শিরোনাম
◈ মধ্যরাতে গ্রেফতার ব্যারিস্টার সুমন (ভিডিও) ◈ অক্টোবরেও ঊর্ধ্বমুখী  রেমিট্যান্সের গতি ◈ বাতিল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প  ◈ বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে ◈ ‘আমি কোন দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নিই’: (ভিডিও) ◈ ফিল্মি স্টাইলে প্রকাশ্যে গুলি করে ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যা (ভিডিও) ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা প্রশ্নে যা বলেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট ◈ রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে মশাল মিছিল (ভিডিও) ◈ শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি অসত্য বলেননি: মানবজমিন সম্পাদক (ভিডিও) ◈ দিল্লি থেকে মীরাটের সেনানিবাসে শেখ হাসিনা?

প্রকাশিত : ১৭ জুন, ২০২৪, ০৪:১২ দুপুর
আপডেট : ১৭ জুন, ২০২৪, ০৪:১২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আধুনিক বিশ্বে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারের গুরুত্ব

লেখক: মো. জাহিদুল ইসলাম 

পৃথিবীর সব শক্তি ব্যবস্থায় রূপান্তর ঘটছে। এই শক্তির রূপান্তরের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সৌর, বায়ু ও পানিবাহী শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তিগুলো। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে, বায়ু দূষণ কমাতে এবং শক্তি উৎপাদন বাড়াতে তাদের ক্রমবর্ধমান স্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নবায়নযোগ্য শক্তির বড় সুবিধা হলো এটি পরিবেশবান্ধব। এরা বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইড বাড়ায় না। বায়ুপ্রবাহ ও সৌরশক্তি অফুরন্ত। ফলে নবায়নযোগ্য শক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।নবায়নযোগ্য শক্তিকে কখনো কখনো সবুজ শক্তি বা পরিষ্কার শক্তি নামে অভিহিত করা হয়। নবায়নযোগ্য শক্তি হলো পৃথিবীর জলবায়ুকে রক্ষা করার অক্সিজেন। 

অন্যদিকে নবায়নযোগ্য শক্তি খুব সহজেই পাওয়া যায়। এ বিশ্বের জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি আমাদের ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জনপদগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য শক্তির চাহিদাও ততই বাড়ছে। শক্তির টেকসই স্তর বজায় রাখতে এবং আমাদের গ্রহকে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে রক্ষা করার জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলোর উদ্ভাবন ও এর সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শক্তি অবিনশ্বর, এর সৃষ্টি বা বিনাশ নেই। শক্তি কেবল একরূপ থেকে অন্য এক বা একাধিক রূপে পরিবর্তিত হতে পারে। মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়। শক্তির দুটি উৎস। একটি হচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তি অন্যটি হচ্ছে অনবায়নযোগ্য শক্তি।

নবায়নযোগ্য শক্তি বা রিনিউয়েবল এনার্জি হলো এমন শক্তির উৎস যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। এর ফলে শক্তির উৎসটি নিঃশেষ হয়ে যায় না। নবায়নযোগ্য শক্তির বড় সুবিধা হলো এটি পরিবেশবান্ধব। এরা বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইড বাড়ায় না। নবায়নযোগ্য শক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

অন্যদিকে নবায়নযোগ্য শক্তি খুব সহজেই পাওয়া যায়। আর অনবায়নযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার করে নতুন করে শক্তি উৎপন্ন করা যায় না। এই উৎসগুলি ব্যবহার করার ফলে একটি নির্দিষ্ট  সময় পরে শেষ হয়ে যায়। শক্তির এই উৎসটি পুনর্ব্যবহৃত এবং পুনরায় ব্যবহার করা যায় না।বর্তমানে সময়োপযোগী এক প্রকার শক্তি হলো নবায়নযোগ্য শক্তি বা জ্বালানি।

এজন্য নতুন আবিষ্কারের প্রতির গুরুত্ব দিয়ে এর পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া বেশি জরুরি। আর এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো পুরাতনকে কীভাবে নবায়ন করে ব্যবহার করা যায়। বর্তমান আধুনিক বিশ্বে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, টেকসই যানবাহন ব্যবস্থা এবং গ্রিন টেকনোলজি সমৃদ্ধ শক্তি সাশ্রয়ী গৃহস্থালি পণ্য প্রবর্তনে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন গবেষণা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।নবায়নযোগ্য শক্তি বর্তমানে বিশ্বে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

অধিকাংশ দেশ তাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নবায়যোগ্য শক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের মধ্যে সৌরশক্তি সবচেয়ে সম্ভাবনাময়  ব্যবহার।সূর্যের আলো আমাদের গ্রহের অন্যতম প্রাচুর্য এবং অবাধে উপলব্ধ শক্তির উৎস। 

বর্তমানে পৃথিবীর একটা পরিচিত দৃশ্য হচ্ছে সোলার প্যানেল, বাসার ছাদে লাগিয়ে মানুষ তার নিজের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ নিজের বাসায় তৈরি করে নেয় এটি দিয়ে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস যেমন- সৌরশক্তি, বায়ুপ্রবাহ, জলপ্রবাহ, জৈবশক্তি , ভূ-তাপ, সমুদ্র তরঙ্গ, সমুদ্র-তাপ, জোয়ার-ভাটা, শহুরে আবর্জনা, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। 

নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, টেকসই যানবাহন ব্যবস্থা এবং গ্রিন টেকনোলজি সমৃদ্ধ শক্তি সাশ্রয়ী গৃহস্থালি পণ্য প্রবর্তনে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন গবেষণা প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রচলিত বিদ্যুৎ সরবরাহবিহীন জায়গাগুলোতে জনসাধারণ নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর নির্ভরশীল। রান্নার জন্য বায়োমাস এবং শস্য এবং কাপড় শুকানোর জন্য সৌরশক্তি এবং বায়ু ব্যবহার একটি ঐতিহ্যবাহী উপায়। এর ফলে হাজার হাজার বছর ধরে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে। 

বায়ুপ্রবাহ ও সৌরশক্তি অফুরন্ত। বায়ুশক্তি হল বায়ুর গতিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পাওয়া রূপান্তরিত শক্তি। বায়ুকল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ শক্তি তৈরি, যান্ত্রিক শক্তি জন্য বাতচক্র, পানি তোলা বা নিষ্কাশনের জন্য বায়ু পাম্প, জাহাজসমূহ চালনার জন্য পাল ইত্যাদি কার্য সম্পাদন করা হয়। বড় বায়ু খামারসমূহ শত শত বায়ুকল দিয়ে গঠিত যারা একটি অপরটির সাথে একটি বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চালন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। 

নবায়নযোগ্য জৈব  শক্তির মাধ্যমে মানুষ অথবা পশু-পাখির বিষ্ঠা এবং পচনশীল আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস তৈরি করা যায়। এই বায়োগ্যাসেরও রয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবহার। রান্নার কাজে বা বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে ব্যবহৃত হয় এই বায়োগ্যাস। অপরদিকে নবায়নযোগ্য শক্তির গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি হচ্ছে ভূতাপীয় বা জিওথার্মাল শক্তি। 

আমাদের পৃথিবীর ভেতরের অংশ উত্তপ্ত। আগ্নেয়গিরি দিয়ে যখন বের হয়ে আসে তখন আমরা সেটা টের পাই। এটি শক্তির একটি নবায়নযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচিত। মূলত ভূপৃষ্ঠের নিচে যে পানির স্তর আছে তা অনেক সময় এই উত্তপ্ত শিলাস্তরের স্পর্শে আসে এবং নিজ চাপে সে পানি ভূপৃষ্ঠ উঠে আসে। এরুপ স্থানকে জিওথার্মাল হটস্পট বলে। এদিকে গত কয়েক বছর ধরে ই-বর্জ্য সারা বিশ্বেই এটি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

ই-বর্জ্যরে উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে-স্বর্ণ, রুপা, সিসা, ক্যাডমিয়াম, প্লাটিনাম, নিকেল, টিন, দস্তা, সালফার, ফসফরাসসহ আরও কিছু উপাদান, যার কিছু মূল্যবান এবং কিছু রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। এই মূল্যবান উপাদানগুলো আলাদা করে তা প্রক্রিয়াজাত করাই চ্যালেঞ্জিং। ই-বর্জ্যরে ফেলে দেয়া উপাদানগুলো  ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে এটি একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হবে। 

অতি সম্প্রতি ঢেউ থেকে ‘ব্লু এনার্জি’ সংগ্রহের উপায় মিলেছে গবেষণায়। এক্ষেত্রে একটি বিশেষ টিউব বা নলকে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এভাবে কল্পনা করা হয়েছে যা অর্ধেক পানিতে ডুবে থাকবে। টিউবটি সামনে পিছনে কাত হয়ে আশপাশের পানিকে আঘাত করবে তাতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে ।প্লাস্টিক হলো পলিথিনের মতো বিস্তৃত জৈব পলিমার থেকে তৈরি একটি সিন্থেটিক উপাদান। 

বিশ্বখ্যাত জুতা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান এডিডাস সমুদ্র থেকে প্রাপ্ত প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে জুতা উৎপাদন করে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে।  বাচ্চাদের খেলনাসামগ্রী তৈরির ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের বিকল্প নেই। এর মূল কারণ হলো প্লাস্টিকের খেলনা সহজে ভাঙে না এবং কম দামেই ছোটখাটো খেলনা পাওয়া যায়। 

অপরদিকে ঠিক তেমনি আমাদের টেকসই জৈব প্লাস্টিক উৎপাদনের নবায়নযোগ্য উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখতে সাহায্য করে।গত কয়েক বছরে জীবাশ্ম জ্বালানির নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ধরণ এবং তাদের ক্রমবর্ধমান খরচ নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারকে তীব্রতর করেছে। সত্যিকার অর্থে যা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস করার অন্যতম উপায়।তাছাড়া কিছু নবায়নযোগ্য জ্বালানি পণ্য যেমন- সোলার প্যানেল, সোলার প্যানেল প্রস্তুতের উপাদান, চার্জ কন্ট্রোলার, ইনভার্টার, এলইডি লাইট, সৌরচালিত বাতি এবং বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।

সোলার হোম সিস্টেম একটি বিশাল এবং বিশ্বস্ত সিস্টেম। এই সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রামীণ বাড়িগুলো এর আওতায় এসেছে। সোলার হোম সিস্টেম এর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে বর্তমানে ব্যবহারকারীরা কয়েকটি কর্মসূচি যেমন- সৌর সেচ, সৌর মিনি/মাইক্রো গ্রিড, সোলার পার্ক, সোলার রুফটপ, সোলার বোটিং ইত্যাদি শুরু করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্যতম লক্ষ্য হলো গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং ডিজেলের উপর নির্ভরশীলতা কমানো।

এর ফলশ্রুতিতে কমবে কার্বন নিঃসরণ এবং উৎপাদন ব্যয়। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পানি বিদ্যুৎ, সোলার পিভি ব্যবহার করে সৌর বিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎ, বাতাসের গতি, গোবর এবং পোল্ট্রি বর্জ্য ব্যবহার করে বায়োগ্যাস, ধানের তুষ এবং আখের ছোবড়া, বর্জ্য, , শিল্প প্রক্রিয়ার অব্যবহৃত তাপ থেকে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি উৎপাদন, পৌর বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

লেখক: মো. জাহিদুল ইসলাম 
নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়