শিরোনাম
◈ সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনে ৩৪০০ কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক ◈ কমিশন বাড়ানোসহ ২৪ ঘণ্টা সিএনজি ফিলিং স্টেশন খোলা রাখার দাবি মালিকদের ◈ ভর্তুকির পরও এলএনজি আমদানিতে ঘাটতি ১১ হাজার কোটি টাকা! ◈ তুচ্ছ ঘটনায় স্বামীর পুরুষাঙ্গ কাটলেন স্ত্রী! ◈ নাহিদ রানা ও রিশাদ পা‌কিস্তান থে‌কে দে‌শে ফির‌লেন ◈ নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশ করতে পারলো না বাংলাদেশ ◈ ভারতীয় গণমাধ‌্যমের  সাংবা‌দিকতার মান নি‌য়ে প্রশ্ন তুল‌লেন পা‌কিস্তা‌নের শহীদ আ‌ফ্রিদি ◈ ট্রাম্পের ঘোষণার পর যুদ্ধবিরতির তথ্য নিশ্চিত করে যা বলল ভারত-পাকিস্তান ◈ শেখ হাসিনার সহকারী প্রেস সচিব বিটু ও সাবেক এমপি শামীমা গ্রেফতার ◈ ভারত-পাকিস্তান কি পরমাণু বোমা ব্যবহার করতে পারে? রাষ্ট্রীয় নীতিতে যা আছে: আল জাজিরার বিশ্লেষণ

প্রকাশিত : ১০ মে, ২০২৫, ০৮:২২ রাত
আপডেট : ১০ মে, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রীর অভিযোগ: অপচিকিৎসার বলি শামসুদ্দোহা শিমুল

দীপক চৌধুরী: রাজধানীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপারেশন থিয়েটারেই শামসুদ্দোহা শিমুল নামে এক করপোরেট কর্মকর্তা মৃত্যুবরণ করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন তার পরিবার। অভিযোগকারী বলেন, চরম অবহেলা ও অপচিকিৎসার নির্মম পরিণতি এটি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর-রুনি মিলনায়তনে আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়।

অবহেলা ও অপচিকিৎসাজনিত মৃত্যুর বিচার দাবিতে “জাস্টিস ফর শিমুল” (শিমুলের জন্য ন্যায়বিচার )-এর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় মারা যাওয়া ব্যক্তির বয়স ৪৮। তবে চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জাহের আল-আমিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,  ‘এ ঘটনাটি বিচারাধীন। এজন্য আমাকে হাজত খাটতে হয়েছে। জামিনে আছি।’ এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি  পুলিশ সংস্থা ‘পিবিআই’ তদন্ত করছে একথা জানালে চিকিৎসক বলেন, ‘আগে পুলিশি তদন্ত  শেষ হোক।’ 

সংবাদ সম্মেলনে মরহুমের স্ত্রী সায়মা সুলতানা, তার বড় ছেলে আরিফ আল-দোহা (দশম শ্রেণি), চার বছর বয়সী শিশুমেয়ে আনিসা, শিমুলের বন্ধু সোহেল কিবরিয়া, রিয়াজ  ইসলামসহ আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাক্সিক্ষরা ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গত বছরের ২১ আগস্ট রাজধানীর গ্রিনরোডে (২০ আগস্ট দিবাগত গভীর রাত) অবস্থিত কমফোর্ট  কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক  সেন্টার ও নার্সিং  হোম (হাসপাতাল)-এ নাকের  সেপ্টোপ্লাস্টি অস্ত্রোপচারের সময় অধ্যাপক ডা. জাহের আল-আমিন (বিএমডিসি  রেজিঃ নং- এ-১২৬৮৮) এবং এনেস্থেসিয়োলজিস্ট ইফতেখায়রুল কাওসার (বিএমডিসি  রেজিঃ নং- এ-৫৭৩৯০) এর তত্ত্বাবধানে শামসুদ্দোহা শিমুলের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। 

সংবাদ সম্মেলনে মরহুম শামসুদ্দোহার স্ত্রী সায়মা সুলতানা বলেন, শিমুল ছিলেন বাংলাদেশের কর্পোরেট জগতের একজন আইকন, এসিআই লজিস্টিক  (স্বপ্ন) এর সাবেক পরিচালক, মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। বিবেকের তাড়নায়, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে, সষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে তার পরিবার ও শুভাকাক্সিক্ষদের সঙ্গে নিয়ে সমবেত হয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা জানতে  পেরেছি, শামসুদ্দোহা শিমুলের মৃত্যুর পেছনে অভিযুক্ত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ  ময়না তদন্ত প্রতিবেদন  এবং তদন্তকাজে প্রভাব বিস্তার করে সঠিক বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। সায়মা সুলতানা অভিযোগ করেন প্রতিটি ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে আমাকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।

‘দীর্ঘ ১০ মাস পর এমন সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের কারণ কী?’ এমন এক  প্রশ্নের জবাব হিসেবে আয়োজকেরা জানান. পোস্টমর্টেম রিপোর্টসহ অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ, পোস্টমর্টেম রিপোর্টসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সংগ্রহসহ বিপরীত পক্ষের অসহযোগিতার কারণে বিলম্ব হয়েছে। বার বার বাধাগ্রস্ত হয়েছি আমরা।

তারা আরো জানান, বাাংলাদেশ  মেডিকেল ও  ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আমাদের বক্তব্য গ্রহণে অনেক সময় চলে যায়। এরপরও চারমাস সময় অতিবাহিত হয়েছে।  এখনো বিএমডিসি’র রিপোর্ট আমরা পাইনি।

সুষ্ঠু বিচারের ক্ষেত্রে নানারকম প্রতিবন্ধকতা ও নানারকম আশঙ্কার কথা উল্লখ করে সায়মা সুলতানা বলেন, আমরা এসেছি ন্যায় বিচার ও মানবতার স্বার্থে এবং ভবিষ্যতের শিমুলদের রক্ষা করতে। আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি কারণ, তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার নৈরাজ্যের প্রতিচ্ছবি স্বচক্ষে দেখলাম। এখানে এটাও উল্লেখ করি, অস্বীকার করব না যে, আমাদের দেশে অত্যন্ত মেধাবী, মানবিক ও গুণী চিকিৎসক রয়েছেন। তাই সকল চিকিৎসককে আমরা দায়ী করছি না। শুধু যেসব ব্যক্তির অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় আমি স্বামী হারালাম তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

শিমুলের স্ত্রী সায়মা সুলতানা একটি বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা বলে জানান। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে বলতে এক  সময় সায়মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং তখন দুটি বাচ্চারও চোখ পানিতে টলমল করে। হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দুপাশে দুটি শিশুকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ওরা আজ পিতৃহারা।  সায়মা অরো বলেন, ‘একজন প্রতিভাবান, উদ্যমী, মানবিক মানুষ  যার  চোখজোড়া ছিল স্বপ্নে ভরা, যার কাঁধে ছিল পরিবারের আশার ভার, সমাজের  সেবার দায়  তিনিই আজ আমাদের মাঝে  নেই। শিমুল চলে  গেছেন এক ‘চরম অবহেলা ও অপচিকিৎসার বলি’ হয়ে।

এই মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এটি একটি অনাকাক্সিক্ষত ট্র্যাজেডি, যা প্রতিটি সচেতন মানুষকে নাড়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। যেখানে মানুষ অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে যায় সুস্থ হয়ে ফিরে আসার আশায় অথচ  কেউ কেউ ফিরে আসে নীরব, নিথর এক দেহ হয়ে। এই ঘটনা আমার জীবনেও  ঘটে গেল। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে একটি ত্রুটিপূর্ণ, জবাবদিহিহীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা কীভাবে অনায়াসে কেড়ে নিতে পারে সম্ভাবনাময় জীবন। 

এক প্রশ্নের জবাবে সায়মা বলেন,  আরও জানতে পেরেছি যে, শামসুদ্দোহা শিমুলের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে কিছু উল্লেখ করা হয়নি, তথা ‘‘মৃত্যুর প্রকৃতি নির্ধারণ করা যায়নি। অর্থাৎ, মৃত্যুটি স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক, দুর্ঘটনাজনিত না অন্য কোনো কারণে হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব হয়নি।

সায়মা সুলতানা বলেন, আমরা আজ একত্রিত হয়েছি কারণ আমরা বিশ্বাস করি, চিকিৎসার ক্ষেত্রে যদি জবাবদিহি না হয়, তবে আগামীর শিমুলরাও নিরাপদ থাকবে না। এসেছি  ন্যায়ের দাবিতে, মানবতার স্বার্থে এবং ভবিষ্যতের শিমুলদের রক্ষার প্রত্যয়ে। আমরা আজ কথা বলছি, যাতে আর  কোনো পরিবারকে এমন অকালে প্রিয়জন  হারানোর কান্না বইতে না হয়। আমি কথা বলছি, যেন ভবিষ্যতের শিমুলরা নিরাপদে বাঁচতে পারে। যেন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি এ বিষয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তি চান। 

‘জাস্টিস ফর শিমুল’-এর পক্ষে সায়মা সুলতানা আরো বলেন, জোরালোভাবে দাবি জানাই, এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল চিকিৎসক, স্টাফ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তদন্তের আওতায় এনে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অবহেলাজনিত মৃত্যুর পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং জনগণের মধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পায়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা  সোহেল কিবরিয়া বলেন, যথাযথ জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের অভাব, সময়মতো  রোগীর পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য  গোপন, অপারেশন থিয়েটারে প্রস্তুতির ঘাটতি এবং  রোগীর মৃত্যুর পরে  সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের পালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাসহ এসব বিষয়সমূহের ভিত্তিতে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি  যে, শিমুলের ঘটনা একটি অবহেলাজনিত অনাকাঙ্খিত মৃত্যু।

অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক জাহের বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এসব অভিযোগের বিষয়ে আমারও অনেক কথা আছে। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে এটা বিচারাধীন তাই এই মুহূর্তে কিছু বলতে চাই না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জাহের বলেন, আমি এখন বেইলে। বেইলে থাকা অবস্থায় কোনো প্রশ্নের উত্তর দেবো না। শামসুদ্দোহা শিমুলের অবহেলা ও অপচিকিৎসায় মৃত্যুর মামলাটি ‘পিআইবি’র তদন্তাধীন। তদন্তের স্বার্থেই এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে অপারগতা স্বীকার করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়