শিরোনাম
◈ অর্থনৈতিক সংকটে সিংহভাগ মানুষ কোরবানি দিতে পারেনি: জিএম কাদের ◈ সুপার এইটে স্থান, ক্রিকেট দলকে রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন ◈ ফিলিস্তিনসহ সুবিধা বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির ◈ শাসকগোষ্ঠী উল্লাসের ঈদ করছে আর বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় চলছে শোকের মাতম: রিজভী  ◈ কারাগারে গরু ও খাসি কোরবানি, বন্দিদের বিশেষ বিনোদনের ব্যবস্থা ◈ দেশবাসীকে ভয়ভীতি কোরবানি দেওয়ার আহ্বান মির্জা আব্বাসের ◈ পশু কোরবানির দিক থেকে বাংলাদেশ প্রথমে রয়েছে ◈ এবারের ঈদ দেশের মানুষের কাছে একটা কষ্টের দিন: মির্জা ফখরুল ◈ ঈদুল আজহা উপলক্ষে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিনন্দন প্রধানমন্ত্রীর ◈ চীনে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ট্রাকে শ্বাসরোধে ৮ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত : ১৯ জুন, ২০২২, ০৯:২১ রাত
আপডেট : ২০ জুন, ২০২২, ১১:৩১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইলিশের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল পদ্মা সেতুর কাজ

পদ্মা সেতু

ডেস্ক রিপোর্ট: পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, পদ্মাসেতুর কারণে যাতে ইলিশ মাছের সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পাইলকে মাফলার দিয়ে মোড়ানো হয়েছিল, যাতে হ্যামার দিয়ে পেটানোর শব্দ না হয়।

তিনি বলেন, পদ্মাসেতুর তলা দিয়ে ইলিশ মাছ যাতায়াত করে। দুইশ ডেসিবেলের ওপরে শব্দ হলে ইলিশ মাছ উল্টো দিকে চলে যায়। যেখানে নদীর গভীরতা ৩০ ফুটের বেশি, সেখানে মৎস্য মন্ত্রণালয় যদি বলে ইলিশ মাছ যাচ্ছে, তখন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ইলিশ মাছের সময় কোনো কাজ করা হয়নি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘পদ্মা সেতু এবং এর আর্থ-সামাজিক প্রভাব’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে রোববার প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আইনুন নিশাত এ কথা বলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনানন্দ দাশ কনফারেন্স হলে এ সম্মেলনের আয়োজন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ।

ড. আইনুন নিশাত বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠবে শিল্পসমৃদ্ধ নগরী, যা দেশের অর্থনীতিতে বিস্তর প্রভাব ফেলবে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ঘুরে দাঁড়াবে বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি। বরিশালকে পর্যটনের জন্য অনেক আকর্ষণীয় করে তোলা যাবে। আর ভোলার গ্যাস বরিশালে আনা হলে শিল্পে ব্যাপক উন্নয়নও হবে।

ড. আইনুন নিশাত আরও বলেন, পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণ কোনোদিন সম্ভব হবে, বিশ্বাস করতাম না। এটা অত্যন্ত অত্যন্ত শক্তিশালী নদী। তীব্র স্রোত। প্রাকৃতিকভাবে নদীটা যখন মাওয়াতে আসে, তখন এর প্রশস্ততা দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার, ফলে এটা প্রচণ্ড গভীর। শীতের সময় এর গভীরতা ৮০-১০০ ফুট আর বর্ষার সময় দ্বিগুণ হয়ে যায়।

‘বর্ষার সময় পানি যখন উপরে উঠে যায়, তখন তলদেশও তার থেকে অনেক বেশি নীচে নেমে যায়। এই নেচারাল স্কোয়ারে মাওয়ার কাছে পদ্মার গভীরতা দ্বিগুণ হয়ে যায়।

‘এই গভীরতায় সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণ পৃথিবীতে কোথাও করা হয়নি। এ ছাড়া নদীর তলায় কোনো পাথর নেই, সব আলগা মাটি, বালু, পলিমাটি।’

ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘সেতু করার জন্য মাওয়ার সাইট নির্বাচনের কারণ কয়েক লাখ বছর আগে ওখানে সুন্দরবনের মতো একটা বন ছিল, যেখানে বনের গাছ পড়ে একটা সলিড রকি লেয়ার আছে। এটার সুবিধা নেয়ার জন্যই মাওয়াকে চুড়ান্ত সাইট হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে।

‘আমরা নদীকে মারিনি। এখানে পদ্মায় প্রবাহ মাত্র দুই থেকে তিন কিলোমিটার। আমরা গত দেড় থেকে দুইশত বছরের হিসেব কষে দেখেছি, প্রতি ১২ বছরে পদ্মা জায়গা পরিবর্তন করে। তবে তা ৬ কিলোমিটারের মধ্যে। আমরা সেতু নির্মাণ করতে পারতাম তিন কিলোমিটার লম্বা, কিন্তু এটা বিপদজনক হতো, কারণ নদী এটা মানতো না। তাই আমরা পদ্মা সেতু ছয় কিলোমিটার করলাম। এতে অ্যাপ্রোচ রোডসহ গোটা সেতুর দৈর্ঘ্য দাঁড়াল ৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।’

‘আমি নদীর ওপর কাজ করেছি, তাই আমরা চেষ্টা করেছি বুঝতে, নদী কী চায়, আর সেটাই পালন করতে চেষ্টা করেছি। সেতু দেখলে নদী তার নিচ দিয়ে যেতে চায় না, পাশ কাটিয়ে যেতে চায়।

‘আমরা যখন সেতুর কাজ শুরু করি, তখন সেতুটা মাওয়া ঘেঁষে যাওয়ার কথা, কিন্তু এখন তা ১ কিলোমিটার সরে গেছে। কাজ করতে গেলে ডিজাইন বদলাতে হবে। পদ্মাসেতুর শুধু সেতু অংশ কমপ্লিট হয়েছে, নদী শাসন কমপ্লিট করতে আরও এক বছর লাগবে।’

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এই কনফারেন্সে মুখ্য আলোচক হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশীয় গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কে. ভরদ্বাজ।

সভাপতির বক্তেব্যে প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, পদ্মা সেতুর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে, যা এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানকে উন্নতির দিকে ধাবিত করবে। আগামীতে দক্ষিণাঞ্চলে বরিশাল হবে অন্যতম বাণিজ্যিক ও শিল্প নগরী।

কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও পর্যটন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও কলামিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশগুপ্ত।

কনফারেন্সে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির আহবায়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অসীম কুমার নন্দী। সূত্র: নিউজ বাংলা 

দিনব্যাপী আয়োজিত এই কনফারেন্সে পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দিক নিয়ে ২৩টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়