ফয়সাল চৌধুরী, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে নিখোঁজের প্রায় ৩৪ ঘণ্টা পরে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সদরুল হাসানের (৪০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে উপজেলার শিলাইদহ খেয়াঘাট এলাকা থেকে ভাসমান মরদেহটি উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। এ ঘটনায় নিখোঁজ এএসআই মুকুল হোসেনকে উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকারী ও কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সাব অফিসার ফিরোজ আহমেদ। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে ভাসমান অবস্থায় সদরুলের মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। অপর পুলিশকে উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
নিহত সদরুল হাসান পাবনার আতাইকুলা থানার কাজিপুর গ্রামের আব্দুল ওহাবের বড় ছেলে ও কুমারখালী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ছিলেন। নিখোঁজ মুকুল হোসেন মেহেরপুরের কালাচাঁদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের ছেলে ও কুমারখালী থানার সরকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) ছিলেন।
আহতরা হলেন- কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম, কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছানোয়ার হোসেন ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন।
এর আগে দুর্বৃত্ত জেলেদের হামলায় সোমবার ভোরে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের শ্রীখোল এলাকায় পদ্মা নদীতে পুলিশের দুই এএসআই নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় আহত হন এক উপ-পরিদর্শক ও দুই ইউপি সদস্য।
স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা জানান, কুমারখালীর বেড় কালোয়া এলাকায় পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন জেলেরা। জেলেদের কাছে অনৈতিক সুবিধা বা মাছ চাওয়ায় এ হামলার শিকার হন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় তাদের হামলায় আহত হন এক পুলিশ সদস্য এবং দুই ইউপি সদস্য। নিখোঁজের একদিন পর এএসআই সদরুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরেক পুলিশ কর্মকর্তা। ওই এলাকায় জেলেদের প্রধান ইয়ারুলের নেতৃত্বে পদ্মায় একটি বাহিনীও আছে। তাদের লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে।
ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতে গত ১৩ অক্টোবর থেকে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী ইলিশ ধরা, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা চললেও পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে স্থানীয় ইয়ারুলের নেতৃত্বে প্রতিরাতেই বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরছেন জেলেরা। তুলনামূলক কম মূল্যে গোপনে এসব মাছ বিক্রি করা হয় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা ।
এজাহার শেখ নামে একজন বলেন, রাতে পদ্মায় ইলিশ ধরছিলাম। সে সময় ছলিম ও টিটন মেম্বারসহ ৬ জন পুলিশ এসে আমার কাছে থাকা মাছ নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় আবার মাছ ধরার অনুমতি দিয়ে যায় তারা।
ইয়ারুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সবাই সাদাপোশাকে ছিলেন। তারা জেলেদের কাছ থেকে মাছ, তেল ও টাকা লুট করে ফিরছিল। এসময় কিছু জেলে ডাকাত ভেবে হামলা চালিয়েছে।
এ ঘটনায় কুমারখালীর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমাদুল হাসান বলেন, রাতে অভিযান ছিল না। পদ্মায় পুলিশ কেন গেছে তা জানি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে অভিযোগ করে জানান, এই ঘটনার আগের পরপর দুই রাতে (শনিবার ও রোববার) ইউপি সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তারা জেলেদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ইলিশ মাছ নিয়ে যায়। এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন জেলেরা। সোমবার ভোররাতে কয়েকটি নৌকা থেকে ১৫-২০ জন তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের নৌকা ডুবে এএসআই সদরুল ও এএসআই মুকুল নিখোঁজ হন। আহত হন ইউপি সদস্য মো. সেলিম ও আনোয়ার হোসেন টিটন এবং এক পুলিশ সদস্য। তারা সাঁতরে নদী তীরে আসতে সক্ষম হন।
তবে লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পদ্মার ওপারে চর সাদীপুর এলাকায় ছয়জন পুলিশের একটি টিম অভিযানে যাচ্ছিল। এ সময় পদ্মা নদীতে তাদের নৌকা ডুবিয়ে দেয় কতিপয় দুষ্কৃতকারীরা। চার পুলিশ সদস্য নদী থেকে উঠে আসতে পারলেও দুইজন নিখোঁজ হয়। তাদের মধ্যে এএসআই সদরুল আলমের মরদেহ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আরেক এএসআই এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। কাউকে আটক করা যায়নি। এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
আপনার মতামত লিখুন :