শিরোনাম
◈ আমনুরা রেলওয়ে জংশনে তেলবাহী বগি লাইনচ্যুত, রহনপুর-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ◈ আসিয়ানে যোগ দিতে সময় লাগবে, তবে আমরা হাল ছাড়ব না: ড. মুহাম্মদ ইউনূস ◈ ডলারের পরিবর্তে রুপির প্রসারে ভারতের বড় পদক্ষেপ ◈ ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুটের হোতা বাহার-রজন গা ঢাকা, প্রশাসনের নীরবতায় বছরে শতকোটি টাকার চাঁদাবাজি ◈ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব হচ্ছেন রেহানা পারভীন ◈ অপরাধ দমনে দেশজুড়ে জোরালো হচ্ছে যৌথ বাহিনীর অভিযান, অস্ত্র-মাদকসহ গ্রেপ্তার ৭০ ◈ মাত্র ৫০ ডলারে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে চুরি হওয়া ব্যক্তিগত তথ্য ও পাসওয়ার্ড, বিতর্কে Farnsworth Intelligence ◈ ফারুকীর অস্ত্রোপচারসহ সার্বিক পরিস্থিতি জানালেন তিশা ◈ হায়দরাবাদে দেহ ব্যবসা থেকে বাংলাদেশি কিশোরী উদ্ধার, ফের আলোচনায় আন্তদেশীয় মানব পাচার চক্র ◈ বিদ্যালয়ে ঢুকে সহকারী শিক্ষককে মারধর করে বাজারে ঘোরানো, বিএনপি-ছাত্রদলের কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

প্রকাশিত : ০৫ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:৩১ বিকাল
আপডেট : ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আসছে ইয়াবা, সুপারী ও গরু, যাচ্ছে সার,চাল, জালানী তেলসহ নিত্য পণ্য!

হাবিবুর রহমান সোহেল,কক্সবাজার : কক্সবাজার ও বান্দরবানের মাঝখানে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী দুই ইউনিয়ন রামু উপজেলার গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া। এই দুই ইউনিয়নসহ বৃহত্তর গর্জনিয়ার, ঈদগড়, বাইশারী, দৌছড়িসহ নাইক্ষ্যংছড়ি ইউনিয়নের প্রায় ১ কোটি মানুষের প্রধান বাজার গর্জনিয়া। সপ্তাহে দুই দিন সেখানে বসে হাট। আর এই হাট ঘিরে বেড়েছে সীমান্তে চোরাচালান। এখানে প্রতিনিয়ত আসছে গরু, সুপারী ও মরণ নেশা ইয়াবাসহ নানা মাদক। আর সীমান্ত পেরিয়ে যাচ্ছে, সার, চাল, নিত্যপণ্য এবং জ্বালানি তেল। 

হাটকে ঘিরে গরু চোলাচালানের কথা স্বীকারও করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে অধরা। আর এসব পাচার কাজে সরাসরি নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়ে সহায়তা করছে স্থানীয় পুলিশের কিছু বিপদগামী সদস্য ও কতিত জনপ্রতিনিধি। যার কারণে পাচারকারীরা নিরাপদে এসব অপকর্মে জড়িত বলছেন সচেতন মহল। চোরাচালান রোধে ২০০৫ সালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট দিয়ে মিয়ানমারের গবাদিপশুর করিডর চালু করা হয়েছিল। রাজস্ব দিয়ে এই করিডরের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা গরু-মহিষ আনতেন। তবে ২০২২ সালে দেশীয় খামারিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার করিডর বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, ফুলতলি, কচ্ছপিয়া, লেবুছড়ি, আলীকদম ও কক্সবাজারের উখিয়ার সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালান শুরু হয়। 

চোরাই পথে আসা গরুর বৈধতা দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে গর্জনিয়া বাজার। রামু উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর সীমান্তে গরু-মাদক পাচার ও সীমান্ত পেরিয়ে আসা সিংহভাগ গরু বিক্রি হয় এই হাটে, ছড়িয়ে যায় সারা দেশে। এই বাজারের প্রাথমিক ইজারা ছিল আড়াই কোটি, চোরাই গরুর কারণে ডাক উঠেছে ২৫ কোটি টাকা। সীমান্ত দিয়ে গরুর সঙ্গে আসছে মাদক, যাচ্ছে নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেল। গেল বৃহস্পতিবার এ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক ছোট-বড় ট্রাকে গরু বোঝাই করা হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী জলিল, হাকিম ও লোকমান বলেন, হাজার দশেক টাকা কমে বার্মিজ গরু কেনা যায়। এ জন্য এক ট্রাক (১২-১৪টি) গরু নিতে পারলে লাখখানেক টাকা লাভ হয়। তবে পথে অনেক ঝুঁকিও আছে। অনেক সময় গরু লুটের ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন হাজারো গরু ঢুকছে। বেশির ভাগ গরু গর্জনিয়া বাজারে তোলা হয়। তবে কিছু গরু পাহাড়ি পথ বেয়ে অন্যান্য বাজারেও নেওয়া হয়। চোরাই পথে আসা এসব গরু স্থানীয় হিসেবে চালাতে চোরাকারবারিরা ইউনিয়ন পরিষদের কাগজপত্রও ব্যবহার করছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২৪ সালে ৩ লাখের বেশি গরু মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এসব গরু গর্জনিয়া বাজার ঘুরে কক্সবাজার, ঈদগাঁও, চকরিয়া হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গরু পাচার ও ব্যবসায় জড়িত একাধিক ব্যক্তি জানান, সীমান্ত পাড়ি দেওয়া প্রতি গরু ঈদগাঁও বাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে ১৯ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। এ ছাড়া চোরাকারবারিরা সশস্ত্র পাহারায় গরুর সঙ্গে ইয়াবা ও আইসের (ক্রিস্টাল মেথ) বড় চালানও নিয়ে আসছে। 

মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কম দামে গরুর সঙ্গে ইয়াবা ও আইসের চালান পাঠায়। বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে খাদ্যসামগ্রী, জ্বালানি ও ভোজ্যতেল নিয়ে যায়। এর আগে জান্তা বাহিনীর সদস্যরাও একইভাবে চোরাচালানে সহযোগিতা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রামু উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গর্জনিয়া ইউনিয়নে ২৬টি খামারে ৪ হাজার ৩৮৮টি এবং কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে ৩১টি খামারে ৫ হাজার ৭৬২টি গরু পালন করা হচ্ছে। এই সব গরু এই হাটে বিক্রি করলেও ইজারার টাকা তোলা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বড় অঙ্কের টাকায় বাজার ইজারা নিয়ে আলোচনায় এসেছেন যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম। 

দরপত্র অনুযায়ী প্রতি মাসে এই বাজার থেকে ২ কোটি টাকার ওপরে আদায় করতে হবে। মিয়ানমার থেকে গরু না এলে এত টাকা উশুল করা সম্ভব কি না-জানতে চাইলে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'কেউ মিয়ানমারের গরু বাজারে এনে বেচলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা তো চোরাই গরুর ব্যবসায় জড়িত নই।' গ্রামীণ একটি বাজারের ইজারামূল্য এত বেশি ওঠা নিয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, সম্ভবত সারা দেশের মধ্যে গর্জনিয়া বাজার সর্বোচ্চ দামের ইজারা। নিলামগ্রহীতাদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় সর্বোচ্চ মূল্যে বাজার ইজারা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। মিয়ানমারের চোরাই গরু ছাড়া এই ইজারামূল্য তোলা সম্ভব কি না-জানতে চাইলে ইউএনও মো. রাশেদুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

এদিকে, গরু ও ইয়াবা পাচারকে কেন্দ্র করে রামু উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও কাউয়ারখোপ এলাকায় আলোচিত শাহীন ডাকাত ও আবছার বাহিনীসহ ততোধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এসব গ্রুপের মধ্যে প্রায় সময় সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ঈদের দিন সন্ধ্যায় রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের চৌধুরী খামারপাড়ায় মিয়ানমার থেকে অবৈধ পথে আনা শতাধিক গরু পাচারকে কেন্দ্র করে দুই বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। এতে এক বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ নবী (৪২) নিহত হয়েছিলো।

গরু চোরাচালানকে কেন্দ্র করে অপরাধ বাড়ার সত্যতা স্বীকার করেন রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমন কান্তি চৌধুরী বলেন, 'কোনটি মিয়ানমারের আর কোনটি দেশি গরু, তা পরখ করা কঠিন। পাচারকারীদের হাতে গরু বেচাকেনার কাগজপত্র থাকে। তারপরও চোরাচালান হওয়া পণ্য বা গরু ধরতে তাঁদের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।' নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসরুরুল হক বলেন, চোরাকারবারিরা গরুগুলো ছাড়িয়ে নিতে নানা অপকর্মের আশ্রয় নেয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক কর্মকর্তা জানান, 'সীমান্তের এপার-ওপারের চোরাকারবারিরা সুযোগ বুঝে গরু নিয়ে আসছে। লোকালয়ে ঢুকে পড়লে স্থানীয়রা চোরাই গরু নিজেদের দাবি করে অনেক সময় বিজিবির সঙ্গেও চ্যালেঞ্জ করে। এতে কিছু করার থাকে না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়