শিরোনাম
◈ ফিলিস্তিনকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দিতে ব্রিটিশ সরকারকে ৬০ জন এমপির চিঠি ◈ সায়মা ওয়াজেদের ছুটি জবাবদিহির পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ : প্রেসসচিব ◈ চাঁদপুরে খতিবকে হত্যাচেষ্টা অভিযুক্ত আসামীকে জেলহাজতে প্রেরণ ◈ বালিয়াডাঙ্গীতে মির্জা ফখরুলের ভাইয়ের গাড়িবহরে হামলা, আহত ৪ ◈ এবার রাজধানীর মিরপুরে ‘৫ কোটি টাকা’ না পেয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-গুলি ◈ আটকের গুজব উড়িয়ে দিলেন সাবেক মন্ত্রী এমএ মান্নান, বললেন ‘ভালো আছি, বাসায় আছি’ ◈ মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যাকাণ্ড: ‘আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না, আমি ফাঁইসা গেছি’, গ্রেপ্তার রবিনের দাবি ◈ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০% মূল্য সংযোজন চাহিদা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জ : বিজিএমইএ সভাপতি ◈ সাকিবের জন্য জাতীয় দলের দরজা সবসময় খোলা, বললেন বিসিবির মিডিয়া বিভাগের প্রধান ◈ অন্যায়কারী যেই হোক, প্রশ্রয় নয়: মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তারেক রহমানের

প্রকাশিত : ১২ জুলাই, ২০২৫, ০৮:১১ রাত
আপডেট : ১৩ জুলাই, ২০২৫, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ ভবন, আশঙ্কায় ঐতিহ্যবাহী রেশমশিল্প

জনবল ও অর্থ সংকটে ধুঁকছে কুমিল্লার ময়নামতি রেশমকেন্দ্র

শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: কুমিল্লার ঐতিহাসিক ময়নামতি রেশমকেন্দ্র আজ জনবল ও অর্থ সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় ধুঁকছে। রেশম ডিম ও গুটি উৎপাদনে কিছু সফলতা থাকলেও স্থাপনার জীর্ণ দশা ও উৎপাদন ব্যবস্থার দুরবস্থায় এ কেন্দ্র কার্যত টিকে আছে ভর্তুকির ওপর।

রেশম উন্নয়ন বোর্ডের "সাড়া জেগেছে রেশম চাষে, দেখে যা ভাই ঘরে এসে"—এই স্লোগানের বিপরীতে মাঠপর্যায়ে বাস্তবতা ভিন্ন। বিনামূল্যে ডিম ও প্রশিক্ষণ দিয়েও কৃষকদের চাষে আগ্রহী করা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর সরকারকে জনবল ও উৎপাদন ব্যয় নির্বাহে মোটা অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

সমৃদ্ধ ইতিহাস, করুণ বর্তমান: ১৯৬২ সালে লালমাই পাহাড়ি অঞ্চলের ৪৮ বিঘা জমিতে ময়নামতি রেশমকেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। তুঁত পাতার উপযোগী লাল মাটি ও আবহাওয়ায় চাষ সহজ হওয়ায় এখানে রেশমশিল্প বিকশিত হয়েছিল। বর্তমানে ২৮ বিঘা জমিতে তুঁত চাষ হয়, বাকি অংশে রয়েছে অফিস, গবেষণাগার, ডরমিটরি ও আবাসিক ভবন।

কিন্তু এখন এসব ভবন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ। একসময় গুটি থেকে সুতা তৈরির যন্ত্রপাতি থাকলেও তা আর নেই।

অপর্যাপ্ত জনবল, অস্থায়ী শ্রমিকের ভরসায় চলা কার্যক্রম: বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের এই কেন্দ্রে বর্তমানে স্থায়ী জনবল মাত্র দু’জন—একজন ম্যানেজার ও একজন টেকনিক্যাল সুপারভাইজার। অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন একজন সহকারী পরিচালক। দৈনিক ৪৫০ টাকা মজুরিতে ৮ জন শ্রমিক তুঁত চারা রোপণ, পরিচর্যা ও রেশম কীট লালনে নিয়োজিত।

উন্নত জাতের রেশম কীট, তবু আগ্রহ নেই চাষিদের: এখানে উৎপাদিত পাঁচটি উন্নত জাতের রেশম কীটের মধ্যে রয়েছে এফটিবি ও বিএনএম। একটি ডিম ফুটলে প্রায় ৪০০ কীট পাওয়া যায়। ১০০ ডিমের সরকারি দাম ২০৫ টাকা, যা থেকে গড়ে ৪০–৫০ কেজি গুটি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি গুটি ৬০০–৭০০ টাকায় বিক্রি হয়।

প্রতিটি উন্নতমানের শাড়ি তৈরিতে মাত্র ২ কেজি গুটি যথেষ্ট। এখানকার কীটের সরবরাহ চলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রেশম ইউনিটে।

উৎপাদন ও বিতরণ চিত্র: ম্যানেজার হায়দার আলী জানান, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৩৫ হাজার এবং ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ৩১ হাজার ডিম উৎপাদন করে চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৩ লাখ টাকা। চাষিদের এই সহযোগিতা সত্ত্বেও মাঠপর্যায়ে রেশম চাষের প্রসার ঘটছে না।

লাখ টাকার আয়, দশ লাখ টাকার ব্যয়: গত দুই অর্থবছরে এ কেন্দ্র থেকে সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে মাত্র এক লাখ টাকা। অথচ মাসিক বিদ্যুৎ বিলই ৮–১০ হাজার টাকা। স্থায়ী জনবল, অস্থায়ী শ্রমিক, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা খরচসহ বার্ষিক ব্যয় ছাড়িয়েছে ১০ লাখ টাকা।

নীতি সংস্কারের দাবি: রেশমশিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি ও নকল সুতার আগ্রাসনে এ শিল্প হুমকির মুখে। লাভজনক করতে হলে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে নীতিমালায় কঠোরতা আনতে হবে। প্রান্তিক ও ভূমিহীন চাষিদের জন্য প্রয়োজন সহায়তামূলক উদ্যোগ ও বাজারজাতকরণে সহায়তা।

প্রশাসনের ভাষ্য: ঢাকার আঞ্চলিক রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক ও ময়নামতির সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক বলেন, “দেশে রেশমের চাহিদা থাকলেও বাজারে বিদেশি সুতা ও কৃত্রিম সুতার আধিপত্য রয়েছে। সরকার এ শিল্পের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে উদ্যোগ নিচ্ছে। সীমিত জনবল ও বাজেট সত্ত্বেও ময়নামতি ও অন্যান্য কেন্দ্র কিছু সফলতা দেখিয়েছে।”

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়