শামীম আজাদ: সাহসই হলো তার কাল। এ সাঈদার বন্ধুরা সবাই বলবে। কোন কিছু অন্যায়ভাবে ছাড় দেবার মানুষ সে নয়। দরকার হলে চেঁচিয়ে মানুষ জড়ো করবে, তবু অন্যায় সহ্য করবে না। এই হলো ‘আমাদের বন্ধু সাঈদা’। আমার নীনার বন্ধু ছিলো সাঈদা। ফোনে প্রথম আলাপেই তাঁর কন্ঠের দু’হাত মুক্ত করে জড়িয়ে ধরাতে সত্যি ভারি অবাক হয়েছিলাম। আরো কিছুদিন যেতে দেখি আরে! আমার বন্ধুরা, বোন সবাই ওঁর বন্ধু! ওকে নিয়ে বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতে দেখি চলে গেছে কোলকাতায় আর সেখানেও ভগ্নিসম লেখক প্রকাশক সুদেষ্ণা মজুমদারের সংগে কি গলা গলি! সাঈদা বোন হয়ে গেছে, কি আশ্চর্য!
এই যে ওঁর এ দু’বাহু বাড়ানো তা তাঁর ছাত্রছাত্রী, সহযোগী, সহকর্মী এবং কন্যাদের বন্ধু বান্ধব অবধি ব্যপ্ত হয়ে উপছে পড়তো।
ভীষণ কৌতুকময়ী, আনন্দময়ী ছিলো সে। ছিলো পশুপ্রেমী। ছিলো অভিমানীও।ছিলো কৃতি দু’কন্যা হিমেল, দোয়েল অন্ত প্রাণ।সে প্রাণ স্নেহে মমতায় ভরিয়ে দিয়েছে মেয়েদের বন্ধুদেরও।
শুনলে অবাক হবেন বাস্তবে আমাদের সাক্ষাৎ হয়নি কোনোদিন। সবই ফোনে ও টেক্টে আর ঐ যে ওঁর বন্ধু আমার বন্ধু যারা ওকে বাস্তবে পেয়েছে তা দিয়েই ছিলো আমাদের সেতু । বড় অভিমান করেছিলো আমি বাংলা একাডেমির বইমেলা গেলাম আর কিনা যাস্ট তার পেছনেই তার বাসা আর তাকে কিনা না দেখে লন্ডন ফিরে গেলাম! বাবলী তো তাকে দেখতে গেছে! আমি কেনো এমন করলাম? আমি তাকে বোঝাতেই পারলাম না যে, ভাইরে আমি ত্রিশ বছর বিলেতে থেকে ঢাকার ভূগোল গুলিয়ে ফেলেছি। এত নতুন পথ আর ইমারত! কিন্তু কে পারে তাকে গলাতে? এমন এক দূর্বার চরিত্র ছিলো সাঈদা যে আপনি তাকে এড়িয়ে যেতে পারবেনই না।
কিন্তু আমাদের সেই সদা চঞ্চল, হাস্যময়ী, বিবেকবান বন্ধু খুনির হাত এড়াতে পারলো না।তাঁর মৃত্যুর সংবাদ যখন দোয়েলের বন্ধু এবং আমার বোনঝি সামিয়া ক্রন্দন করতে করতে জানায়, তখন বিস্তারিত না জেনেও আমি তাই বলেছিলাম। বলেছিলাম আমাদের মধ্যে সেই সবচেয়ে ডাকাবুকো মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অভিনয়, আবৃত্তি আড্ডায় তাঁর জুড়ি ছিলো না। ছিলো তার ঢাকার মত জটিল শহরে একাকী বাস করার দূরন্ত সাহস। তাই এভাবেই জীবনটা দিতে হলো তাঁর। নমিত তোর সাহসের কাছে বন্ধু। আমরা তোকে ভুলবো না ।
( সদ্য প্রয়াত সাঈদা গাফফার ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। সম্প্রতি তাঁরই নির্মিয়মান দালানের রাজমিস্ত্রি তাঁকে হত্যা করেছে বলে পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছে)।