শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ২৫ জানুয়ারী, ২০২২, ০৩:৩৮ রাত
আপডেট : ২৫ জানুয়ারী, ২০২২, ০৩:৩৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আগুন যেন অপ্রতিরোধ্য, একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে

জনকণ্ঠ: রাজধানীতে অগ্নিদুর্ঘটনা যেন অপ্রতিরোধ্য। প্রায়ই ঘটছে অগ্নিকা-ের ঘটনা। কখনও বাণিজ্যিক কিংবা আবাসিক ভবনে, কখনও বস্তিতে, কেমিক্যাল গোডাউন বা মার্কেটে লাগা আগুনে যেমন ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। কেউ এসব আগুনে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পথে বসছেন, কেউবা দগ্ধ হয়ে বাকি জীবন বিছানায় কাটাচ্ছেন। অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ, সচেতনতা ও সুপারিশমালা ভূরিভূরি। তা সত্ত্বেও বারবার কেন আগুন লাগছে, এর নেপথ্যের কারণ কী- এমনটি জানতে চাওয়া হয় ফায়ার সার্ভিসের সাবেক ডিজি, নগরবিদ ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের কাছে।

তারা বলছেন, শুধু সচেতনতা, পরামর্শ ও সুপারিশমালা দিয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন আগাম প্রস্তুতি ও দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থার সমন্বয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজউক শুধু ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়েই দায় সারছে। পরবর্তী সময়ে কোন সংস্থাই অনুমোদন দেয়া ভবনগুলো পরিদর্শন করে না। ভবন নির্মাণের সময় সব ধরনের ইঞ্জিনিয়ারের সম্পৃক্ততা থাকলেও ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কোন ভূমিকাই রাখা হচ্ছে না। এতে ইলেক্ট্র্রিক্যাল ডিজাইন ঠিক মতো হচ্ছে না এবং প্রতিনিয়ত বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের ঘটনা ঘটছে। উল্লেখ থাকা ভাল মানের তার ব্যবহার করছেন না ভবন কর্তৃপক্ষ। বরং সামান্য খরচ বাঁচাতে নিম্নমানের তার ব্যবহার করছেন। ডেভেলপার কোম্পানিগুলোও যথাযথ তার ব্যবহার করছে না। এসবের কারণে প্রতিনিয়ত অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বলেন, অগ্নিকা-ের বিষয়ে মানুষের শিথিলতা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ভবন করার সময় ন্যূনতম কাঠামোগত দিক অনুসরণ করা হয় না। প্রশিক্ষণেরও অভাব রয়েছে। কোথাও গাড়ি ঢোকার রাস্তা নেই অথচ ভবন করার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। পরে আগুন লাগলে এর দায়ভার রাজউক, ফায়ার সার্ভিস কেউই নেয় না। ডেভেলপার কোম্পানিগুলোও এসব অনুমোদিত ভবনের কাজ করছে। এসব দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থা এসব নিশ্চিত করছে না বলে দুর্ঘটনা ঘটছে। উঁচু ভবন, কলকারখানাগুলোতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রসহ যা যা থাকার কথা তা ঠিকমতো আছে কিনা, তা চেক করা উচিত। কেননা, যখন আগুন লাগে তখন এসব যন্ত্র থাকলেও কাজ করে না বলে শোনা যায়। কিন্তু লোকবলসহ অন্য সীমাবদ্ধতার কারণে ফায়ার সার্ভিস সেটা করতে পারে না। সংশ্লিষ্ট সংস্থার সক্ষমতার অভাব রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের মহড়াও আবশ্যিক করা দরকার। বাধ্যবাধকতা নেই বলে আগুন লাগলে কী করতে হবে, তা নিয়ে সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন এবং সঙ্কট বেড়ে যায়। পুরান ঢাকাসহ যেসব স্থানে দোকান করা হচ্ছে এবং এসব দোকানের যখন ট্রেড লাইন্সেস দেয়া হয় তখন ফায়ারের লাইন্সেস দেয়ারও নিয়ম করা উচিত। আবার ফায়ার সার্ভিসেরও সক্ষমতার অভাব রয়েছে। এরকম গাফিলতি থেকে যায় বলেই এতো আগুন লাগে।

আলী আহাম্মেদ খান বলেন, বিদ্যুত থেকে আগুন লাগছে। কিন্তু ইলেক্ট্রিক্যাল যে জেনারেটর, লাইট, তার সেগুলো স্ট্যান্ডার্ড মানের লাগানো হয় না। লোড ক্যালকুলেশন থেকে আগুন লাগছে। যাদের দিয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল কাজ ও ডিজাইন করা হয় সেগুলো সঠিকভাবে রিভিউ করা হয় না। বিদেশে প্রতিবছর ইলেক্ট্রিক্যাল দিকটা অডিট করা হয়। আমাদেরও এরকম ইলেক্ট্রিক্যাল সংযোগের দিকটা অডিট করলে তখন বুঝা যাবে, কী কী সীমাবদ্ধতা আছে এবং এগুলো আস্তে আস্তে ঠিক করতে হবে। এতে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগার আশঙ্কা কমে যাবে। তাজরিন গার্মেন্টসে আগুন লাগার পর গার্মেন্টস সেক্টরে অডিটের সিস্টেম করা হয়েছে। এটাও উদাহরণ হতে পারে। বিদ্যুত বিভাগ বিদ্যুতের দিক এবং ফায়ার সার্ভিস তাদের দিকটা সঠিক করলে ঝুঁকির মাত্রা অনেক কমে যাবে। যখন ভবন করা হয় তখন ফায়ার সেফটি, ইলেক্ট্রিক্যাল সেফটি চেক করবে রাজউক। কিন্তু তাদের ক্যাপাসিটি না থাকলেও থার্ড পার্টি দিয়ে এগুলো নিশ্চিত করে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া যেতে পারে। রাজউকের ফায়ার এক্সপার্ট টিম ও ইলেক্ট্রিক্যাল টিম থাকতে হবে। মানুষ কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভবন করছে ঠিকই কিন্তু ভবনটা রক্ষা হচ্ছে না। ডেভেলপার কোম্পানিগুলো যেনতেন ভাবে ভবন করে দায় সারছে। ফায়ার সার্ভিসের বিষয়ে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের আগুন নেভানোর সক্ষমতা আছে। কিন্তু তাদের পূর্ব প্রস্তুতি কিংবা প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। প্রতিরোধী উইং, ফায়ার সেফটি উইং বা ইঞ্জিনিয়ারিং টিম নেই। এরকম একটা শক্তিশালী টিম রাখতে হবে। যে লোক আগুন নেভাচ্ছে, সে লোক তদন্ত করছে, আবার সে লোকই ডিজাইন চেক করছে। প্রতিনিয়ত আগুন লাগছে, তাই তারা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার তালিকা ও এসব স্থাপনা, কমিউনিটি সেন্টারসহ যেসব স্থানে জনসমাগম হয় সেসব এলাকা পরিদর্শন করতে হবে। ভলান্টিয়ার বাড়াতে হবে।

বারবার অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ডিজাইন লেভেলে কী করার আছে? এমনটি জানতে চাওয়া হয় বুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাতের কাছে। উত্তরে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী, বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রিক্যাল ডিজাইনে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারের স্বাক্ষর বা অনুমোদনের দরকার রয়েছে। এটা না করলে কোডের ব্যত্যয় ঘটবে। কিন্তু ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় এই ধরনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় সেটি করা হচ্ছে না। যে সংস্থা বা যারা ডিজাইন দেখে ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়ে থাকেন, তারাই যদি ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন না করেন, তাহলে এখানে স্পষ্টত সরকার কর্তৃক প্রণীত দুটো আইনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব অনুভূত হয়। একটি ভবনে আগুন লাগলে ওই স্থান থেকে যাতে আগুন ছড়াতে না পারে এবং ওখানেই আগুন নিভে যায়- এমন অগ্নিরোধী কয়েক প্রকারের বৈদ্যুতিক তার রয়েছে। এটাকে বলা হয় ‘ফায়ার রেজিস্ট্যান্ট’ তার। আগুন লাগার পরও ভবনের যে অংশগুলো চালু রাখতে হয় সেগুলো হলো- ফায়ার পাম্প, ফায়ার লিফট এবং ফায়ার ডিটেকশন ও এলার্ম। এসব যন্ত্রাংশে আগুন রোধী তার ব্যবহার করা প্রয়োজন। ‘ফায়ার রিটার্ডেন্ট’ নামে আরেকটি ‘লো স্মোক’ তার রয়েছে। আগুন লাগলে এ তার কিছুক্ষণ আগুনের বিরুদ্ধে ফাইট করতে পারে এবং তারপর কিছুটা পুড়ে যায়, তবে খুব কম ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। মূলত সাধারণ তারের উপরে যে কভার (ইনসুলেশন) থাকে, সেটা পুড়েই প্রচুর ধোঁয়া উৎপন্ন হয়। কিন্তু এসব লো স্মোক তার আগুনে পুড়লেও ধোঁয়া কম হয়। এ তারের খরচ নরমাল তারের চেয়ে ৩০-৩৫ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু ভবন মালিকেরা সামান্য টাকা বাঁচাতে এ তার ব্যবহারই করছেন না। আর আগুন লাগলে শুধু দগ্ধ হয়ে নয়, ধোঁয়া থেকেও ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে।

তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ তারের ভেতর দিয়ে যদি ১০০ এম্পিয়ার কারেন্ট যাওয়ার থাকে, আর দিয়ে রাখা হয় ৫০ এম্পিয়ার তা সহ্য করতে পারেনা এমন তার। ফলে অত্যধিক হিটের কারণে তার গরম হয়ে আগুন লেগে যায়। আবার তারের আবরণ খারাপ হলে শর্টসার্কিটের ঘটনা ঘটে, যেখান থেকে দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়। একত্রে যখন অনেকগুলো ভবন নির্মাণ করা হয় এবং একই উৎস থেকে তারের সংযোগ নেয়া হয়, তখন কোন তার কত কারেন্ট নিতে পারবে, এটা অনভিজ্ঞ ডিজাইনাররা নির্ণয় করতে পারেন না। এ সমস্যাও প্রকট এবং এ কারণেও আগুনের ঘটনা ঘটে। রাজউকের নিয়মে কোন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের স্বাক্ষর রাখার প্রয়োজন নেই বলেই যাকে তাকে দিয়ে এসব কাজ করানো হচ্ছে কিনা, সেটা যাচাই করা যাচ্ছে না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।

দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি যে, বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকা-ের পর বুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে মানসম্মত তারের ব্যবহার মোটেও দেখতে পাননি। বরং যেসব তারের ব্যবহার তারা দেখতে পেয়েছেন, সেগুলোও প্রয়োজনের চেয়েও অনেকটা সরু। ভবন নির্মাণের পর বিদ্যুত সংস্থা বহিরাংশে তারের সংযোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু ভবনের অভ্যন্তরে ভবন মালিক কি ধরনের তার ব্যবহার করেছেন, তা কেবল রাজউক চাইলে দেখতে পারে। কিন্তু তারা অনুমতি দিয়েই দায় শেষ করছেন। ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানও যেসব তার দিয়ে থাকেন তা মোটেও ভবনের সঙ্গে মান বজায় বা সামঞ্জস্যা না রেখেই দীর্ঘমেয়াদী হিসেবে দেয়া হয় না। তাই টেকসই হয় না, জানান ইয়াসির আরাফাত।

অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা নিয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, সরকার ফায়ার প্রটেকশন প্ল্যান চেক করার আইন করেছে। ভবন করার সময় ফায়ার সার্ভিস থেকে এ প্ল্যান অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের তদারকির ক্ষেত্রে যে কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা প্রয়োজন সেজন্য তাদের উপযুক্ত জনবল আছে কিনা সেটা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একই প্রশ্ন রাজউককে নিয়েও। যেসব বিষয়ে অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার লাগবে রাজউকের সেই সংখ্যক বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার নেই। কোন দেশেই সরকারী এসব সংস্থার এতো জনবল থাকে না। বিদেশেও কোয়ালিটি কন্ট্রোলের কাজটি থার্ড পার্টি দিয়ে করানো হয়। এটা আমরাও করতে পারি। অবকাঠামোগত এমন কিছু পরিকল্পনা ও সমন্বয় থাকলে অগ্নিদুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করছেন তিনি।

নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, আগুন লাগাটা দুর্ঘটনা। তবে এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা যথেষ্ট সাবধানতা ও সচেতনতার অভাব। দুই ধরনের ব্যত্যয়ের কারণে ভবনগুলোতে আগুন লাগছে। প্রথমত, ব্যবহারজনিত তথা কেমিক্যাল কিংবা দাহ্যপদার্থের গোডাউন করায় আগুন লাগার আশঙ্কা বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি ভবনের নির্মাণ, নির্মাণ কৌশল এবং সেই সঙ্গে উপকরণ ও উপাদান সুনির্দিষ্ট নেই। বাণিজ্যিক ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটলে কিভাবে মানুষ বের হবেন, সে পথ থাকতে হবে। ফায়ার এস্কেপ, যথেষ্ট পরিমাণে সিগন্যালসহ অন্যান্য সরঞ্জাম থাকতে হবে। এগুলো পর্যাপ্ত না থাকায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

বাণিজ্যিক কিংবা আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল, তেজস্ক্রিয় বা অতি দাহ্যবস্তু গুদামজাত করা হয়। অথচ অল্পতেই আগুন ধরে যায়- এমন অনেক জিনিস এসব গোডাউনের পাশে রেখেই কাজ করা হয়। ফলে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরাও এসব জানি, বুঝি। তা সত্ত্বেও এক ধরনের অগস্ত যাত্রা করি, দিব্য করি। বলি- আল্লাহ রক্ষা করবেন। এ ধরনের মানসিকতা দূর করতে হবে। পাশাপাশি আইনকানুন, নিয়মের যে ব্যত্যয়গুলো ঘটে সেগুলো দেখভালের কোন সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেই। ভবন নির্মাণে রাজউক অনুমোদন দেয়। কিন্তু ভবনগুলো অনুমোদন অনুযায়ী হয়েছে কিনা, নির্মাণ পরবর্তীতে তা তদারকি করা হয় না। এটা এক ধরনের অন্যায়। আবার এসব জায়গায় যারা থাকছেন, তাদের বসবাসযোগ্যতা দেখার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। সিটি কর্পোরেশন ট্যাক্স নিচ্ছে, ট্রেড লাইন্সেস দিচ্ছে। কিন্তু বসবাসযোগ্য কিনা, সেই সার্টিফিকেশন দিচ্ছে না। তিনটি সংস্থা তথা রাজউক, সিটি কর্পোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস এ কাজগুলো করে না। ফলে মানুষ দিব্যি অন্যায় করেই যাচ্ছে। কেননা, প্রতিটা ন্যায় করতে গেলে কিছুটা খরচ হয়। সবাই সেই খরচগুলো এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করেন। আমরা যারা ব্যবহার করি তারাও বিষয়গুলো সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু যখন দুর্ঘটনা ঘটে, তখন জীবন কিন্তু আমাদেরই যায়। তাই ব্যবহারকারীর যেমন উদাসীনতা রয়েছে, তেমনি যারা ব্যবহার উপযোগী করে বানাচ্ছেন তাদের অর্থনৈতিকভাবে গাফিলতি ও লাভবানের একটা বিষয় থাকে। আর যারা ট্যাক্স নিচ্ছে, রাষ্ট্র যাদের বেতনভুক্ত করে দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে, তাদের একেবারে অবহেলা ও উদাসীনতা রয়েছে। এসব মিলে এক ধরনের অবহেলাজনিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। যার কারণে এ সমস্ত ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলা কঠিন।

ইকবাল হাবিবের মতে, আইনকানুন, নিয়মনীতি, ভবন নির্মাণ এবং নির্মাণ পরবর্তী সময় থেকে প্রতিবছর ফি ও নবায়নযোগ্য পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। ভবন নির্মাণকারী ও ব্যবহারকারীদের দায়বদ্ধ আচরণ নিশ্চিত করতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে উঁচু ভবন করার ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়মিত ব্যবহারকারীদের সচেতন এবং প্রস্তুত করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পূর্ব প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণও থাকতে হবে। বারবার আগুন লাগার পেছনে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অবিন্যস্ততাও রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ২২ হাজার ২২২টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৩৩০ কোটি ১৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর আগের বছর ২০২০ সালে দেশে অগ্নিকা-ের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৭৩টি। এতে ১৫৪ জন নিহত হয়েছেন। এসব অগ্নিকা-ের শতকরা ৩৫ ভাগের বেশি ঘটছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়