রিয়াদ হাসান: [২] আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে শাহবাগে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছিল দেশে বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।
[৩] শনিবার (৯ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে উপস্থিত হলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই কর্মসূচি পালনে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শাহবাগে কর্মসূচি না করতে পেরে মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানবন্ধন করে সংগঠনটি। সেখানে সংগঠনটির মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন সময় গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
[৪] মানববন্ধনে মাত্র তিন মাস বয়সে বাবাকে হারানো সাদিকা সরকার অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে আমার বাবাকে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে, গুম করা হয়েছে। আমি বাবাকে কখনো দেখিনি, বাবা বলে ডাকতে পারিনি। আমার একটাই দাবি, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। আমি আর কিচ্ছু চাই না। বাবার ছবি হাতে নিয়ে বাবার সন্ধান চেয়ে সরকারের কাছে আকুতি জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে।
[৫] বিএনপি নেতা ও ড্রাইভার কাওসারের মেয়ে লামিয়া আক্তার মিম বলেন, আজ ১১ বছর আমি আমার বাবাকে দেখি না। বাবাকে ফেরত চাই। তার হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে চাই। আমি বলতে বলতে ক্লান্ত। আমি আমার পাপাকে ফেরত চাই। আমার পাপাকে ফেরত দিন।
[৬] মানববন্ধনে গুমের শিকার মো. পারভেস হোসেনের স্ত্রী ফারহানা আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে হবে না। আপনার কাছে রেখে দেন। শুধু বলেন কেন গুম করেছেন? স্বামী হারা মানুষের কষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের কেউ বুঝবে না।
[৭] সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহানা বানু মুন্নি বলেন, দশ বছর আমার ভাইয়ের কোনো খোঁজ নেই। আমরা রাস্তায় রাস্তায় ভাইয়ের জন্য কাঁদি। আমরা আমাদের কথা বলতে শাহবাগে দাঁড়িয়েছিলাম। কেন টেনেহিঁচরে আমাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিলেন? আমরা কি এই দেশের নাগরিক না? মায়ের ডাকের এই সমাবেশে স্বজনদের চোখে ছিল কান্না, কন্ঠে ছিল ক্ষোভ একইসঙ্গে প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার আকুতি।
[৮] বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমি অবাক হয়ে দেখলাম, তারা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে একই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ দেখতে পাচ্ছি, কিভাবে এই সরকার, মানুষের বুকের রক্তের ওপর দিয়ে, মানুষের লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে।
[৯] নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখন মানুষের সমস্ত মানবিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক অধিকার ও ভোটের অধিকার হরণ করে তারা (সরকার) একটি তামাশা তৈরির চেষ্টা করছে। পুলিশসহ এই সরকারের যত বাহিনী আছে, যত অত্যাচারই করুক, মায়ের ডাক তারপরও তাদের লড়াই অব্যাহত রাখছে।
[১০] গুম, খুন হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের পাশাপাশি কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আরো বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহসভাপতি তানিয়া রব, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক প্রমুখ। সম্পাদনা: ইকবাল খান
আরএইচ/আইকে/এনএইচ