সনত চক্র বর্ত্তী , ফরিদপুর: ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের ব্যয়বহুল লিগামেন্ট প্রতিস্থাপন চিকিৎসা চালু হয়েছে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক ট্রমা এবং আর্থোস্কপি বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাঃ মুহাম্মদ এ হাসান এই উদ্যোগ নিয়েছেন। হাঁটু প্রতিস্থাপন চালু হাওয়ায় ফরিদপুরের চিকিৎসাসেবা আরও একধাপ এগিয়ে গেল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার সময় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই অপারেশন শুরু হয়। প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপী অপারেশন করে লিগামেন্ট প্রতিস্থাপন করা হয়। সৌদি আরবে গিয়ে ফুটবল খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে হাঁটুর লিগামেন্ট ছিড়ে যায় গোপালগঞ্জের রুবেল হোসেনের। পরে তিনি ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা সৌদি আরবে না করতে পেরে দেশে ফিরে আসেন।
এরপর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসে পরিচয় হয় ডাঃ মুহাম্মদ এ হাসানের সঙ্গে। তিনি রুবেলের অপারেশন করতে সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে হাসপাতালের অর্থোপেডিক ট্রমা এবং আর্থোস্কপি বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাঃ মুহাম্মদ এ হাসান জানান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো হাঁটুর লিগামেন্ট ছিড়ে যাওয়া রোগীর কাঁটা ছেড়া না করে অর্থোসকপি মেশিনের মাধ্যমে অপারেশনের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হলো। এর আগে সরকারিভাবে অত্র অঞ্চলে এই ধরনের অপারেশন হতো না। আশা করা যায় বৃহত্তর ফরিদপুর সহ আশেপাশের অনেক জেলার ভুক্তভোগী রোগীরা উপকৃত হবেন এখন থেকে।
তিনি বলেন এখন থেকে নিয়মিতভাবে হাঁটুর ব্যয়বহুল লিগামেন্ট ছিড়ে যাওয়া রোগীর অপারেশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা হবে। তিনি বলেন দেশের কয়েকটি জায়গায় এই অপারেশন করা হয় ফরিদপুর তার সাথে আরেকটি নাম এখন থেকে যুক্ত হলো। আশা করা যায় ভুক্তভোগী রোগীরা বিনামূল্যে এখন থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়মিত ভাবে এই চিকিৎসা সেবা পাবেন। তিনি আরো বলেন, এর জন্য যে আর্থোস্কপি মেশিনটি লাগে এই মেশিনটি আমি নিজে কিনে এনেছি। সেটি দিয়েই এই অপারেশন সম্পূর্ণ করলাম।
এদিকে রুবেলের পিতা ইকরাম মোল্লা জানান, আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করছি ডাক্তার হাসান সাহেবের জন্য। তার কারণেই আজকে এত বড় একটি অপারেশনের কাজ সম্পন্ন হল। এই অপারেশনের মাধ্যমে আমার ছেলের যে পঙ্গুত্ব ছিল সেটি আর থাকবে না এটি ভাবতেই আমার ভালো লাগছে।
রুবেলের বোন আঁখি আক্তার জানান, আমরা চার ভাই, এক বোন। ভাইদের মধ্যে রুবেল ছিল সবার ছোট। আদরের এই ভাইয়ের পঙ্গুত্ব নিয়ে খুব বেশি টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম। হয়তো কোনদিনই আমার ভাই ঠিক মতো হাঁটতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহর কাছে অশেষ মেহেরবানী হাসান স্যারের কারণে আজকে আমার ভাইয়ের অপারেশন সম্পন্ন হলো। আশা করছি সামনের দিনে আমার ভাই ঠিক মতো হাঁটতে পারবে।
এদিকে ফরিদপুরের এই ধরনের চিকিৎসা প্রথম শুরু করায় ডঃ মুহাম্মদ এ হাসানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মুহাম্মদ আব্দুল গনি আহসান, সহযোগী অধ্যাপক ও ইউনিট প্রধান ডা. সৈয়দ অসিফ উল আলম, ডা. মোঃ শাহীন জোয়ারদার সহ অন্যরা। উল্লেখ্য, অর্থোপেডিক সার্জারিতে হাঁটুসহ বিভিন্ন জয়েন্টের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে আর্থোস্কপি ও আর্থোপ্লাস্টি। ফরিদপুর সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সরকারি- বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানেই বিশেষায়িত এ চিকিৎসা খুব একটা নেই। এর আগে ফরিদপুরে ছিলো না কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। ছিড়ে যাওয়া হাঁটুর লিগামেন্ট জোড়া লাগানো অপারেশন চিকিৎসা অত্যান্ত ব্যয়বহুল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জামও অপ্রতুল। ফলে অধিকাংশ মানুষ সুচিকিৎসার অভাবে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়। আশা করা হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষ এখন থেকে এই অপারেশনের মাধ্যমে উপকৃত হবেন।
আপনার মতামত লিখুন :