শিরোনাম
◈ আবারও শাহবাগ অবরোধ করেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহতরা ◈ গেজেট প্রকাশের পরই আ. লীগের নিবন্ধন নিয়ে সিদ্ধান্ত: সিইসি ◈ লড়াই রা‌তে, জিত‌লে বা‌র্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন ◈ পরিবারে মা হচ্ছেন এক বিস্ময়কর প্রতিষ্ঠান, খালেদা জিয়াকে নিয়ে আবেগঘন বার্তা তারেক রহমানের ◈ পাকিস্তানের শক্ত জবাবেই যুদ্ধবিরতি করতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয় ভারতঃ সিএনএনের সাংবাদিক (ভিডিও) ◈ মেসির গোলে কাজ হয়‌নি, বড় ব্যাবধা‌নে হে‌রে গে‌লো ইন্টার মায়ামি ◈ জনরোষ ঠেকাতে লুঙ্গি-গেঞ্জি-মাস্ক পরে বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ, গোপনে তুলে দেওয়া হয় বিমানে ◈ রেকর্ড হ্যাটট্রিকসহ সরলথের চার গোল, জিত‌লো অ্যাথ‌লে‌তি‌কো মা‌দ্রিদ ◈ আরব আমিরাতের বিরু‌দ্ধে দুই ম‌্যা‌চের ‌টি- টো‌য়ে‌ন্টি খেল‌বে বাংলাদেশ  ◈ ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় চীনা জে-১০সি জেটের উত্থান: রাফায়েল ভূপাতিত, বিশ্বজুড়ে চীনা অস্ত্রপ্রযুক্তির চাহিদা বৃদ্ধি

প্রকাশিত : ১১ মে, ২০২৫, ০৩:৫১ রাত
আপডেট : ১১ মে, ২০২৫, ১২:০৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আলোচিত র‍্যাব কর্মকর্তার আত্মহনন: অবশেষে মুখ খুললেন স্ত্রী সুস্মিতা সাহা (ভিডিও)

আলোচিত র‌্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহার আত্মহননের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে ফরিদপুরে র‌্যাব কর্মকর্তা পলাশের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জানা গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য। পলাশ সাহার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা দাবি করছেন, তার শাশুড়ি তাকে সংসার করতে দেয়নি, বরং ছেলেকে ছোট বাচ্চার মতো নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইতেন।   

সুস্মিতা সাহা বলেন, ‘আমার স্বামী নির্লোভী ছিল। ও সৎ ছিল। ও আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করসে। কিন্তু ও অনেক বেশি মাতৃভক্ত ছিল। আমি সেটাকে অ্যাপ্রিসিয়েটও করতাম। কারণ আমিও তো একদিন মা হব। আমার সন্তানও তাহলে বাবার মতো হবে। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে যখন দেখলাম আমার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমি খুব আদর যত্ন করতাম ওকে, ওর মাকে। কিন্তু ওরা না আমাকে বুঝত না। আমার স্বামী আমাকে প্রচুর ভালোবাসত। কিন্তু ওই যে একটা বয়সের গ্যাপ, ওই জন্য ও আমাকে বুঝত না।’ 

তিনি বলেন, ‘বিয়ের ৬-৭ মাস পর থেকে আমি বলা শুরু করি যে, কী, কোনো সমস্যা বা তোমার মেন্টালিটি এমন কেন? তোমারই তো বউ আমি। তুমি পছন্দ করে আনসো, আমি যেহেতু আসি নাই। তাহলে তোমার কি কখনও ইচ্ছে করে না যে বউকে নিয়ে একটু থাকি বা বউকে একটু আলাদা করে সময় দেই। ও বলত যে না, বউকে আলাদা করে টাইম দেয়ার কি আছে? মা আছে, আমি আছি, তুমি আছ- যা করব একসাথে করব। বউকে তো রাতে ভালোবাসা যাবে, রাতে তো একসাথে ঘুমাই, তখনই ভালোবাসব। আমি বলতাম, বউকে মানুষ শুধু রাতে ঘুমানোর জন্য ভালোবাসার জন্য বিয়ে করে? বড় কোনো শখ, আহ্লাদ কিচ্ছু থাকে না?’

তিনি আরও বলেন, ‘ওর (পলাশ) মা আমাকে সংসার করতে দেয়নি। আমার স্বামী আমার হাতের রান্না ভালো খাইত এ জন্য আমার শাশুড়ি একপর্যায়ে আমার রান্নাই বন্ধ করে দিলো। আমার শাশুড়ির ইথিক্স ছিল, ছেলে বিয়ে করবে বউ তাড়াতাড়ি বাচ্চা হয়ে যাবে। বউ সংসার আর বাচ্চা নিয়ে থাকবে, আর সে তার ছেলেকে নিয়ে থাকবে। আমার শাশুড়ি আমার স্বামীর যে ৩৫ বছর বয়স হলো ওকে নিজ হাতে খাইয়ে দিত। যেদিন মারা গেল ৭ মে, ওইদিন সকালেও ওর মা ওকে খাইয়ে দিসে।’ 

পলাশ সাহার স্ত্রী আরও বলেন, ‘এই আড়াইটা বছর ধরে আমিও দেখতেসি যে, একটা বাচ্চা ছেলেকে যেভাবে তার মা হ্যামপার করে ঠিক ওভাবে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে ও কি পোশাক পরবে, ও কি পোশাক কিনবে, ও কোনটা পরে অফিসে যাবে না যাবে, ও কখন কি খাবে না খাবে, কখন ঘুমাবে, কখন ঘুম থেকে উঠবে, সবটা ওর মা নিয়ন্ত্রণ করত। আর আমার স্বামী সেটা মেনে নিত। তো আমার একটা পর্যায়ে গিয়ে মনে হলো, এটা তো খুব প্রক্সি। এক পর্যায়ে আমি আইডিন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছিলাম যে, আমি তো ওর বউ। কিন্তু আমার অস্তিত খুঁজে পাচ্ছিলাম না ওদের মাঝখানে। তারা মা-ছেলে দুজনে কথা বলত, আমি যখন ওদের মাঝে যেতাম তখন থেমে যেত। এটা কেমন ব্যবহার? আমি তো ওর বউ।’

‘ঘরের মধ্যে আমরা মাত্র ৩টা মানুষ ছিলাম। এই আড়াইটা বছরে ওর মা সকালে নাস্তা তৈরি করত। আমাকে করতে দিত না। শুধু ওর জন্য করত। আমি আমার শাশুড়িকে অনেক যত্ন করেছি প্রথম ৬-৭টা মাস। আমি ভাবতাম, আমার শাশুড়ি হয়ত বুঝবে একদিন। তাই স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে সব করতাম। কারণ আমার স্বামী তো ওর মাকে খুব ভালবাসে। আমি ভাবতাম, আমি যদি আমার শাশুড়িকে ভালবাসি তাহলে তো সে আরও ভালো থাকবে। ওই জন্য ৬-৭ মাস আমি অনেক করেছি। আমার শাশুড়ি মায়ের নখ কাটা থেকে শুরু করে তার চুলে তেল দেয়া, গোসল করানো সব করেছি। তার কোন কাপড়টা ভালো লাগতেসে না, তাকে কোন কাপড় পরলে ভালো লাগবে সব ঠিক করে দিতাম। আমি বরঞ্চ আমার স্বামীকে বলতাম যে, তোমার মায়ের শাড়ি লাগবে কি না জিজ্ঞাসা করো, যা লাগবে এনে দাও’- যোগ করেন তিনি।  

সুস্মিতা সাহা বলেন, ‘ঢাকার শান্তিনগরে আমরা সেলটেক রহমান ভিলার ২০ তলা বিল্ডিংয়ের ১৮ তলায় ছিলাম। ওখানে মাস্টার বেডের সাথে অ্যাটাচ বাথরুম, বেলকুনি ছিল ওই ফ্লাটে। তো আমার স্বামীড় সাথে যেহেতু বাসা দেখেছি, আমার স্বামীকে আমিই প্রথমে বললাম কি মা যেহেতু গ্রাম থেকে আসতেসে, কখনও শহরে থাকেন নাই মাকেই মাস্টার বেডটা দাও, তাহলে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সহজ হবে। আমি খুলনা শহরে বড় হয়েছি, আবাসিক এলাকায় ছিলাম। ওখানে স্কুল জীবন শেষ করে যখন বাবার বাসায় আসলাম ৭-৮ মাস পর আমার বিয়ে হয়ে যায়, তখন আমি সারদা সুন্দরী কলেজে পড়তাম। তো আমার স্বামীকে বলার পর সে বলল কি, তুমি এইটুকু মেয়ে, তোমার তো উচিৎ ছিল বলা যে মাস্টার বেডের রুমটা তুমি নিবা। সেখানে তুমি নিজে থেকেই মাকে দিতে বলতেসো। বাহ, ভালো। আমিও আশা করছিলাম, মাকে মাস্টার বেডটা দিব। ঠিক আছে, তাহলে মাকে মাস্টার বেডটা দিব। তো মাকে মাস্টার বেডটা দেয়া হলো, আমরা থাকতাম আরেকটা রুমে।’ 

স্বামীর সঙ্গে সংসার জীবন নিয়ে তিনি আরও বলেন, 'আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোয়ালিটির কিচ্ছু ছিল না। সকালে মায়ের ডাকে ওর ঘুম ভাঙত। ঘুম থেকে উঠেই মা মা করত। আমার সেটা প্রথমে ভালোই লাগত যে, আচ্ছা ঠিক আছে ও ওর মাকে ভালোবাসে, বাইরের কাউকে তো ভালবাসতেসে না। ওর মা ওর জন্য রান্না করত খিচুড়ি, যেটুকু ও খেত। তখন থেকে আস্তে আস্তে আমার মনের মধ্যে ব্যথা অনুভব শুরু হল যে, এটা কেমন ব্যবহার। ও অফিসে যাওয়ার পরে আমি আমার ও শাশুড়ির জন্য নাস্তা তৈরি করতাম আলাদা করে। মা যদি তরকারি রান্না করত, তাহলে শুধু ওর জন্য করত। আমরা তো বাসায় ৩টা মানুষ, আরেকটু বাড়িয়ে দিলে কিন্তু ৩ জনের হয়ে যেত। কিন্তু ওর মা কখনও করত না। আমাদের স্বামী-স্ত্রীকে কখনও একসঙ্গে কথা বলতে দিত না। আমার স্বামী তো প্রথমে পুলিশে ছিল, পরে র‍্যাবে আসছে। তো আমার স্বামী যতটুকু সময় বাসায় থাকার সুযোগ পেত, ততটুকু সময় আমার শাশুড়ির সঙ্গে থাকত। আমি কিছু মনে করতাম না। ভাবতাম, ওর মা আসছে গ্রাম থেকে, ওর মাকে তো এত সময় পায় নাই। সংসার কেবল শুরু করেছি, একদিন না একদিন হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু একদিন না, সেটা দিনের পর দিন হতে থাকল। আমার স্বামীর মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসল না। ওর মাকে ভক্তি, মাকে ভালবাসতেসে, মাকে সময় দিচ্ছে আমাকে আর সময় দিচ্ছে না।'                           

এর আগে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় র‌্যাব কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পলাশ সাহা ‘আত্মহত্যা’ করেন। গত বুধবার (৭ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় র‌্যাব- ৭ এর নগরের বহদ্দারহাট ক্যাম্পে নিজ অফিস কক্ষে তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়। পলাশ সাহার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। পারিবারিক কলহের জেরে পলাশ আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে ধারণা পুলিশ কর্তৃপক্ষের। তার সুইসাইড নোটে লেখা আছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।’ উৎস: চ্যানেল২৪ ও জাগোনিউজ24

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়