"The Statesman" পত্রিকায় প্রকাশিত একটি মতামতধর্মী প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের আকস্মিক পতনের কারণ এবং এর তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটির মূল বিষয়বস্তু:
স্বৈরাচারী শাসনের পরিণতি: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনকাল ধীরে ধীরে একটি একদলীয় স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছিল। বিরোধী দলগুলোকে কঠোরভাবে দমন করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা, এবং গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তার সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছিল।
উন্নয়নের আড়ালে জনদুর্ভোগ: সরকার উন্নয়নের ব্যাপক প্রচারণা চালালেও এর সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। এর আড়ালে ছিল ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশছোঁয়া দাম এবং জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে পুঞ্জীভূত হচ্ছিল হতাশা ও ক্ষোভ।
আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ: কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনই ছিল এই গণ-অভ্যুত্থানের মূল কারণ। সরকার যখন এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংসভাবে দমন করার চেষ্টা করে এবং বেশ কয়েকজন ছাত্র নিহত হয়, তখন সেই বিক্ষোভ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে ছিল না, বরং সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও তরুণরাই ছিল এর চালিকাশক্তি।
শেখ হাসিনার ভুল হিসাব: শেখ হাসিনা জনগণের সম্মিলিত ক্ষোভ এবং শিক্ষার্থীদের দৃঢ়তাকে অনুমান করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন। তিনি ভেবেছিলেন, অতীতের মতো এবারও বলপ্রয়োগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে, কিন্তু তার সেই হিসাব ভুল প্রমাণিত হয়।
নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা: চূড়ান্ত পর্যায়ে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়ায় শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত হয়ে যায়। এটি প্রমাণ করে যে, জনগণের সম্মিলিত শক্তির কাছে রাষ্ট্রযন্ত্রও অসহায় হয়ে পড়তে পারে।
উপসংহার:
প্রতিবেদনটি শেষ করা হয়েছে এই বলে যে, শেখ হাসিনার পতন বিশ্বের অন্যান্য স্বৈরাচারী শাসকদের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। এটি দেখিয়ে দেয় যে, শুধুমাত্র দমন-পীড়ন বা উন্নয়নের প্রচারণার মাধ্যমে অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত জনগণের ইচ্ছাই চূড়ান্ত শক্তি।