জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ: সৈকত ইকবাল ঢাকার উত্তরায় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বাবা,মা, ছোট ভাই, স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে থাকেন টঙ্গীতে। ঈদের ভোগান্তি এড়াতে বাবা, মা, ছোট ভাই ও সন্তানকে এক সপ্তাহ আগেই গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়াতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত অফিস থাকায় শনিবার দুপুরে স্ত্রীকে নিয়ে ঈদ করতে রওনা দিয়েছেন তিনি।
শুধু সৈকত ইকবাল নয়, তার মতো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক জেলার মানুষ ঢাকায় মোটরসাইকেলে আসা যাওয়া করেন। ফলে ঈদের সময় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারের আধিক্য না থাকলেও মোটরসাইকেলের পারাপারের হার চোখে পড়ার মতোন।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে এমনিতেই যানবাহন পারাপারের হার অর্ধেক কমে গেছে। ফলে ভোগান্তি কম হওয়ায় মোটরসাইকেলে স্বস্তিতে ঘাট পার হতে পারছেন বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা৷
শনিবার (১৫ জুন) সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ামুখী ১ হাজার ৬৭টি মোটরসাইকেল পারাপার হয়েছে। অথচ এ সময় বাস পার হয়েছে ২১৩টি, প্রাইভেটকার ৪৪৩টি, মাইক্রোবাস ৮২টি, জীপ ৩টি, পিকআপ ৬৪টি, ডেলিভ্যারি ভ্যান ৫৫টি, সিএনজি ৪টি ও ট্রাক ১৯৩টি।
এদিকে সকাল থেকে ঘাট এলাকায় যানবাহন ও যাত্রীর ভীড় বাড়লেও বাড়তি কোন ভোগান্তি ছাড়াই পাটুরিয়া ঘাট পার হতে পারছেন। ফেরির পাশাপাশি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ২০ টি লঞ্চ চলাচল করছে। ঘাট যাত্রীদের ভীড় থাকলেও কোন ভোগান্তি নেই।
ফরিদপুরগামী সিয়াম আহমেদ বলেন, ধামরাইতে চাকরির সুবাদে প্রায় সময় ছুটিতে বাড়ি যায়। পাটুরিয়া ঘাট হয়ে গেলে বাড়িতে যেতে সময় কম লাগে। কাছাকাছি দূরত্বের হওয়ায় মোটরসাইকেলেই যাতায়াত করি। কয়েক বছর আগে ঘাট এলাকায় সিরিয়ালে ফেরিতে উঠতে হতো। এখন যানবাহনের চাপ না থাকায় সরাসরি ফেরিতে মোটরসাইকেল নিয়ে সহজেই উঠা যায়।
মোটরসাইকেল আরোহী তৃষা রহমান বলেন, দীর্ঘদিন পর ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যেতে এমনিতেই ভালো লাগে। তারমধ্যে মোটরসাইকেলে অনেক স্বস্তিতে বাড়িতে যাওয়া যায়। প্রয়োজনে যেখানে ইচ্ছা উঠানামা করা যায়। বাসে গেলে অনেক সময় মহাসড়কে যানজটে আটকা পড়ে ভোগান্তি বাড়ে।
আরেক আরোহী লিখন সরকার বলেন, দুই বন্ধু মিলে রাজবাড়ির দিকে রওনা দিয়েছি। ঘাট এলাকায় কোন চাপ নেই। নবীনগর থেকে পাটুরিয়া পর্যন্তও তেমন কোন যানজট নেই। বাসের চেয়ে মোটরসাইকেল যাত্রা বেশি আরামদায়ক।
মানিকগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক কে এম মেরাজ উদ্দিন বলেন, ঢাকা- আরিচা মহাসড়কসহ পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন। দুর্ঘটনা রোধে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের মেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম শাহ মো.খালেদ নেওয়াজ বলেন, সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে ৬২টি ট্রিপ দেওয়া হয়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল পার হয়েছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ১৮টি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। ফলে যেকোন যানবাহন ও যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়াই ফেরি ঘাট পার হতে পারছেন।
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :