অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ করার চেয়ে মেধা হত্যা করে বেশি। এই পর্যন্ত আমি অন্তত দুইজন শিক্ষার্থীকে গবেষণা করিয়েছি যারা সিজিপিএ ৩ এর নিচে পেয়েছিলো বলে থিসিস পায়নি। আরও বেশ কয়েকজনকে থিসিস করিয়েছি যারা ৩ সামান্য বেশি সিজিপিএ পেয়ে আমার সঙ্গে থিসিস করেছে। তাদের সকলেই আমেরিকার খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পিএইচডি করছে। অনেকেই ওখানে কোর্স ওয়ার্কে খুবই ভালো করেছে। যেমন ওইখানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ইলেক্ট্রোডিনামিক্সের মতো সাবজেক্টেও পরীক্ষায় জিপিএ-৪ এ ৪ বা খুব কাছাকাছি পেয়েছে। অথচ ৩ পেতেই তাদের জাহান্দানি উঠে যায়। সমস্যা হলো আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আনন্দঘন পরিবেশ দিতে ব্যর্থ হয়েছি। ১০০ বর্ষ উদযাপনে কোটি কোটি টাকা খরচ করছি কিন্তু শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে তার কতো অংশ খরচ করছি?
গত কয়েকদিন আগে এমনই এক ছাত্র সকালবেলা ফোন করেছে শুধু ধন্যবাদ জানানোর জন্য যে তার সুপ্ত প্রতিভার মূল্যায়ন করে তাকে সুযোগ দিয়েছিলাম। সে বললো ওইখানে পিএইচডি করার জন্য যখন তার সকল সহপাঠীরা হন্যে হয়ে সুপারভাইজার খুঁজছিলো তখন তাকে কোনো সুপারভাইজার খুঁজতে হয়নি বরং সুপারভাইজারই তাকে খুঁজে বের করে তার সঙ্গে পিএইচডি করবে কিনা জিজ্ঞেস করেছে। আমি আগেও বলেছি আবারও বলছি আমরা মাস স্কেলে আমাদের মেধাবীদের মেধা হত্যা করছি। আমি আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য না নিয়োগ দিচ্ছি ভালো শিক্ষকদের না দিতে পারছি ভালো শিক্ষার জন্য সুন্দর একটা পরিবেশ। বরং আমরা এমন পরিবেশের সৃষ্টি করেছি যেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের টর্চার করে, জোর করে মিছিলে নিয়ে যায়, ছিন্নমূল মানুষদের মতো ছাদে বারান্দায় ঘুমায়। এই পরিবেশ থেকে মুক্তির জন্য আমরা কতোটা করছি?
কেবল একটি ঘোষণা দিন যে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ৩০০তে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে তাকে সরাসরি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। আর কারও দুটা পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা থাকলে তাকে সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। সঙ্গে আবাসিক হলগুলোতে একটু শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন, ভালো মানের খাবারের ব্যবস্থা করুন দেখবেন কতোটা পরিবর্তন হয়। এটা কি খুব বেশি কিছু চাওয়া? লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়