শিরোনাম
◈ জলদস্যুদের ধাওয়ায় ট্রলারডুবি: ২৪ ঘণ্টা সাগরে ভেসে ১৮ জেলের জীবনরক্ষা ◈ চীনের ঋণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি: ইইউ রাষ্ট্রদূত ◈ জাকসু নির্বাচনে কারসাজি, এক দলকে জিতিয়ে আনতে সব মনোযোগ ছিল: শিক্ষক নেটওয়ার্ক ◈ হ্যান্ডশেক না করায় ভারতীয়দের উপর চটলেন পা‌কিস্তা‌নের শোয়েব আখতার ◈ ১৩ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ◈ বড় সুখবর ছুটি নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ◈ ফরিদপুরে মহাসড়কে হঠাৎ বিক্ষোভ, যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ  ◈ নিলামে আরও ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক ◈ কোনো চাপে নয়, ভারতের অনুরোধে ইলিশ পাঠানো হয়েছে: উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ০৭:৩০ বিকাল
আপডেট : ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ০৭:৩২ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] বিদ্যালয় যেন শিশু পার্ক

মো: রেদওয়ানুল হক: [২] প্রথমে যে কারো দেখে মনে হবে এটি কোনো জমিদারের বাড়ি বা অভিজাত রিসোর্ট। বাংলাদেশে এমন দৃষ্টিনন্দন বিদ্যাপিঠ তেমন দেখা যায় না। যেখানে ব্যতিক্রম পরিবেশে শিক্ষা দেওয়া হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের চরভিটা গ্রামে অবস্থিত ব্যতিক্রম এ বিদ্যাপিঠ। নাম ‘চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের আধুনিক সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান করা হয়।

[৩] শহর ছেড়ে গঞ্জের পথে প্রতিবেশী দেশ ভারত সংলগ্ন বর্ডারের প্রায় দুই কিলোমিটার আগে দেখা মিলল কারুকার্য অঙ্কিত, দৃষ্টিনন্দন একটি বিদ্যাপিঠের। যেখানে সূর্যের আলোয় বিদ্যাপিঠটি আলোতে ঝলমল করছে। রাতের জন্য রয়েছে ল্যাম্পশেডও।

[৪] জানা যায়, ২০০১ সালে এরফান আলীর (প্রধান শিক্ষক) বাবা নুরুল ইসলাম নিজ জমিতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এবং ২০১৩ সালে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

[৫] সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অসাধারণ স্থাপনায় নির্মিত বিদ্যালয় ভবনের চারপাশ খোলামেলা। শ্রেণিকক্ষসহ বিদ্যালয়ের সবকিছুই রঙিন প্রচ্ছদে ঢাকা। বালক-বালিকাদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ওয়াশরুম, খেলাধুলার জন্য রয়েছে নানান ধরণের সরঞ্জাম। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে কারুকার্য খচিত, সুসজ্জিত নান্দনিক ভবন। দ্বিতল ভবনের ছাদে দেয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের নিজ অর্থায়নে কম্পিউটার ল্যাব। ভবনের উত্তরে হাঁস-মুরগির খামার ও বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব লাইব্রেরি এবং পশ্চিম পাশে রয়েছে সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং রুম, সততা কেন্টিন, মসজিদ, মাছ চাষের পুকুর।

[৬] শিক্ষার্থীদের বিনোদনের জন্য রয়েছে শিশুপার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা। খেলার মাঠের এক পাশে আছে দোলনা, গরুর গাড়ি। পুকুরে নৌকা। দেয়ালে আঁকা রয়েছে স্বাধীনতার মহান পুরুষ ও শহীদের প্রতিকৃতি, কবি সাহিত্যিকও বিভিন্ন প্রাণীর ছবি। মাটিতে ফুলের গাছ দিয়ে বানানো হয়েছে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ও বৃত্ত। সবুজ দুর্বা ঘাস আর সবুজ পাতার ফাঁকে তারা যেন শৈশবকে হাসি, ঠাট্টা আর আনন্দ উপভোগ করে কাটিয়ে দিচ্ছে।

[৭] চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজ জমিতে সবজি চাষ করা হয়। তাদের ফলানো সবজি ব্যবহার হয় মিড-ডে মিলে। তা ছাড়া, বিনামূল্যে শেখানো হয় কম্পিউটার, আবৃত্তি, নাটক। ভারতের সীমান্তঘেঁষা এ স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩৫০। চারজন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও তিনজন প্যারাশিক্ষক রয়েছেন।

[৮] শিক্ষার্থীরা জানান, বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার ফাঁকে তারা প্রতিদিন একদল খাবার দেয় হাঁস-মুরগীদের, অন্য দল সবজি বাগানের পরিচর্যা করে। এই কাজ করতে ওদের গর্বই হয়।

[৯] অভিভাবকরা জানান, এখন বাচ্চারা বাড়ির খাবারের থেকে মিড-ডে মিল খেতে বেশি আগ্রহী। ছেলে-মেয়েরা যে চাষাবাদ ও অনেক কিছু শিখছে, তাতে তারা খুশি।

[১০] চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরফান আলী জানান, অভাব-অনটনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে খুব একটা হাজির হতো না। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়ে ১৫০ শিক্ষার্থী ছিলো, কিন্তু প্রতিদিন হাজির থাকত ৬০ থেকে ৭০ জন। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করা এবং ঝরে পড়া রোধে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে পড়ালেখায় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখতে বিদ্যালয়ে ‘মিড ডে মিল চালুর ব্যবস্থা করি।

[১১] তিনি আরো জানান, প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ লাগে। এই উদ্যোগ চালু রাখতে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নিজের ৬ বিঘার একটি পুকুর ও ২ বিঘা জমি বিদ্যালয়কে ব্যবহার করতে দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি প্রতি মাসের লবণ ও তেলের জোগান দেন। সেই পুকুরেই চলছে মাছ চাষ, হাঁস-মুরগির খামার, জমিতে সবজি। ‘মিড ডে মিল’ চালু করায় স্কুলে শিক্ষার্থী বাড়ছে, সেই সুবাদে তিনি মনে করেন তার স্কুল এখন সেরা। গতবছর রংপুর বিভাগে সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন বিদ্যালয়টি।

[১২] হরিপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আজিজার রহমান বলেন, চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হরিপুর উপজেলার অন্যতম একটি বিদ্যালয়। এখানে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সৃজনশীল অনেক কিছু জিনিস আছে যা শিক্ষার্থীদের মনকে দোলা দেয়। বিদ্যালয়টি দিন দিন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, এলাকাবাসী সম্পৃক্ত হচ্ছে। আশাকরি বিদ্যালয়টি এক দিন জাতীয় পর্যায়ে উন্নত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়