁদ: বাড়ছে জনদুর্ভোগ ও দুর্ঘটনা ◈ বেহাল দশা বাংলা‌দেশ দ‌লের, ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের অবস্থান ১০ নম্ব‌রে ◈ ইতালি গমনেচ্ছুদের জন্য সুখবর: বাংলাদেশ-ইতালি অভিবাসন চুক্তি স্বাক্ষরিত, বৈধ পথে কর্মী প্রেরণার দ্বার উন্মোচিত ◈ ভারতে আটক ৫ বাংলাদেশি, বললেন ‘আমরা শেখ হাসিনার দল করতাম’ ◈ বিএনপির ফজলুর রহমানকে নিয়ে যা বললেন সারজিস ◈ খায়রুল হকের জামিন শুনানি: ‘গণতন্ত্র ধ্বংসকারী’ মন্তব্যে এজলাস কক্ষে হট্টগোল-হাতাহাতি ◈ মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:১৩ বিকাল
আপডেট : ১১ আগস্ট, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফের মাদকের দখলে কুমিল্লা,বাড়ছে কারবারির দৌরাত্ম্য"

শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা : কুমিল্লা শহরের শাসনগাছা রেলস্টেশন। ট্রেন থামলেই যাত্রীদের কানে ভেসে আসে একটি কর্কশ ডাক“চাইলে মাল আছে!”‘মাল’মানে কী? অনুসন্ধানে জানা গেল,এটি স্থানীয়ভাবে ইয়াবা,গাঁজা,ফেনসিডিলের ‘কোড ওয়ার্ড’। শুধু মাদক মেলে না— মেলে একদম হাতের নাগালে! চাইলেই পাওয়া যায়,দিনে কিংবা রাতে। 

শুধু শাসনগাছা নয়,কুমিল্লা মহানগরের ২৭টি ওয়ার্ড এবং সদর দক্ষিণ, বুড়িচং, চান্দিনা, দেবিদ্বার, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, ব্রাহ্মণপাড়া ও মুরাদনগরসহ অন্তত ১৩টি উপজেলায় সক্রিয় রয়েছে শতাধিক প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী। কেউ প্রকাশ্যে ব্যবসা চালায়,কেউ আবার প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায়।

নগরীর সাত এলাকায় ছদ্মবেশে অনুসন্ধান করে জানা যায় :‘টাকা দিলেই মাদক’ পাওয়া যায়:-গত ২৫ জুলাই রাতে ছদ্মবেশে অনুসন্ধান করি আমরা। কুমিল্লা শহরের পদুয়ার বাজার, ধর্মসাগরপাড়, নতুন চৌধুরীপাড়া, কোটবাড়ি, কান্দিরপাড়, তালপুকুরপাড় ও টমছমব্রিজ এই সাত এলাকাতেই হাত বাড়ালেই মিলেছে গাঁজা,ইয়াবা কিংবা ফেনসিডিল। 

পদুয়া বাজারে মহিউদ্দিন নামের এক তরুণ মাদকসেবী জানায়, “ভাই, এক ঘণ্টায় যা চাইবেন, তাই পাবেন। শুধু টাকা থাকলেই হলো।”তার ভাষ্যমতে,গাঁজার পুরিয়া ১০০ টাকা,ইয়াবা ৩০০ টাকা, আর ফেনসিডিলের বোতল ৯০০–-১২০০ টাকা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব এলাকায় আওয়ামী লীগের গত দেড় দশকের বেশি সময়ে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা হলেও দলের প্রভাবশালী অনেকে জড়িত ছিলেন কারবারে। সরকারের পতনে চক্রের মূল হোতারা আত্মগোপনে চলে গেলেও নতুন অনেকে যুক্ত হয়েছে মাদক সিন্ডিকেট। এদিকে কুমিল্লা দক্ষিণ কুমিল্লার সদর দক্ষিণ, দেবিদ্বার,লালমাই ও বুড়িচংয়ে রাজত্ব করছে ‘সিপন গ্রুপ’।

তারা ভারতীয় সীমান্ত ব্যবহার করে ফেনসিডিল ও গাঁজা আনে। অন্যদিকে, মুরাদনগর ও ব্রাহ্মণপাড়ায় ‘রুহুল আমিন সিন্ডিকেট’ সক্রিয়, যারা সরবরাহ করে ইয়াবা ও আইস।

স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান,“তারা নিজেদের মধ্যে অঞ্চল ভাগ করে নিয়েছে। কেউ কারও এলাকায় হস্তক্ষেপ করে না। অলিখিত মাদক চুক্তি চলছে!”সদর দক্ষিণের এক মাদক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“মাসে মাসে টাকা দিতে হয় থানায়। পুলিশ চাইলে ধরেও, আবার ছেড়ে দেয়। ধরা পড়লে দুই দিন লুকাই, আবার শুরু করি।”এই অভিযোগ যাচাই করতে কথা হয় সংশ্লিষ্ট থানা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে।

জেলা গোয়েন্দা সংস্থা( ডিবি) একজন সাব–ইন্সপেক্টর বলেন,“সবাইকে ধরা সম্ভব না। অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবও থাকে। কিছু ব্যবসায়ী বড় নেতাদের ‘ক্যাশ কাও’ হিসেবে কাজ করে।”কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকে নিয়মিত গাঁজা সেবন করে। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা কিংবা আইসে।

নগরীর বাগিচাগাও এক অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলে শুরুতে বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করত।চোখ লাল হয়ে যেত। টাকা চুরি করত।পরে জানতে পারি,সে ইয়াবায় আসক্ত।”শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশে থাকা হোস্টেল, মেস ও ছাত্রাবাসে রাতভর চলে ‘মাদক পার্টি’। 

অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেক সময় তা দেখেও না দেখার ভান করে। এদিকে ২০২৪ সালে র‌্যাব-১১ ও কুমিল্লা জেলা পুলিশ ৮৫টি যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে ৩৭০ জন মাদক কারবারিকে। উদ্ধার করা হয় ২৮ হাজার ইয়াবা, ৪৫০ বোতল ফেনসিডিল ও ১২০ কেজি গাঁজা। তবে ৯০ শতাংশ অভিযুক্ত কয়েক মাসের মধ্যেই জামিনে ছাড়া পায়। অনেক মামলার চার্জশিটই দেওয়া হয় না। 

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নজির আহমেদ খান বলেন,“মাদক মামলার তদন্তে গড়িমসি হয়। আবার রাজনৈতিক চাপেও তদন্ত থেমে যায়।” 

এ ব্যাপারে কুমিল্লা বিজিবি ১০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ জানান, দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি সদা তৎপর রয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি 'মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স' নীতি বাস্তবায়ন এবং চোরাচালান প্রতিরোধে সীমান্তে বিজিবির গোয়েন্দা তৎপরতা ও আভিযানিক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময় চোরাকারবারিটা বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে মাদক নিয়ে আসছে বাংলাদেশ,আমরা আমাদের অভিযানের কৌশল পরিবর্তন করেছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়