শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: বিসিক সড়ক কুমিল্লা নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক সড়ক। নগরীতে বর্ষার জলাবদ্ধতা কমলেও এ সড়কের জলবদ্ধতার সমস্যা বার মাস লেগেই থাকে। প্রতিনিয়ত এ সড়কে চলাচল করে পণ্যবাহী যানবাহন। ময়লা আবর্জনায় বন্ধ হয়ে আছে ড্রেন। এ বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে জনগণের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। প্রায় অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কুমিল্লার সড়কের জলাবদ্ধতার সমস্যার পরিত্রাণ পাচ্ছে না জনগণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিসিকের প্রধান সড়কের মাঝখানে পানি জমে রয়েছে। ময়লা পানি মাড়িয়ে পার করা হচ্ছে মালামাল। চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। হঠাৎ যে কেউ দেখলেই মনে করবে মুক্ত জলাশয়। এদিকে বিসিকে প্রবেশের পথেই চোখ পড়লো সড়কের দুই পাশে ড্রেনগুলো সরু হয়ে গেছে। ময়লা আবর্জনা জমে পানি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় বাতাসে ভাসছে দুর্গন্ধ। এছাড়া বিসিকের ভেতরে দুই একটি সড়কের মেরামত কাজ করলেও প্রধান সড়কসহ অধিকাংশ সড়কের অবস্থা বেহাল।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন কুমিল্লা সূত্র জানায়, ৬৫ বছর আগে ৫৪ দশমিক ৩৫ একর জায়গায় স্থাপিত হয় বিসিক কুমিল্লা অঞ্চল। ওই সময় প্লট সংখ্যা ছিল ১৫৫টি। এর মধ্যে ৬টি প্লটে প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন এবং ওয়াটার ট্যাংক স্থাপন করা হয়। বাকি ১৪৯টি শিল্প প্লটে ১৪২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন দেওয়া হলেও এর মধ্যে বন্ধ ও রুগ্ণ রয়েছে ৮টি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে পুরোদমে সচল রয়েছে ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮ হাজারের অধিক মানুষ কাজ করছে।
এই শিল্প এলাকায় রয়েছে একাধিক টেক্সটাইল মিল, স্টিল মিল, অ্যালুমিনিয়াম, সিরামিক, সিলভার, প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কারখানা, মৎস্য জাল, আয়ুর্বেদিক পণ্য তৈরির কারখানা, ছাপাখানা, আটা ও পাটজাত পণ্য তৈরির কারখানা এবং বেকারিসহ বেশ কয়েকটি ফুড কারখানা।
বিসিকের মালিক ও কর্মচারীদের দাবি, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কুমিল্লা বিসিক ও ছায়া বিতানসহ অশোকতলার রাস্তা-ঘাট, ড্রেনসহ পুরো এলাকার বেহাল দশা। এ অবস্থায় মালামাল আনা নেওয়াসহ চলাফেরায় চরম কষ্ট হয়। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এ দুর্ভোগ থেকে আমরা স্থায়ীভাবে পরিত্রাণ চাই।
অশোকতলা এলাকার বাসিন্দা শুভ বলেন, ১২ মাসই এ সড়কে পানি থাকে। এ বৃষ্টির দিনেতো আর কথাই নেই। হাঁটুপানি মাড়িয়ে বাসায় যেতে হয়। এটাই আমাদের এলাকার বড় বদনাম। কবে আমাদের এই দুঃখ শেষ হবে।
বিসিক থেকে প্রতিদিন পাউরুটি বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করেন জলিল মিয়া। তিনি পানিতে দাঁড়িয়ে বলেন, রাস্তা-ঘাটের যে অবস্থা, কারখানা থেকে মাল নিয়ে বের হতে জীবনটা শেষ। এত কষ্ট কুমিল্লা সিটির অন্য কোনো রাস্তায় হয় না। আর এখান থেকে আমরা খাবারের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যাই। এগুলোর সুরক্ষার জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা জরুরি ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কুমিল্লার উপমহাব্যবস্থাপক মো. মুনতাসীর মামুন বলেন, বিসিকের ভেতরে কয়েকটি সড়কের কাজ এরইমধ্যে সংস্কার করেছি। সিটি করপোরেশন এ অর্থ বছরে সড়কগুলোর কাজ শুরু করবে বলে আমাদের জানিয়েছেন। অশোকতলা রেললাইনের পাশ দিয়ে ডাকাতিয়া খালে পানি সরানোর জন্য তারা ড্রেনের কাজও শুরু করবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মামুন বলেন, উন্নয়নের কাজের অংশ হিসেবে বিসিকের সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ এ অর্থবছরে পাশ হয়েছে। আশাকরি শিগ্রই কাজ শুরু হবে।